ঈমান নবায়ন
বই: ঈমান নবায়ন
লেখক: ড. সাইয়েদ শফীকুর রহমান
ভাষান্তর: মুহাম্মাদ মুকাম্মাল হক
প্রকাশনী: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয়: ঈমান ও আক্বীদা
পৃষ্ঠা: ৭৯
ধরণ: পেপারব্যাক
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: ঈমান নবায়ন
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলকিশেন্স
ঈমান নবায়ন
দীন-ইসলাম পূর্ণতা লাভ করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। যার ঘোষণা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুরা আল-মায়িদায় দিয়েছেন। সুতরাং এখন আর এই দীনের মাঝে কোনো ধরনের হ্রাস-বৃদ্ধি, সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ নেই। দীন-ইসলামের মাঝে নতুন করে কোনো কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের দাবি করা নিজের ঈমানকে নাজুক পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করানোর নামান্তর। কারণ, এ কথার অর্থ হলো, নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ দীন তথা ইসলামকে মানুষের কাছে পূর্ণাঙ্গরূপে পৌঁছাননি; বরং তিনি রিসালাতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে খেয়ানত করেছেন। নাউযুবিল্লাহ। এটা কোনো মুসলিম বিশ্বাস করতে পারে না। অতএব দীন পূর্ণাঙ্গতা লাভ করেছে, এতে কম-বেশির কোনো সুযোগ নেই এবং কম-বেশির দাওয়াতের কোন সুযোগ নেই। যেটা রয়েছে সেটা হল দীনের উন্নতি লাভ। আর তা হবে ঈমানের বৃদ্ধি, দৃঢ়তা ও সজীবতার মাধ্যমে। অতএব এ লক্ষ্যে দীনের দাওয়াত চলতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত, ইনশাআল্লাহ।
জামানার অনিবার্য দাবি হলো, মুসলিমরা দীনের প্রতি তাদের ঈমান ও বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করবে, আরও পাকাপোক্ত করবে। দীনকে তারা গ্রহণ করবে স্বীয় জীবনদর্শন হিসেবে, জীবনের সকল কিছু উৎসর্গ করবে এই দীনের জন্য। পৃথিবীর কোনো কিছুর বিনিময়েই বর্জন করা যাবে না এই দীন, এই আদর্শ, এই দর্শন। এই উম্মতের প্রতিটি সদস্যকে, প্রতিটি সম্প্রদায়কে এই দীনের প্রতি নতুনভাবে ঈমান আনতে হবে। করতে হবে ঈমানকে নবায়ন। নতুনভাবে উপলব্ধি করতে হবে এই দীনের দাবি ও পয়গামকে।
আজ মুসলিমদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো- ঈমানকে নবায়ন করা। যে ঈমান মানুষের জীবন ও কর্মকে নিয়ন্ত্রণ করবে, নিজের অনুগত করে নেবে, সেই ঈমান আজ কোথাও নেই। এর বাইরে সবই আছে। নবি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তের শুরু যুগে, জাহিলিয়াতের সময়েও পৃথিবীবাসীর সামনে দীনের কিছু বিষয় বিদ্যমান ছিল। কোথাও সালাত, তো কোথাও হজ ইত্যাদি ইবাদতের অস্তিত্ব ছিল। পুরাতন ধর্মচিন্তা, আসমানি দীন-দর্শনের বিভিন্ন রূপ তখনও নজরে পড়ত। কিন্তু যে জিনিসটা কোথাও পাওয়া যেত না সেটা হলো দীনের শক্তি।
তৎকালীন মানুষেরা বিশ্বাস করত সাপের বিষ জীবন নাশ করে ফেলে, বিশ্বাস করতো বাতাস ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না, খাবার ছাড়া পেট ভরে না। এ জাতীয় অভিজ্ঞতাজাত আরও অনেক কিছুর প্রতি তাদের আন্তরিক বিশ্বাস ছিল। কিন্তু জাহান্নামের আগুন ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ- সে কথার প্রতি বিশ্বাস ছিল না জান্নাতের বর্ণনাতীত অনুপম শান্তি-সুখের প্রতিও তাদের ঈমান ছিল না। তারা বিশ্বাস করত না, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে এই পৃথিবীতেও সফল হওয়া যায় না। অথচ তাদের চাকর-চাকরানীরা যদি তাদের অবাধ্য হতো, তাহলে তাদের ঘরে ঠাঁই হতো না। একজন চিকিৎসকের কথার প্রতি তাদের যতটা আস্থা ছিল, একজন নবির কথার প্রতি ততটুকু আস্থা ছিল না। তাদের জীবনে কোন প্রাণ ছিল না। তারা জড়ো পদার্থের মতো হয়ে পড়েছিল। তারা ভাবত কেবল এই পার্থিব জীবন নিয়ে।
কিন্তু অতি দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমাদের বর্তমান অবস্থা ও এর চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু নয়। জীবন ও জীবনের মমতা আমাদের গ্রাস করে আছে তাই জীবনের প্রতি কোনোরূপ আশঙ্কার কথা শুনলেই আমরা চকিত হই। আমাদের শক্তিগুলো সতেজ হয়ে ওঠে। জীবনকে বাঁচাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু কেউ যদি আমাদের সেই জীবনের আশঙ্কার কথা বলে, যে জীবনের কোনো শেষ নেই পরকালের জীবন; দেখা যাবে এই সংবাদ শুনে আমরা চকিত হব না, অস্থির হব না, আমাদের ভাবান্তর হবে না।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাসুল নির্বাচিত হলেন, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ ছিল তিনি যেন গোপনে তাওহিদের দাওয়াতের কাজ করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে প্রকাশ্যে মক্কার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ সকলের সামনে লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ তুলে ধরার জন্য আদেশ দিলেন। আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা আদেশ পালনার্থে তিনি মক্কার প্রথা অনুযায়ী পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করলেন এবং স্বকণ্ঠে ঘোষণা করলেন ‘আনান নাযিরুল উরইয়ান’ আমি সুস্পষ্ট ভীতি প্রদর্শক। রাসুলের এ আহ্বান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তারা পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হলো। তারা এই ডাকে সাড়া দিতে একবিন্দু দেরি করেনি। কারণ তারা এই আহ্বানকে নিশ্চিত কোনো বিপদ-ঘণ্টা মনে করেছিল। তারা ভেবেছিল কোনো শত্রু হয়তো হামলা করবে আমাদের ওপর, তিনি আমাদের সেই সংবাদই হয়তো দেবেন। কিন্তু যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তাওহিদের প্রতি আহ্বান করলেন, তখন তারা সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করল। কারণ তাদের কাছে দীনের কোনো মূল্য ছিল না। মূল্য ছিল কেবলই দুনিয়ার। তারা দুনিয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত হতো। আখেরাতের কোনো ভয় ছিল না তাদের।
আমাদের অবস্থাটাও এমন হয়ে গেছে। আমাদের কাছে এখন দীনের মূল্য নেই। এখন আমরা সবকিছু মূল্যায়ন করি দুনিয়ার মাপকাঠিতে। আমি কোথা থেকে কীভাবে দুনিয়া কামাই করতে পারব- সেই চিন্তায় বিভোর থাকি। যেখান থেকে আমার দুনিয়া অর্জন হবে, আমি সেখানেই সময় ব্যয় করব। আমরা কেবল ইহকালের জন্য চিন্তা করছি এবং ইহকালের জন্যই কেবল শঙ্কিত। আখিরাতের জন্য আমরা একটুও শঙ্কিত নই। এটা আমাদের ঈমানের দুর্বলতার লক্ষণ। তাই সময়ের প্রয়োজন আমাদের ঈমানকে নবায়ন করা।
আসুন, আমরা আমাদের ঈমানকে নবায়ন করি।
Reviews
There are no reviews yet.