সুখের সন্ধান
সবাই সুখে থাকতে চায়। কিন্তু বস্তুবাদী সমাজ ব্যবস্থায় সুখ যেন সোনার হরিণ। তাই জীবনের দুঃখ, দুশ্চিন্তা, হতাশাকে পাশ কাটিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে সুখে থাকার মূল্যবান দিকনির্দেশনা পাবেন এই সুখের সন্ধান বইটিতে। এছাড়া উপহার হিসেবেও সুখের সন্ধান বইটি দারুন হবে ইংশা..আল্লাহ্।
সুখের সন্ধান
সুখের সন্ধান
প্রণয়নে
আবদুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ইসলামী গবেষক, লেখক, মুহাষ্কি আলিম ও দাঈ
প্রকাশনায়
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ঢাকা-বাংলাদেশ
সুখের সন্ধান
সুখের সন্ধান
প্রত্যেক সুখ-সন্ধানী বন্ধুর হাতে
যে চায় সুখের জীবন ও শান্তির সংসার।
প্রত্যেক সেই দুঃখী বন্ধুর হাতে –
যার হৃদয়-মন ও জীবন জুড়ে আছে দুঃখের কালো অন্ধকার;
যার জীবনে হাসি আনয়নকারী হাওয়া ঝড়ে পরিণত হয়েছে।
প্রত্যেক সেই প্রবঞ্চিত বন্ধুর হাতে
যে ঝুটা, ভুয়ো ও কৃত্রিম সুখের পশ্চাতে ছুটে চলেছে।
সুখের সন্ধান
সূচীপত্র
- প্রারম্ভিক কথা
- সুখী কে?
- মিথ্যা সুখ
- ধন-সুখ
- খ্যাতি-সুখ
- ডিগ্রি-সুখ
- পদ-সুখ
- নারী-স্বাধীনতায় মহিলার সুখ
- পাশ্চাত্য-সভ্যতার সুখ
- দুঃখ কি?
- দুঃখ কেন আসে?
- ধৈর্য ধর
- আল্লাহর লিখিত তকদীরে ধৈর্য
- হিংসুকের হিংসায় ধৈর্য
- কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে
- টক লেবু দিয়ে সুস্বাদু শরবত বানাও
- গতস্য শোচনা নাস্তি
- যে কাল যায় সে কালই ভাল
- দুনিয়ার চিন্তা মাথায় নিও না
- তুচ্ছ নিয়ে তুষ্ট হয়ো না
সুখের সন্ধান
- অপরের মসীবত দেখে সান্তনা নাও
- নিজের ভাগ নিয়ে তুষ্ট রহ
- মনের মত মানুষ পাবে না
- মন পরিষ্কার রাখ
- আত্মসমালোচনা কর
- সদা হাস্যমুখ রও
- বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ থেকো না
- অবসর দূর কর
- রুযী ও বর্কতের চাবিকাঠি হাতে কর
- সামাজিক কাজে মন দাও
- পরের কারণে স্বার্থ বলি দাও
- মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার কর
- অপ্রয়োজনীয় সংসর্গ বর্জন কর
- কৃতজ্ঞ হও
- বিনয়ী হও
- আত্মমর্যাদা বিস্মৃত হয়ো না
- লজ্জাশীল হও
- ভেদকে ভেদই রাখ
- মিতভাষী হও
- মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন কর
- মানসিক পরাজয় দূর কর
- পূর্ণ ঈমানী জীবন গড়
সুখের সন্ধান
- আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য কর
- আল্লাহকে স্মরণে রাখ
- আল্লাহর কাছে দুআ কর
- নামাযে সান্ত্বনা নাও
- প্রত্যেক কাজে সওয়াবের আশা রাখ
- তাক্বওয়া অবলম্বন কর
- আল্লাহর উপর ভরসা রাখ
- তওবাহ ও ইস্তিগফার সুখের একটি কারণ
- শরয়ী ইল্ম অনুসন্ধান কর
- সুখের পরিবেশ তৈরী কর
- স্ত্রী-সুখ
- সন্তান-সুখ
- আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখ
- পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর
- নেক প্রতিবেশী
- প্রশস্ত বাড়ি
- আসল সুখ পরকালে
- সুখের প্রতিবন্ধকতা
- পাপাচরণ
- রিপুর তাড়না
- কাম বা সম্ভোগ-লালসা
- রাগ ও ক্রোধ
সুখের সন্ধান
- লোভ-লিপ্সা-লালসা
- মোহ-মায়া-প্রেম-প্রীতি
- মদ-গর্ব-অহংকার
- মাৎসর্য-পরশ্রীকাতরতা-হিংসা-ঈর্ষা
- কামনা -আশা-দুরাশা
- কার্পণ্য বা বখীলী
- সন্দেহ-কুধারণা
- মান-অভিমান
- গুজবে থেকো না
- তর্ক করো না
- আবেগাপ্লুত হয়ো না
- ন্যায়পরায়ণ হও
- পরমতসহিষ্ণুতা
সুখের সন্ধান
প্রারম্ভিক কথা
الْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَالصَلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى أَشْرَفِ الْمُرْسَلِيْنَ، نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ، أَمَّا بَعْدُ:
‘সুখ স্বপনে, শান্তি মরণে’ -এ কথা সত্য না হলেও তা এ বাস্তবতারই দলীল যে, পৃথিবীর বুকে সুখ-শান্তি খুব কমসংখ্যক মানুষই লাভ করে থাকে।
সুখের জীবন দুটি: ইহলৌকিক ও পারলৌকিক। পরিপূর্ণরূপে ইহলৌকিক অনাবিল সুখ পাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। মুমিন এ জগতে সুখ না পেলেও পরকালের সুখ পাওয়ার আশা করে। পরকালের সুখকে প্রাধান্য দেয়। পরকালের সুখ অনন্ত সুখ। ক্ষণস্থায়ী সুখের বিনিময়ে চিরস্থায়ী সুখের বাসা নষ্ট করে না।
এই নৈতিক বাস্তবকে মেনে নিয়েই মুসলিমকে সংসার করতে হয়। জীবনের উত্থান-পতনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝেই সুখের সন্ধান করতে হয়।
এই পুস্তকটি আমি আমার থেকে বয়োকনিষ্ঠ দুঃখিত, শোকাহত, মর্মাহত, শোষিত, বঞ্চিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত, পদদলিত, অবহেলিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত, অপদস্থ, ভাই-বন্ধুদের হাতে তুলে দিয়ে তাদেরকে প্রকৃত সুখের সন্ধান এবং দুঃখের মাঝে থেকেও সুখের আস্বাদ গ্রহণ কিভাবে সম্ভব তার সন্ধান দিয়েছি। সুখ অর্জনের জন্য করণীয় কর্তব্য এবং বর্জনীয় চরিত্র স্বমন্ধেও কুরআন-হাদীস এবং সলফে সালেহীন তথা বিশ্বের বিভিন্ন জ্ঞানী-গুণীজনের বাণী থেকে বিবিধ আলোচনা করেছি।
বিভিন্ন আরবী বই-পুস্তক পড়েছি তার জন্য। সুখের নিদ্রা ও আরাম বর্জন করেছি সেই মানসে। সুখের সন্ধান বইটিকে সমৃদ্ধ করার জন্য কিছু মূল্যবান নীতিকথা চয়ন করেছি জনাব মোহাম্মাদ হাদীউয্যামান কর্তৃক সংকলিত ‘সাগর সেচা মাণিক’ এবং আমার সঞ্চিতা ‘মণির খনি’ থেকে।
‘জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে
পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনে।’
এর দ্বারা যদি তাদের উপকার হয়, যাদের জন্য লিখা, তাহলেই আমার শ্রম সার্থক হবে। আর তারই অসীলায় আল্লাহর কাছে আশা রাখব নেক প্রতিদানের এবং ইহ-পরকালের সুখী জীবনের।
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّفِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّاﺚ اِنَّکَ اَنْتَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ
বিনীত
আবূ সালমান আব্দুল হামীদ মাদানী
আল-মাজমাআহ
সুখের সন্ধান
সুখী কে?
সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, স্বস্তি ও শান্তি প্রত্যেক মানুষের বরং প্রত্যেক প্রাণীর অভীষ্ট ও ঈপ্সিত জিনিস। ‘যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ’ যতদিন বাঁচবে সুখে বাঁচ – প্রতিটি প্রাণীর ধর্ম। সকল মানুষ চায় তার জীবন সুখের হোক। এর জন্য সে মেহনত করে। কষ্ট স্বীকার করে সুখের সামগ্রী সংগ্রহ করার জন্য। সন্ধান করে শান্তির আধার। রচনা করে সুখের নীড়। কিন্তু সকল মানুষ কি সুখ পায়? অবশ্যই না।
মুমিন ঈমানের মাঝে সুখ চায়। কাফের কুফরীর মাঝে সুখের ¯্বাদ গ্রহণ করে। মাতাল মদের মাঝে শান্তি কামনা করে। চোর চুরির মাঝে সুখের আশা করে। ব্যভিচারী ব্যভিচারের মাঝে সুখ লুটতে চায়। অর্থোপার্জনকারী অর্থের মাঝে সুখের সন্ধান আছে মনে করে। নেতা তার নেতৃত্বে সুখের খোঁজ করে। ভ্রমণকারী ভ্রমণের মাঝে সুখের আমেজ আ¯্বাদ করে। কিন্তু সত্যিই কি তারা সুখের অধিকারী হতে পারে?
অধিকাংশ মানুষই সুখী নয়। বেশীর ভাগ মানুষের সুখের স্বপ্ন বাস্তব ও সফল নয়। শান্তির আশা পূর্ণ নয়।
আসলে সুখ তো কোন একটি জিনিসের নাম নয়। সুখের উৎস, কারণ, অবস্থা, কাল ও পাত্র এক নয়। তাই কোন মানুষ এক বিষয়ে সুখী হলেও অন্য আরো কয়েকটি বিষয়ে সে দুঃখী। আর তার মানেই হল সে পরিপূর্ণ সুখী নয়। পরিপূর্ণ সুখী মানুষ দুনিয়াতে আছে কিনা তা অবশ্য বলা মুশকিল।
বাইরে থেকে অনেক মানুষকে দেখে সুখী মনে করা হয়। যাদের সুখের বাগান ফুলে-ফলে সুশোভিত দেখে অনেক মানুষ তাদের মত সুখ কামনা করে অথবা তাদের প্রতি হিংসা করে। কিন্তু তারা কি সত্যপক্ষেই সুখী? যাদেরকে সুখের তারকা মনে করা হয়, তারা কি আসলেই সুখ আকাশের সু-উজ্জক্ষল তারকা, নাকি তাদেরও পশ্চাতে রয়েছে দুঃখের কালো অন্ধকার? তারা এমন মানুষ নয় তো, যাদের ব্যাপারে এক উর্দূ কবি বলেন,
“দুনিয়া মেঁ এ্যায়সে ভী কুছ লোগ হোতে হ্যাঁয়,
যো মাহফিলুঁ মেঁ হাঁসতে হ্যাঁয় মাগার তানহাঈ মেঁ রোতে হ্যাঁয়।”
সুখের সন্ধান
আসলে সুখ হল হৃদয়ের সেই স্বাচ্ছন্দ্য-শান্তি, স্বস্তি ও আনন্দ অনুভবের নাম, যা দৈহিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক কল্যাণ বর্তমান ও ভবিষ্যতে সুনিশ্চিত বলে অনুভূত হয়।
বলা বাহুল্য, মানুষ এ জগতে সুখ অনুভব করে:
১. পূর্ণ ঈমান নিয়ে।
২. জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি নিয়ে।
৩. মান, খ্যাতি, যশ ও গৌরব নিয়ে।
৪. নিরোগ দেহ ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে।
৫. ধন ও ঐশ্বর্য এবং হালাল রুযী নিয়ে।
৬. প্রশস্ত বাড়ি ও বিল্ডিং নিয়ে।
৭. পতিব্রতা নারী (স্ত্রী) নিয়ে।
৮. ভালো গাড়ি নিয়ে।
৯. দাস-দাসী নিয়ে।
১০. নেক প্রতিবেশী নিয়ে।
১১. বিশ্বস্ত বন্ধু নিয়ে।
১২. (হিংস্র মানব-দানব ও জন্তু এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে) নিরাপদ পরিবেশ নিয়ে।
১৩. বসন্তের মত যৌবন নিয়ে।
সুখের মূল বিষয় হল, নিরাপত্তা; যেহেতু ভীত-সন্ত্রস্ত ব্যক্তি সুখী হতে পারে না। অতঃপর সুস্থতা; যেহেতু অসুস্থ ও রোগী ব্যক্তি সুখী হতে পারে না। অতঃপর যৌবন; যেহেতু যৌবনহীন ব্যক্তি সুখী হতে পারে না। অতঃপর ধনবত্তা; যেহেতু দরিদ্র ও অভাবী ব্যক্তি সুখী হতে পারে না।
সুখ তিন শ্রেণীর ঃ মনের সুখ আছে হিকমত, পবিত্রতা ও বীরত্বে। দৈহিক সুখ আছে সুস্থতা, সৌন্দর্য ও শক্তিমত্তায়। আর এ দুয়ের বাইরের সুখ আছে ধনবত্তা, যশ ও কুলীনত্বে।
এ সব কিছুই পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাস। কিন্তু মুসলিমের জন্য পার্থিব জগৎই শেষ জগৎ নয়। মুসলিমের জীবন আরো দীর্ঘ, চিরস্থায়ী। তার দৃষ্টি কেবল পার্থিব সুখ-বিলাসেই সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ নয়। তার জীবন – বরং আসল জীবন হল মরণের পরপারে। আর সেই জীবনই চিরস্থায়ী অনন্তকালের। তাই তার দৃষ্টিও অতি দীর্ঘ, অতি প্রশস্ত। ভাবনাও লম্বা বা দীর্ঘ দিনের। তাকে শুধু দুনিয়ার সুখেই ক্ষান্ত হলেই চলবে না। বরং দুনিয়াতে সুখ না পেলেও, এ ক্ষণস্থায়ী জিন্দেগীর কয়টি দিনে সুখ না পেলেও পরকালের সুখকে সে কোন মতেই দৃষ্টিচ্যুত করতে পারে না।
সুখের সন্ধান
বলা বাহুল্য কিছু লোক আছে, যারা পার্থিব জগতের সুখ-সামগ্রী নিয়ে খোশ। আসলে তারা কিন্তু প্রকৃত সুখী নয়।
পক্ষান্তরে আরো কিছু লোক আছে, যারা পরকালের সুখ-সামগ্রী নিয়ে খোশ। তারা ইহকালে সুখ অর্জনে সমর্থ না হলেও, আসলে তারাই কিন্তু প্রকৃত সুখী।
অবশ্য আর এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা ইহকালের সুখ ভোগ করেও পরকালের সুখ লাভ করে। বাস্তবে তারাই কিন্তু পরম ও চরম সুখী।
সুখ-সন্ধানী বন্ধু আমার! তোমাকে সেই পরম ও চরম সুখের কথাই বলব। কারণ, সাময়িক সুখ সুখ নয়। তবে জেনে রেখো যে, সুখ লাভের পূর্বে তোমাকে জানতে হবে সুখের উপায়, পথ ও উৎস। জানতে হবে চিরসুখী থাকার কৌশল।
অতএব সর্বপ্রথম ভেবে দেখ সুখের জিনিস কোনটি?
অতঃপর জানার চেষ্টা কর তা পাওয়ার পথ কি?
তারপর সেই পথে চলতে শুরু করে দাও।
তদনুরূপ সুখের বিপরীত ও শত্রু হল দুঃখ। জীবন থেকে দুঃখ দূর করতে না পারলে সুখ তোমার গৃহে বাসা বাঁধবে না। সুতরাং সেই সাথে ভেবে দেখ দুঃখের জিনিস কোনটি?
অতঃপর জানার চেষ্টা কর তার সাথে সাক্ষাতের পথ কোনটি?
তারপর সেই পথে চলা হতে দূরে থাক। তবেই পাবে খাঁটি সুখের সন্ধান।
প্রিয় বন্ধু! সুখ বাইরের জিনিস নয়। সুখ হল মনের জিনিস। যে নিজেকে সুখী মনে করে না, সে কখনো সুখী হতে পারে না। একমাত্র মনের শান্তিই পারে জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলতে।আর জ্ঞানী লোকেরা কখনো সুখের সন্ধান করে না, বরং তারা কামনা করে দুঃখ-কষ্ট থেকে অব্যাহতি। অন্ধকার দূর করতে পারলেই যেমন জীবন আলোকিত হয়, তদনুরূপ দুঃখ থেকে রেহাই পেলে সুখ লাভ হয় এমনিই।
সুখের সন্ধান
মিথ্যা সুখ
পার্থিব কিছু সুখ আছে যা আসলে ভুয়ো ও মিথ্যা। অপরের দৃষ্টিতেও ঐ সুখের সুখীকে প্রকৃত সুখী বলে মনে হয় যে, সেটাই জীবনের চরম সাফল্য। কিন্তু বাস্তব তার বিপরীত।
ধনসুখ
অনেকে মনে করে যে, প্রকৃত সুখ আছে ধন-ভাণ্ডারে। অর্থ উপার্জন করে সিন্দুক ভর্তি করা, ব্যাংক ব্যালেন্স করা অথবা গাড়ি ও বাংলা বাড়ি করা, তলার উপর তলা বিল্ডিং করাই হল সুখের মূল কারণ। শত বিঘা জমি-জায়গা, পুকুর-বাগান আছে বলে, বড় কারখানা বা দোকান আছে বলে, লোকে এ সবের মালিককে সুখী ভাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা যে সুখী তার নিশ্চয়তা কোথায়? সুখ যে মনের জিনিস। মনের ভিতরকার খবর বাহির থেকে কে জানতে পারে?
সুখ আছে স্বল্প কামনার মাঝে, অধিক ধনসম্পদে নয়। ধন থাকলেই যে ধনী সুখী তা নয়। কারণ ধনী অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে মেহনত করে, স্বাস্থ্যহানি ঘটায়, কত কষ্ট পায়।
কষ্ট পায় ধন হিফাযত করতে, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় তার সংরক্ষণ ও বিনিয়োগ করে মুনাফা লাভের ফিকিরে। ধ্বংস ও চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সদা ভীত-শঙ্কিত থাকে।
কোটিপতি হওয়া সত্ত্বেও ধনী মনে শান্তি পায় না। রাত্রে ঠিকমত ঘুমাতে পারে না। ভয় হয়, কখন তার ধনে ডাকাতি পড়ে অথবা সরকারী কোন খপ্পর এসে পড়ে।
বলা বাহুল্য, এ জীবন কিন্তু সুখের জীবন নয়। যে জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য নেই, নিশ্চিন্তে ঘুম নেই, চিন্তাহীন আনন্দ নেই, সে জীবন কি সুখের জীবন?
কথায় বলে, মাল জানের কাল। মাল অনেক সময় মানুষকে বিপদে ফেলে, এমনকি জান নিয়েও টানাটানি শুরু করে দেয়। ধনের অহংকার মানুষের পতন ডেকে আনে।

সুখের সন্ধান
Reviews
There are no reviews yet.