শয়তানের কু-প্রভাব ও তা থেকে বাঁচার উপায়
বই: শয়তানের কু-প্রভাব ও তা থেকে বাঁচার উপায়
লেখক: হাফিজুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৮৮
কভার: পেপার ব্যাক
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: শয়তানের কু-প্রভাব ও তা থেকে বাঁচার উপায়
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলকিশেন্স
শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অসংখ্য রাস্তা বেছে নিয়েছে। প্রয়োজনে নব উদ্ভাবিত পন্থায় মানুষকে ধোঁকা দিতে সদা প্রস্ত্তত। আর মানুষেরও উচিত তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে কুরআন-সুন্নার যথাযথ অনুসরণ করার মাধ্যমে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। ‘মুখতাছার যাদুল মা‘আদ’ গ্রন্থকার বলেন, শয়তানের সাথে জিহাদ দুই প্রকার : (১) যেসব সন্দেহের কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শয়তানের সেসব ওয়াসওয়াসার বিরুদ্ধে জিহাদ করা। (২) যেসব পাপ কাজের জন্য আসক্তি নিক্ষেপ করে তা প্রতিহত করতে জিহাদ করা। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا، فَأَيُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا، نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ، وَأَيُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا، نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ، حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ، عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلَا تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ –
‘চাটাই বুননের মত ফিৎনা মানুষের অন্তরে এক এক করে (শয়তানের মাধ্যমে) পেশ করা হয়। যে অন্তর তা গ্রহণ করে নেয় সে অন্তরে একটি করে কালো দাগ দেওয়া হয়। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করে সে অন্তরে একটি করে শুভ্রোজ্জ্বল চিহ্ন পড়ে। এমনি করে অন্তরগুলো দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি উল্টানো কালো কলসির ন্যায় হয়ে যায়। প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা উপস্থাপন করে তা ব্যতীত ভাল-মন্দ কিছুই বুঝে না। আর অপরটি সাদা পাথরের ন্যায়; যতদিন আসমান ও যমীনের স্থায়ীত্ব ততদিন কোন ফিৎনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[15]
শয়তান থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নিম্নে শয়তান থেকে বাঁচার জন্য কুরআন-সুন্নার আলোকে কিছু আমলের উল্লেখ করা হ’ল :
১। সূরা বাক্বারাহ পাঠ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَا تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِي تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ الْبَقَرَة ‘তোমরা নিজেদের ঘর-বাড়িগুলো কবরে পরিণত কর না। যে বাড়িতে সূরা বাক্বারাহ পাঠ করা হয়, অবশ্যই সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে’।[16]
২। ছাদাক্বা করা : কায়েস ইবনে আবি গারাযা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ، إِنَّ الشَّيْطَانَ وَالإِثْمَ يَحْضُرَانِ البَيْعَ فَشُوبُوا بَيْعَكُمْ بِالصَّدَقَةِ، ‘হে ব্যবসায়ী সমাজ! ব্যবসা ক্ষেত্রে শয়তান ও পাপ এসে উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমরা ব্যবসায় (শয়তান ও পাপ মুক্ত করতে) ছাদাক্বা জড়িত কর’।[17]
৩। আয়াতুল কুরসী পাঠ : আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিতর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। আমি তিন রাত চোর আটক করলাম। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সে ২ রাতে ছুটে গেল। তৃতীয় রাতে সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও তোমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিব, যা দ্বারা তোমার উপকার হবে। আমি বললাম, সেগুলো কি? সে বলল, যখন তুমি ঘুমাতে যাবে তখন ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে। তাহ’লে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত করা হয়। আর সকাল পর্যন্ত তার নিকট শয়তান আসতে পারে না। ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা। তুমি কি জান সে কে? সে হ’ল চিরমিথ্যাবাদী কিন্তু তোমার সাথে সত্য বলেছে। সে হ’ল শয়তান’।[18]
৪। শয়তানের হাত থেকে বাঁচার যিকির : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ، وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ، ‘যে লোক একশ’বার এ দো‘আটি পড়বে, (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতা বান)। তাহ’লে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান ছওয়াব হবে। তার জন্য ১০০টি ছওয়াব লিখা হবে একশটি গুনাহ মাফ করা হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হ’তে নিরাপদ থাকবে’।[19]
শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যার দো‘আ : আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, مُرْنِي بِشَيْءٍ أَقُولُهُ إِذَا أَصْبَحْتُ وَإِذَا أَمْسَيْتُ؟ قَالَ: قُلْ: اللَّهُمَّ عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ، قَالَ: قُلْهُ إِذَا أَصْبَحْتَ، وَإِذَا أَمْسَيْتَ، وَإِذَا أَخَذْتَ مَضْجَعَك ‘আমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিন যেগুলো সকাল-সন্ধ্যায় আমি পড়তে পারব। তিনি বলেন, ‘বল, ‘আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরজি ‘আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাত, রাববা কুল্লা শাইয়িন ওয়া মালিকিহী ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি নাফসী ওয়া শাররিশ শাইত্বান ওয়া শিরকিহী। ‘তিনি বলেন, সকাল-সন্ধ্যা এবং যখন বিছানায় শুইতে যাবে তখন এটি পাঠ করবে’।[20] সকাল-সন্ধ্যা দো‘আটি পাঠ করলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।
Reviews
There are no reviews yet.