আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿১০০﴾ سورة التوبة
‘মুহাজির ও আনসারদের প্রথম অগ্রবর্তী দল এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এটাই মহা সাফল্য.
সূরা তওবা -১০০।
সাহাবায়ে কেরাম এর ইমান ও আমলের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
oو إذا قيل لهم امنوا كما امن الناس قالوا أنؤمن كما امن السفهاء ألا إنهم هم السفهاء و لكن لا يعلمون
অর্থাৎ, যখন তাদেরকে বলা হয়, মানুষরা (অর্থাৎ সাহাবীরা) যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন। তখন তারা বলে আমরাও কি বোকাদের মতো ঈমান আনব? মনে রেখো প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা; কিন্তু তারা তা বোঝে না।
[সূরা বাক্বারা-১৩]
ইরবায ইবনে সারিয়া(রাঃ)হতে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ(সাঃ)ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা
قال النبى صلى الله عليه وسلم: عليكم بسنتى وسنة خلفاء الراشدين المهدين
অর্থঃ আমার এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীন রা. এর সুন্নতকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে।
(আবু দাউদ হা.৪৬০৭,তিরমিযী-২৮৯১,ইবনে মাজা [ভূমিকা, ৪২], মুসনাদে আহমদ হা.১৭৬০৬, মুসনাদে বাযযার,ইবনে হিব্বান,মুসতাদরাক লিল-হাকিম,তারীখে দিমাশক লি-ইবনে আসাকির, আল-মু’জামুল কাবীর, হা. ৬২৩, আল-আওসাত, আল-কাবীর লিত্তাবরানী)
লক্ষ করেন এখানে রাসুল সাঃ ও সাহাবিদের সুন্নাহ আকড়ে ধরতে বলা হইছে মানে উনাদের সুন্নাহের উপর আমল করতে বলা হইছে হাদিস না। এই জন্য বলা হইছে
বস্তুতঃ হাদীস ও সুন্নাহ এক জিনিস নয়, বরং এ দুইয়ের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে । উম্মতের জন্য দ্বীনের উপর চলার অনুসরনীয় পথ কে সুন্নাহ বলে ।
আর ” প্রত্যেক সুন্নাহই হাদীস কিন্তু সকল হাদীসই সুন্নাহ নয়।” অর্থাৎ দ্বীনের উপর চলার জন্য উম্মত সকল হাদীসকেই অনুসরন বা আমল করতে পারবে না যদিও সেই হাদীসটি “সহীহ্ ” হয়। কেননা অনেক সহীহ্ হাদীস আছে যা অন্য সহীহ হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে বা তা পূর্বের বিধান ছিল কিন্তু পরবর্তীতে রসূলুল্লাহ (সঃ) এর হুকুম দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে ।
নিম্নে কিছু হাদীস উদাহারন স্বরুপ তুলে ধরলামঃ
১. সহীহ্ বুখারীর কিতাবুল জানায়েযের ১৩০৭ থেকে ১৩১৩ নং হাদীস সমূহ । এসব হাদীসে জানাযা বহন করে নিয়ে যেতে দেখলে সকলকে দাঁড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে । অথচ এই বিধান এই বিধান অন্যান্য সহীহ্ হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে ।
( উমদাতুল কারী ৬/১৪৬)
২. ইসলামের প্রথম যুগে নামাযরত অবস্থায় কথা বলা, সালাম দেওয়া , সালামের উত্তর দেওয়া সবই বৈধ ছিল । কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায়।
( সহীহ্ বুখারী হা. নং- ১১৯৯, ১২০০)
৩. ইসলামের প্রথম যুগে বিধান ছিল যে, আগুনে রান্নাকৃত খাদ্য গ্রহন করলে উযু ভেঙ্গে যাবে । কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায় ।
( সহীহ্ বুখারী, হা.নং- ২০৮)
৪. নবীজী ( সঃ) হিজরতের পর মদীনায় ১৬/১৭ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করেছেন । কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায়।
( সহীহ্ বুখারী হা. নং- ৭২৫২)
এগুলো সবই সহীহ্ হাদীস কিন্তু সুন্নাহ নয়। অর্থাৎ এই হাদীসগুলো উম্মতের জন্য অনুসরনীয় নয়।
৫. এমন অনেক হাদিস আছে যার বিধান নবীজী (সঃ) এর সঙ্গে নির্দিষ্ট । উম্মতের জন্য তার উপর আমল করা বৈধ নয়। যেমনঃ বহু হাদিসে রসূলুল্লাহ (সঃ) এর ১১টি বিবাহের কথা এবং মহর দেওয়া ছাড়া বিবাহ করার কথা এসেছে। তো এগুলো হাদিস বটে কিন্তু উম্মতের জন্য অনুসরনীয় নয় ।
( সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ ১১/ ১৪৩-২১৭)
৬. হাদীসে এমন অনেক আমলের কথা বর্ণিত আছে যা রসূলুল্লাহ (সঃ) কখনো কোন বিশেষ প্রয়োজনে করেছেন । যেমনঃহয়ত কোমরে ব্যথা থাকার কারনে কিংবা এস্তেন্জা করার স্থানে বসার দ্বারা শরীরে বা কাপড়ে নাপাকি লাগার অশংঙ্কায় তিনি সারা জীবনে মাত্র ২বার দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন। কিন্তু হাদিসের বর্ণনায় এসব কারনের কথা উল্লেখ নেই । শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে পেশাব করার কথা আলোচিত হয়েছে। তো এই হাদিসের উপর আমল করে কি দাঁড়িয়ে পেশাব করাকে সুন্নাহ বলা যাবে ??? অনুরুপভাবে রসূলুল্লাহ (সঃ) ইহরাম অবস্থায় এবং রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
( সহীহ্ বুখারী, হা.নং- ১৯৩৮)
তাই বলে কি ইহরাম ও রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগানোকে সুন্নাহ বলা যাবে ???
৭. কাজটি বৈধ একথা বুঝানোর জন্যও রসূলুল্লাহ (সঃ) অনেক কাজ করেছেন।যেমনঃতিনি একবার তার নাতনী উমামা বিনতে যয়নবকে কোলে নিয়ে নামায পড়িয়েছেন।( সহীহ্ বুখারী,হা. নং- ৫১৬)
আবার তিনি রোযা অবস্থায় তার এক স্ত্রীকে চুম্বন করেছেন ।
( সহীহ্ বুখারী ,হা.নং- ১৯২৮) ।
এই উভয় ঘটনাই হাদিসে এসেছে । এর দ্বারা রসূলুল্লাহ (সঃ) বুঝাতে চেয়েছেন যে, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শিশ্ত কোলে নিয়ে নামায পড়া বা পড়ানো যেতে পারে এবং রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা বৈধ, এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না । তাই বলে কি সব সময় শিশ্ত কোলে নিয়ে নামায পড়ানোকে কিংবা রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা সুন্নাহ বলা যাবে ?
উপর্যুক্ত আলোচনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সহীহ হাদিসের দাবিদার ” আহলে হাদীস ” নামটিই সঠিক নয় । কারন রসূলুল্লাহ (সঃ) কোন বর্ননায়ই উম্মতকে হাদীস মানতে বলেন নাই , বলেছেন ” সুন্নাহ ” মানতে ।
তারপরও যারা নিজেদেরকে ” আহলে হাদীস “বা কেউ শুধু সহীহ হাদিস মানে বলে দ্বাবী করে তাদের উচিৎ ১১টি বিবাহ করা, মহর ছাড়া বিবাহ করা, ইহরাম ও রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো, রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা, দাঁড়িয়ে পেশাব করা ইত্যাদিকে সুন্নাত মনে করে আমল করা ।
অনুরুপভাবে জীবনে মাত্র ৩দিন মসজিদে এসে তারাবীহ এর নামায পড়া , নামাযরত অবস্থায় কথা বলা , সালাম দেওয়া , সালামের উত্তর দেওয়া । কারন এগুলোও তো হাদিসে এসেছে । কিন্তু তারা এসব করবে না । তাহলে হাদীস মানার দাবীদার হয়ে এসব হাদিসের উপর আমল না করে কিভাবে তারা আহলে হাদীস হল ???
আসল কথা হলো, তারা নিজেদেরকে “আহলে হাদীস ” বললেও বাস্তবে মুখবাজি( বাগাড়ম্বরি ) ছাড়া কিছুই না ।
অপর দিকে রসূলুল্লাহ (সঃ) যেহেতু উম্মতকে সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে বলেছেন তাই সকল মাযহাব অনুসারীগন হাদিসের শুধুমাত্র সুন্নাহ অংশের অনুসরন করি এবং নিজেদেরকে ” আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ ” বলে পরিচয় দিই । অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সঃ) এর সুন্নাত মানি এবং সাহাবায়ে কেরামের জামা’আতকে অনুসরন করি ।
মূলকথা “আহলে হাদীস ” নামটিই সঠিক নয় , এটি একটি বিভ্রান্ত নাম । হাদীসে রসূলুল্লাহ ( সঃ) এ নামে নাজাতপ্রাপ্ত সঠিক দলটিরও নামকরন করেন নি । আল্লাহ তা’আলা এই বিভ্রান্ত সম্প্রদায় থেকে আমাদের সবাইকেই হিফাজাত করুন এবং তাদের হেদায়েত দান করুন।
আবার আরেকটি কথা না বললেই নয় গায়ের মুকাল্লিদরা প্রচার করে প্রত্যেক ইমাম বলছে হাদিস সহীহ হলে সেটিই আমার মাযহাব।সুতরাং ইমামরাইতো সহীহ হাদিস মানতে বলছে।
লক্ষ করুন
প্রত্যেক ইমাম যে বলেছেন, “হাদীস সহীহ হলে সেটিই আমার মাযহাব” এর অর্থ হল, হাদীসটি আমল যোগ্য হতে হবে। কেননা হাদীস সহীহ হলেই সেটি আমল যোগ্য হয় না। এ বিষয়ে সমস্ত মুহাদ্দিস, সমস্ত মুফাসসির, সমস্ত ফকীহ একমত যে, সকল সহীহ হাদীস আমল যোগ্য নয়। এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃ) লিখেছেন,أما الأئمة و فقهاء أهل الحديث فإنهم يتبعون الحديث الصحيح حيث إذا كان معمولا به عند الصحابة و من بعدهم أو عند طائفة منهم فأما ما اتفق علي تركه فلا يجوز العمل به لأنهم ما تركوه علي علم أنه لا يعمل به “ইমামগণ এবং হাদীস বিশারদ ফকীহগণ কোন একটি হাদীস সহীহ হলে, তার উপর তখনই আমল করেন, যখন কোন সাহাবী, তাবেয়ী, অথবা তাদের নির্দিষ্ট কোন একটি দল থেকে হাদীসটির উপর আমলের প্রমাণ পাওয়া যায়। আর সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) যে হাদীসের উপর আমল না করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন, তার উপর আমল করা জায়েয নেই; কেননা তার উপর যে আমল করা যাবে না, সেটা জেনেই তারা হাদীসটি পরিত্যাগ করেছেন।” এ বিষয়ে চূড়ান্ত কথা হল, ইমামগণের এ সমস্ত বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করে মানুষের মাঝে মাযহাবের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো নিতান্তই দুঃখজনক। প্রত্যেক ইমাম যে বলেছেন, ‘হাদীস সহীহ হলে সেটি আমার মাযহাব’ তাদের এ বক্তব্যের দ্বারা উদ্দেশ্য হল, إذا صلح الحديث للعمل به فهو مذهبي“অর্থাৎ “হাদীসটি যখন আমল যোগ্য হবে, তখন সেটি আমার মাযহাব হবে” কিন্তু বর্তমানে আহলে হাদীস বা সালাফীরা এ সমস্ত বক্তব্য উল্লেখ করে, মানুষের মাঝে মাযহাবের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। মাযহাবের বক্তব্যের বিরোধী কোন হাদীস পেলে, সেসম্পর্কে কোন ইলম হাসিল না করেই, মাযহাব এবং মাযহাবের ইমামদের সম্পর্কে বিষোদগার শুরু করে; অথচ বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যাবে, উক্ত হাদীস পরিত্যাগের যথাযোগ্য কারণ রয়েছে। ১. আল্লামা ইবনে হামদান (রহঃ) লিখেছেন,و ليس لكل فقيه أن يعمل بما رآه حجة من الحديث حتي ينظر هل له معارض أو ناسخ أم لا أو يسأل من يعرف ذلك و يعرف به، و قد ترك الشافعي العمل بالحديث عمدا لأنه عنده منسوخ لما بينه “প্রত্যেক ফকীহের জন্য এই অনুমতি নেয় যে, বাহ্যিক হাদীসকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে তার উপর আমল করবে, যতক্ষণ না সে এ বিষয়ে সুনিশ্চিত জ্ঞান অর্জন করবে যে, এ হাদীসটির সাংঘর্ষিক কোন দলিল আছে কি না, অথবা হাদিসটির বিধান রহিত কি না। এ ব্যাপারে সে যদি জ্ঞান না রাখে, তবে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) অনেক হাদীসের উপর ইচ্ছা করেই আমল করেননি, কেননা তাঁর নিকট সে সমস্ত হাদীসের বিধান রহিত ছিল (মানসুখ)।” قال النووي في ” شرح المهذب ” ( ১/১০৪ ) : هذا الذي قاله الشافعي ليس معناه أن كل أحد رأى حديثا صحيحا قال : هذا مذهب الشافعي وعمل بظاهره ، وإنما هذا فيمن له رتبة الإجتهاد في المذهب ، وشرطه أن يغلب على ظنه أن الشافعي رحمه الله لم يقف على هذا الحديث أو لم يعلم صحته ، وهذا إنما يكون بعد مطالعة كتب الشافعي كلها ونحوه من كتب أصحابه الآخذين عنه ، وماأشبهها ، وهذا شرط صعب قل من يتصف به ، وإنما اشترطوا ماذكرنا لأن الشافعي رحمه الله ترك العمل بظاهر أحاديث كثيرة رآها وعلمها لكن قام الدليل عنده على طعن فيها أو نسخها أو تخصيصها أو تأويلها أو نحو ذلك ، قال الشيخ أبو عمرو – هو الإمام ابن الصلاح – : ليس العمل بظاهر ماقاله الشافعي بالهين ، فليس كل فقيه يسوغ له أن يستقل بالعمل بما يراه حجة من الحديث . أهـ ইমাম নববী (রহঃ) “শরহুল মুহাজ্জাব”এ লিখেছেন, ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) যে বলেছেন “হাদীস সহীহ হলে সেটিই আমার মাযহাব” এর অর্থ এই নয় যে, যে কেউ সহীহ হাদীস দেখলেই বলবে যে, এটি ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মাযহাব এবং বাহ্যিক হাদীসের উপর আমল করবে। বরং এটিই তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, যে মুজতাহিদ ফিল মাযহাব। এর জন্য শর্ত হল, তার প্রবল ধারণা হতে হবে যে, শাফেয়ী (রহঃ) এই হাদীস সম্পর্কে অবগত হননি অথবা ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) হাদীসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে অবগত ছিলেন না। আর এটা তখনই সম্ভব হবে, যখন ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর সকল কিতাব অধ্যয়ন করা হবে এবং তাঁর নিকট থেকে যারা ইলম শিক্ষা করেছে, তাদের সব কিতাব মুতায়ালা করতে হবে। এটি একটি কঠিন শর্ত, যা অল্প সংখ্যক লোকই অর্জন করতে পারে। ফকীহগণ পূর্বোক্ত শর্তগুলো একারণে আরোপ করেছেন যে, কোন একটি হাদীস ত্র“টিযুক্ত, রহিত, সুনির্দিষ্ট অথবা হাদীসটির ব্যাখ্যা সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ার কারনে ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) অনেক সহীহ হাদীসের উপর আমল করেননি অথচ তিনি এ সমস্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং অন্যদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এবং এর জন্য ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর নিকট সুনির্দিষ্ট দলিল ছিল। শায়খ আবু আমর ইবনুস সালাহ বলেন, ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) যা বলেছেন, তার বাহ্যিকের উপর আমল করাটা সহজ নয়। কেননা প্রত্যেক ফকীহ হাদীসকে হুজ্জত হিসেবে গ্রহণ করে তার উপর আমল করতে পারবে না” মূলতঃ রাসূলের হাদীস বর্ণনার দিক থেকে সহীহ হলেই সেটি আমল যোগ্য নয়। সমস্ত আলেম এ ব্যাপারে একমত যে, হাদীস সহীহ হলেই সেটি আমলযোগ্য নয়। বরং এক্ষেত্রে দেখতে হবে, এ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক অন্য কোন হাদীস বা কুরআনের কোন নির্দেশনা আছে কি না। হাদীসটির বিধান রহিত কি না, ইত্যাদি। একজন সাধারণ মানুষ তো দূরে থাক, বড় বড় আলেমদের পক্ষেও এ বিষয়গুলি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করা কঠিন। যারা ইজতেহাদের যোগ্যতা রাখেন, তারাই কেবল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। শরীয়তের বিষয়ে যারা কোন জ্ঞান রাখে না, অথবা জ্ঞান থাকলেও যেটা ইজতেহাদের জন্য যথেষ্ঠ নয়, তারা সহীহ হাদীস পেলেই সেটা নিয়ে খুব মাতামাতি করে। অনেকে হয়ত এতটুকু জানে না, সহীহ হাদীস কাকে বলে, কখন সহীহ হাদীসের উপর আমল করা যায় এবং কখন সহীহ হাদীসের উপর আমল করা যায় না।
এজন্যই হয়ত ইমাম মালেক (রহঃ) এবং ইমাম লায়স বিন সা‘য়াদ (রহঃ) এর ছাত্র, আবু মুহাম্মাদ আব্দল্লাহ বিন ওহাব (রহঃ) বলেছেন,الحديث مضلة إلا للعلماء “আলেমগণ ব্যতীত অন্যদের জন্য হাদীস হল ভ্রান্তির কারণ” ইমাম আবু যায়েদ কাইরাওয়ানী (রহঃ) লিখেছেন,قال الإمام إبن أبي زيد القيرواني رحمه الله: ( قال إبن عيينة: الحديث مضلة إلا للفقهاء) يريد: أن غيرهم قد يحمل شيئا علي ظاهره و له تأويل من حديث غيره، أو دليل يخفي عليه، أو متروك أوجب تركه غير شيء، مما لا يقوم به إلا من استبحر و تفقه) “আল্লামা ইবনে উয়াইনা (রহঃ) বলেছেন, ফকীহগণ ব্যতীত অন্যদের জন্য হাদীস হল, ভ্রান্তির কারণ। এর দ্বারা তিনি উদ্দেশ্য নিয়েছেন, ফকীহগণ ব্যতীত অন্যরা হয়ত হাদীসকে তার বাহ্যিক অর্থের উপর প্রয়োগ করবে, অথচ অন্য কোন হাদীস দ্বারা এর ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা করা সম্ভব। অথবা অন্যদের নিকট হাদীসের দলিল অস্পষ্ট থাকবে, অথবা হাদীসটি মূলতঃ আমলযোগ্য নয়, যার সুস্পষ্ট কোন কারণ রয়েছে, যা এ বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী এবং ফকীহগণ ব্যতীত অন্যরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না।
আল্লাহ আমাদের সুন্নাহের প্রতি আমল করার তৌফিক দেক আমীন
Reviews
There are no reviews yet.