Parturient ut id tellus vulputatre ac ultrlices a part ouriesnt sapien dignissim partu rient a a inter drum vehicula. Ornare metus laoreet tincidunt eros rolem tristique pretium malada.
Cras rhoncus vivamus luctus platea arcu laoreet selm. Curae est condenectus sed hac a parturient vestibulum.
মানব জাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ্ তাআলা শুধু কিতাব নাযিল করে ক্ষান্ত হন নি, সাথে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন। যিনি আল্লাহ প্রদত্ত বার্তা মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। মানব জীবনে কুরআনের প্রয়োগ কীভাবে ঘটবে, কীভাবে আল্লাহর নির্দেশ মেনে জান্নাতে পৌঁছুতে হবে, এর বাস্তব নজীর নবীজি দেখিয়ে গেছেন। সেই নবীর বলা কথা, কাজ, সম্মতি, অসম্মতি সবই হাদীস অন্তর্ভুক্ত। মোট কথা হাদীস কুরআনের ব্যাখ্যা। হাদীসের কিতাবসমূহের ভিতর সবচেয়ে বিখ্যাত হলো সহীহুল বুখারী। কুরআনের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ হিসেবে মুসলিমদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত। এর প্রতিটি হাদীস সহীহ হওয়ার ব্যাপারে আলিমদের ভিতর দ্বিমত নেই। মুসলিম মাত্রই নবীজির জীবনাচার, তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণী জেনে রাখা জরুরী। তাই সহীহুল বুখারী গ্রন্থটি এক দুই কপি হলেও আমাদের সকলের ঘরে থাকা চাই। প্রিয়জনকে উপহার দেবার জন্য নবীজির হাদীসের চাইতে উত্তম আর কী হতে পারে? এ ক্ষেত্রে তাওহীদ পাবলিকশন্সের অনুবাদ বেশ ঝরঝরে।
সহীহুল বুখারী ৪র্থ খণ্ড
(বঙ্গানুবাদ)
মূল : শাইখ ইমামুল হুজ্জাহ আবু ‘আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন
ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ্ আল বুখারী আল-জু’ফী
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على أمين وحي سيد المرسلين نبينا محمد
وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين
তাওহীদ পাবলিকেশন্স হতে সহীহুল বুখারী প্রকাশ করার উদ্যোগ নিলে যারপর নাই আমি আনন্দিত হই এবং এটি পাঠক সমাজের যেন উপকারে আসে তার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেই। আশাকরি সম্পাদকমণ্ডলীর নিরলস প্রচেষ্টা এবং সাধনার ফলে অনুবাদটি যথোপযুক্ত হবার পথও উন্মোচিত হয়েছে। কেননা বাজারে সহীহুল বুখারী গ্রন্থটির আরো অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে বটে, কিন্তু অনুবাদকগণ টীকা লিখতে গিয়ে যেভাবে হাদীস বিরোধী স্বীয় মাযহাব সহায়ক কপোলকল্পিত বা কোন ইমামের অনুকরণে টীকা সংযোজন করে দিয়ে মাযহাব পক্ষকে বলিষ্ঠ ও দলীল সম্মত হওয়া প্রমাণের জন্য অপচেষ্টায় সময় নষ্ট করেছেন তাতে পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ শ্রোতা মহোদয়গণ অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির ধুম্রজালে ফেঁসে গিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন।
আমি আশাকরি তারা এ সহীহুল বুখারী গ্রন্থটি অধ্যয়নে যেমন পাবেন নিছক সহীহ হাদীসের সন্ধান তেমনি ভাবে উন্মোচিত হবে তাদের নিকট ‘আকীদাহ ‘আমাল সংশোধন করার অত্যাবশ্যকীয় পথ। এ দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায় যে, উপরোক্ত সহীহুল বুখারীর অনুবাদটি বহু দিনের আকাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত খিদমাত আঞ্জাম দিতে সক্ষম হবে, ইনশাআল্লাহ। এ কারণে আমি তাওহীদ পাবলিকেশন্স-এর পরিচালকমণ্ডলীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে আন্তরিক মুবারাকবাদ জানাচ্ছি। আর সুপরামর্শ দিচ্ছি সকল মুসলিম নর-নারীকে তদ্বারা উপকৃত হতে। সবশেষে আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের নিকট দু’আ করি- হে আমাদের রব! প্রকাশক মহোদয়ের তরফ থেকে তোমার দীনের এ খিদমাতটুকু কবূল কর এবং প্রকাশনা জগতে তার গতিশীলতা আরো বৃদ্ধি করে দাও। আমীন! সুম্মা আমীন !
وصلى الله على سيدنا محمد خاتم الأنبياء والرسل أجمعين
যোগ্য আলিমগণ মিলিতভাবে সহীহুল বুখারীর যে অনুবাদটি করেছেন এবং তাওহীদ পাবলিকেশন্স যেটি প্রকাশ করেছে আমি আশা করি তা সঠিক ও বিশুদ্ধ। বাংলাভাষী জনগণ পাঠ করে যথেষ্ট উপকৃত হবেন। অনুবাদটি সম্পূর্ণরূপে আমার পক্ষে পড়িয়ে শোনা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু অংশ যা শুনেছি তার মান অত্যন্ত সন্তোষজনক । ইলেক্ট্রনিক্স-এর এই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পাঠকদের নানাবিধ সুবিধার কথা বিবেচনা করে অত্র গ্রন্থের অনুবাদের কাজে এবং বিন্যাস পদ্ধতিতে যে উৎকর্ষ সাধন করা হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয় । আশা করি এ সহীহুল বুখারী গ্রন্থখানা প্রকাশিত হবার ফলে সাধারণ পাঠক যেমন উপকৃত হবেন তার সাথে সাথে আলিম সমাজ, লেখকগণ ও বক্তাগণ বিষয়ভিত্তিক কোন আলোচনা রাখার জন্য খুব সহজেই তাদের কাঙ্ক্ষিত হাদীসগুলো বের করতে পারবেন। আল-মু’জামুল মুফাহরাস লি আল ফাজিল হাদীস হচ্ছে কুতুবুস তিস‘আহ’র (নয়টি হাদীসগ্রন্থের) বহুবিধ সূচিগ্রন্থ। যা একটি বিস্ময়কর সংকলন। আর এর নম্বরের সাথে মিল রেখে হাদীসের নম্বর মিলানো আর হাদীস খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় উৎস সংযোগ করার ফলে এটির মানও আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে আসবে বলে আমি মনে করি। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি এবং প্রকাশের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের কল্যাণ কামনা করছি। পাশাপাশি এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক এবং বিস্তৃতি লাভ করুক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিকট এই ফরিয়াদ জানাই ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যানবেইসের প্রধান
শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস আলী সাহেবের সুচিন্তিত মতামত
ইসলামী শরী‘আতের দু’টি মূল উৎস হচ্ছে আল্লাহর পবিত্র বাণী সম্বলিত আল-কুরআনুল হাকীম ও রসূল সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ বা হাদীস। আল কুরআন হচ্ছে প্রকাশ্য ঐশীবাণী আর হাদীস হচ্ছে গোপন ওয়াহী । স্বয়ং আল্লাহর ঘোষণা হল : ০৮, “আল্লাহর রসূল কপোলকল্পিত কোন কথা বলেন না। তিনি যা কিছু বলেন তা আল্লাহর ওয়াহী ভিন্ন কিছুই না”– (সূরা নাজম : ৩-৪)। কুরআনের বিধানাবলীর বাস্তবায়ন কৌশলই হচ্ছে হাদীসের অনন্য ভূমিকা যার মাধ্যমে অবশ্য পালনীয় নির্দেশাবলীর সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, আর তারই বিস্তারিত রূপই হচ্ছে আল-হাদীস, যার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আল-কুরআনে নাই। আল-কুরআন সঠিকভাবে বুঝতে হলে হাদীসের অনুসারী হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। যার স্বপক্ষে সুস্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে, অর্থাৎ আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের যে নির্দেশনা প্রদান করেন, তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা যা নিষেধ করেন তা হতে দূরে থাক। (সূরা হাশর : ৭) প্রশ্ন হলো সঠিক হাদীসের সন্ধান পেতে হলে সঠিক প্রামাণ্য দলীল সম্বলিত হাদীসই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হবে । মৌল হাদীস গ্রন্থ হিসাবে সহীহুল বুখারী গ্রন্থটি শুধু সিহাহ সিত্তাহর মধ্যে শ্রেষ্ঠই নয় বরং এর সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সর্বজন স্বীকৃত মন্তব্য হল :অর্থাৎ আল কুরআনের পরে মানব রচিত বা সংকলিত গ্রন্থের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব নিঃসন্দেহে সহীহুল বুখারী। এই গুরুত্বপূর্ণ অমূল্য কিতাবটির বঙ্গানুবাদের প্রয়োজনীয়তার কথা বিচার করে একাধিক অনুবাদ অনূদিত হয়েছে। তবে খাঁটি মুসলমানদের জন্য যে খাঁটি মানের অনুবাদ গ্রন্থ কাম্য তার চাহিদা দীর্ঘদিনের। এহেন গ্রন্থের বঙ্গানুবাদের বিপুল চাহিদার কথা বিবেচনা করে উদ্যোগী মহল দেশের সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের সহায়তায় ও হাদীস বেত্তাগণের তত্ত্বাবধানে সহজতর ও সাবলীল ভাষায় সহীহুল বুখারীর অনুবাদ প্রকাশ করতে পেরে আমরা আল্লাহর দরবারে শতকোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। পাঠক সমাজের কাছে এই সহীহুল বুখারীর অংশটুকু তুলে দিতে পারায় আমরা আজ অত্যন্ত আনন্দিত। ইনশাআল্লাহ এই গ্রন্থের বাকী অংশের অনুবাদ অতি অল্পসময়ে প্রকাশ করা হবে। যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই অনুবাদ গ্রন্থ তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শাইখুল হাদীস ও ঢাকাস্থ মাদ্রাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবীয়ার সাবেক মুহতামীম শাইখ আহমাদুল্লাহ রাহমানী ও শাইখ ‘আব্দুল খালেক সালাফী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম এবং বর্তমান মুহাদ্দিস শাইখ মুস্তফা বিন বাহরুদ্দীন আল-কাসেমী । আল্লাহ তাঁদের সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন । আল্লাহুম্মা আমীন ।
পরিশেষে এই অমূল্য সহীহুল বুখারী গ্রন্থের রচনা, অনুবাদ, টীকা লিখন, বিভিন্ন প্রচলিত টীকা লিখনের ত্রুটির যথোচিত প্রতিউত্তর প্রদানসহ এর সম্পাদনা, প্রকাশনা এবং মুদ্রণে যাঁরা যতটুকু মেধা, সৃজনশীলতা, সময়, শক্তি সামর্থ্য দ্বারা এহেন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অকুণ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে অবদান রেখেছেন, তাদের সকলকে জানাই মোবারকবাদ । আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন যেন তাঁদের এই খিদমতটুকু কবূল করে নেন। এটাই হোক মহান আল্লাহর দরবারে আমাদের একান্ত কামনা । সহীহ হাদীস সম্পর্কে সঠিক ও স্বচ্ছ ধারণার অভাবে বর্তমান বিশ্বের বহু মাযহাবের ডামাডোলের মধ্যে বসবাস করে ফিকাহবাদীর মহাজালে আবদ্ধ হয়ে মানুষ হাবুডুবু খাচ্ছে আর বিভিন্ন মতবাদের অনুসারী হয়ে যাচ্ছে। এই গ্রন্থটি মূলতঃ সিহাহ সিত্তার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। আশা করা যায় এর অনুবাদ গ্রন্থটি বাংলা ভাষাভাষী সঠিক ইসলামী জ্ঞান অনুসন্ধানকারীগণকে সঠিক দ্বীনের পথ নির্দেশনা দানে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকারূপে কাজ করবে। আর মুসলিম জনগণের বিশেষ উপকারে আসবে।
মুহাম্মাদ ইলিয়াস আলী
এত অনূদিত বুখারী থাকতে পুনরায় এর প্রয়োজন হল কেন?
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহর জন্যই সকল গুণগান। যিনি মানুষের হিদায়াতের জন্য পাঠিয়েছেন ওয়াহিয়ে মাতলু আল কুরআন ও ওয়াহিয়ে গাইর মাতলু আল হাদীস । যার হিফাযতের দায়িত্ব তিনিই নিয়েছেন । এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর ঘোষণা “নিশ্চয় আমি যিকর (ওয়াহিয়ে মাতলু ও ওয়াহিয়ে গাইর মাতলু) অবতীর্ণ করেছি আর তার হিফাযত আমিই করব।” (সূরাঃ আল হিজর ঃ ৯ আয়াত) অনেকে যিক্র দ্বারা শুধু ওয়াহিয়ে মাতলু আল-কুরআনকেই উদ্দেশ্য করে থাকেন। কিন্তু সকল মুফাসসিরে কিরাম একমত যে, যিকর দ্বারা উভয়টাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন : “রসূল নিজ প্রবৃত্তি হতে কোন কথা বলেন না, তাঁর উক্তি কেবল ওয়াহী যা তাঁর প্রতি প্রেরিত হয়”- (সূরা আন্নাজম : ৩-৪ আয়াত)। এবং মানবতার মুক্তিদূত মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর বর্ষিত হোক অসংখ্য সলাত ও সালাম। যাঁর সমগ্র জীবনের আচার আচরণ ও সম্মতিকে আল-কুরআন মানব জাতির অবশ্য অনুসরণীয় হিসেবে বিধিবদ্ধ করেছে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য ব্যাখ্যা হিসেবে রয়েছে নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহীহ হাদীস। আর এ সহীহ হাদীস সংকলন করতে গিয়ে আইম্মায়ে কিরামকে ভোগ করতে হয়েছে যথেষ্ট ক্লেশ। তাঁদের অত্যন্ত শ্রমের ফলেই আল্লাহর রহমাতে সংকলিত হয়েছে সহীহ্ হাদীস গ্রন্থসমূহ । আর এ কথা সকলেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, হাদীস গ্রন্থসমূহের মধ্যে সহীহুল বুখারীর স্থান সবার শীর্ষে । আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় হাদীস অনুবাদের কাজ যদিও বহু পূর্বেই শুরু হয়েছে তবুও বাংলা ভাষায় হাদীস চর্চায় আমরা পিছিয়ে। ফলে এখনও আমরা সহীহ্ হাদীস বাদ দিয়ে হাদীসের ব্যাপারে অশিক্ষিত অনভিজ্ঞ নামধারী কতিপয় আলিমদের মনগড়া ফাতাওয়ার উপর আমল করতে গিয়ে আমাদের ‘আমলের ক্ষতি সাধন করছি। আর সাথে সাথে সহীহ্ হাদীস থেকে দূরে সরে গিয়ে আমরা তাকলীদের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের দেশে যাঁরা এ সকল সহীহ্ হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ করছেন তাঁদের অনেকেই আবার হাদীসের অনুবাদে সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অনুবাদে গরমিল ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। নমুনা স্বরূপ মূল বুখারীতে ইমাম বুখারী কিতাবুস সওমের পরে কিতাবুত তারাবীহ নামক একটি পর্ব রচনা করেছেন। অথচ ভারতীয় মুদ্রণের মধ্যে দেওবন্দী আলিমদের চাপে (?) কিতাবুত তারাবীহ কথাটি মুছে দিয়ে সেখানে কিয়ামুল লাইল বসানো হয়েছে। অবশ্য প্রকাশক পৃষ্ঠার একপাশে কিতাবুত তারাবীহ লিখে রেখেছেন। আর বাব বা অধ্যায়ের নিচে খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হরফে লিখেছেন, সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, এ অধ্যায় দ্বারা সলাতুত তারাবীহ উদ্দেশ্য। আর মিশর ও মধ্যপ্রাচ্য হতে প্রকাশিত সকল বুখারীতে কিতাবুত তারাবীহ বহাল তবিয়তে আছে, যা ছিল ইমাম বুখারীর সংকলিত মূল বুখারীতে। আর আধুনিক প্রকাশনী জানি না ইচ্ছাকৃতভাবে না অনিচ্ছাকৃতভাবে এই কিতাবুত তারাবীহ নামটি ছেড়ে দিয়ে তৎসংশ্লিষ্ট হাদীসগুলোকে কিতাবুস সওমে ঢুকিয়ে দিয়েছেন । অনেক স্থানে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল অনুবাদ করেছেন। অনেক স্থানে অধ্যায়ের নাম পরিবর্তন করে ফেলেছেন । কোথাও বা মূল হাদীসকে অনুচ্ছেদে ঢুকিয়ে দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন যে, এটা হাদীসের মূল সংকলকের ব্যক্তিগত কথা বা মত। কোথাও বা সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মাসআলা সম্বলিত লম্বা লম্বা টীকা লিখে সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। এতে করে সাধারণরা পড়ে গিয়েছেন বিভ্রান্তির মধ্যে। কারণ টীকাগুলো এমনভাবে লেখা হয়েছে যে, সাধারণ পাঠক মনে করবেন হয়তো টীকাতে যা লেখা রয়েছে সেটাই ঠিক; আসল তথ্য উদ্ঘাটন করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। আর আরেকজন শাইখুল হাদীসের বুখারীর অনুবাদের কথাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না। তিনি বুখারীর অনুবাদ করেছেন না প্রতিবাদ করেছেন তা আমাদের বুঝে আসেনা। কারণ তিনি অনুবাদের চেয়ে প্রতিবাদমূলক টীকা লিখাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন, যা মূল কিতাবের সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন। যে কোন হাদীসগ্রন্থের অনুবাদ করার অধিকার সবার জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু সহীহ্ হাদীসের বিপরীতে অনুবাদে, ব্যাখ্যায় হাদীস বিরোধী কথা বলা জঘন্য অপরাধ ।
এই প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হাদীস নম্বর ও অন্যান্য বহুবিধ বৈশিষ্ট্যসহ সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হল । শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই প্রকাশনার মধ্যে যা এ পর্যন্ত প্রকাশিত সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদে পাওয়া যাবে না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো :
১। আল-মু’জামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল হাদীস হচ্ছে একটি বিস্ময়কর হাদীস-অভিধান গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে আরবী বর্ণমালার ধারা অনুযায়ী কুতুবুত তিস’আহ্ (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মুসনাদ আহমাদ, মুয়াত্তা ইমাম মালিক, দারেমী) নয়টি হাদীসগ্রন্থের শব্দ আনা হয়েছে । যে কোন শব্দের পাশে সেটি কোন্ কোন্ হাদীসগ্রন্থে এবং কোন্ পর্বে বা কোন অধ্যায়ে আছে তা উল্লেখ রয়েছে ।
আমাদের দেশে এ গ্রন্থটি অতটা পরিচিতি লাভ না করলেও বিজ্ঞ আলিমগণ এটির সাথে খুবই পরিচিত। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের ছাত্র শিক্ষক সবার নিকট বেশ সমাদৃত । অত্র গ্রন্থের হাদীসগুলো আল মু’জামুল মুফাইরাসের ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। যার ফলে অন্যান্য প্রকাশনার হাদীসের নম্বরের সাথে এর নম্বরের মিল পাওয়া যাবে না। আর এর সর্বমোট হাদীস সংখ্যা হবে ৭৫৬৩ টি। আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৭০৪২টি। আর ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৬৯৪০ টি।
২। যে সব হাদীস একাধিকবার উল্লেখ হয়েছে অথবা হাদীসের অংশ বিশেষের সঙ্গে মিল রয়েছে সেগুলোর প্রতিটি হাদীসের শেষে পূর্বোল্লিখিত ও পরোল্লিখিত হাদীসের নম্বর যোগ করা হয়েছে। যার ফলে একটি হাদীস বুখারীর কত জায়গায় উল্লেখ আছে বা সে বিষয়ের হাদীস কত জায়গায় রয়েছে তা সহজেই জানা যাবে। আর একই বিষয়ের উপর যাঁরা হাদীস অনুসন্ধান করবেন তাঁরা খুব সহজেই বিষয়ভিত্তিক হাদীসগুলো বের করতে পারবেন। যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : (১০০২, ১০০৩, ১৩০০, ২৮০১, ২৮১৪, ৩৯৬৪, ৩১৭০, ৪০৮৮, ৪০৮৯, ৪০৯০, ৪০৯১, ৪০৯২, ৪০৯৪, ৪০৯৫, ৪০৯৬, ৬৩৯৪, ৭৩৪১) বন্ধনীর হাদীস নম্বরগুলোর মধ্যে ১০০১ নং হাদীসে উল্লিখিত বিষয়ে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ আলোচনা পাওয়া যাবে।
৩। বুখারীর কোন হাদীসের সঙ্গে সহীহ্ মুসলিমে কোন হাদীসের মিল থাকলে মুসলিমের পর্ব অধ্যায় ও হাদীস নম্বর প্রতিটি হাদীসের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : (মুসলিম ৫/৫৪ হাঃ ৬৭৭) অর্থাৎ পর্ব নম্বর ৫. অধ্যায় নং ৫৪, হাদাস নম্বর ৬৭৭।
সহীহ মুসলিমের হাদীসের যে নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে তা মু’জামুল মুফাহরাসের নম্বর তথা ফুয়াদ আবদুল বাকী নির্ণিত নম্বরের সঙ্গে মিলবে।
৪ । বুখারীর কোন হাদীস যদি মুসনাদ আহমাদের সঙ্গে মিলে তাহলে মুসনাদ আহমাদের হাদাস নম্বর সেই হাদীসের শেষে যোগ করা হয়েছে। যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে: (আহমাদ ১৩৬০২) এটির নম্বর এহইয়াউত তুরাস আল-ইসলামীর নম্বরের সঙ্গে মিলবে ৫। আমাদের দেশে মুদ্রিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আধুনিক প্রকাশনীর হাদীসের ক্রমিক নম্বরে অমিল রয়েছে। তাই প্রতিটি হাদীসের বন্ধনীর মাধ্যমে সে দুটি প্রকাশনার হাদীস নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ১০০১ নং হাদাস শেষে বন্ধনার মধ্যে রয়েছে। : (আ.প্র. ৯৪২. ই.ফা. ৯৪৭) অর্থাৎ আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস নং ৯৪২, আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাদীস নং ৯৪৭।
৬। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে (অনুচ্ছেদ) ক্রমিক নং এর সঙ্গে কিতাবের (পর্ব)নম্বরও যুক্ত থাকবে যার ফলে সহজেই বোঝা যাবে এটি কত নম্বর কিতাবের কত নম্বর অধ্যায়। যেমন ১০০১ নং হাদীসের পূর্বে একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে যার নম্বর ১৪/৭ অধ্যায় : অর্থাৎ ১৪ নং পর্বের ৭ নং অধ্যায়। ৭। যারা সহীহ বুখারীর অনুবাদ করতে গিয়ে সহীহ্ হাদীসকে ধামাচাপা দিয়ে যঈফ হাদীসকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য বা মাযহাবী অন্ধ তাকলীদের কারণে লম্বা লম্বা টীকা লিখেছেন তাদের সে টীকার দলীল ভিত্তিক জবাব দেয়া হয়েছে ।
৮। আরবী নামের বিকৃত বাংলা উচ্চারণ রোধকল্পে প্রায় প্রতিটি আরবী শব্দের বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন ঃ আয়েশা এর পরিবর্তে ‘আয়িশাহ্, জুম্মা এর পরিবর্তে জুমু’আহ, নবী এর পরিবর্তে নাবী, রাসূল এর পরিবর্তে রসূল, মক্কা এর পরিবর্তে মাক্কাহ, ইবনে এর পরিবর্তে ইবনু, উম্মে সালমা এর পরিবর্তে উম্মু সালামাহ, নামায এর পরিবর্তে সলাত ইত্যাদি ইত্যাদি প্রচলিত বানানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে
৯। সাধারণের পাশাপাশি আলিমগণও যেন এর থেকে উপকৃত হতে পারেন সে জন্য অধ্যায় ভিত্তিক বাংলা সূচি নির্দেশিকার পাশাপাশি আরবী সূচী উল্লেখ করা হয়েছে
১০। বুখারীর যত জায়গায় কুরআনের আয়াত এসেছে এমনকি আয়াতের একটি শব্দ আসলেও সেটির সূরার নাম, আয়াত নম্বর উল্লেখ করা
১১ । ইনশাআল্লাহ সমৃদ্ধশালী অধ্যায়ভিত্তিক সূচী নির্দেশিকাসহ প্রতিটি খণ্ডে থাকবে সংক্ষিপ্ত পর্বভিত্তিক বিশেষ সূচী নির্দেশিকা। এতে কোন্ পর্বে কতটি অধ্যায় ও কতটি হাদীস রয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে জানা যাবে।
১২। হাদীসে কুদসী চিহ্নিত করে হাদীসের নম্বর উল্লেখ।
১৩। মুতাওয়াতির
১৪ । মারফূ’
১৫। মাওকূফ ও
১৬। মাকতূ হাদীস নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে সে হাদীসগুলোকে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।
১৭। প্রতিটি খণ্ডের শেষে পরবর্তী খণ্ডের কিতাব/পর্বভিত্তিক সূচি নির্দেশিকা উল্লেখ করা হয়েছে।
তাওহীদ পাবলিকেশন্স যে বিরাট প্রকল্প হাতে নিয়েছে এটি কোন একক প্রচেষ্টার ফসল নয় । এটি প্রকাশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন দেশের বিখ্যাত ‘উলামায়ে কিরাম ও শাইখুল হাদীসবৃন্দ। বিশেষ করে উপদেষ্টা পরিষদের নিকট আমরা চিরকৃতজ্ঞ। প্রবীণ শাইখুল হাদীস যিনি অর্ধ শতাব্দিরও বেশি সময় ধরে বুখারীর দারস্ পেশ করেছেন- শাইখুল হাদীস আল্লামা আহমাদুল্লাহ রহমানী; সিকি শতাব্দীরও অধিক কাল যাবৎ সহীহুল বুখারীর পাঠ দানে অভিজ্ঞ, মাদরাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার সাবেক প্রিন্সিপ্যাল শাইখুল হাদীস আব্দুল খালেক সালাফী; বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যানবেইসের প্রধান শাইখ ইলিয়াস আলী ও অধুনা গবেষক শাইখুল হাদীস মুস্তফা বিন বাহারুদ্দীন কাসেমী হাফিযাহুমুল্লাহ। যাঁদের পূর্ণ তদারকিতে ও পরামর্শে পাঠক সমাজে অধিক সমাদৃত করার জন্য এটিকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করা হয়েছে। আরও যাঁদের অবদানকে ছোট করে দেখার উপায় নেই তাঁরা হলেন, সম্পাদনা পরিষদের শাইখগণ। যাঁরা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁদের সকলের নিকট আমরা কৃতজ্ঞ। বঙ্গানুবাদের ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত বুখারীর অনুবাদ হতে যথেষ্ট সাহায্য নেয়া হয়েছে। আমরা এজন্য ই.ফা.বাং’র প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে কুয়েতে জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মুবাল্লিগ, বহু গ্রন্থ প্রণেতা শাইখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম যিনি শত ব্যস্ততার মাঝেও এ গ্রন্থটি প্রকাশের ব্যাপারে সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন ও অনেকগুলো প্রয়োজনীয় টীকা সংযোজন করেছেন। তারপরও আরও যাঁর অবদানকে খাট করে দেখার কোন কারণ নেই তিনি হলেন, হেরা প্রিন্টার্স এর স্বত্বাধিকারী শ্রদ্ধেয় মাহবুব ভাই যাঁর পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়াতে এত বড় কাজে অগ্রসর হওয়ার সাহস পেয়েছি। সর্বোপরি এটি প্রকাশের ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও সহযোগিতা করেছেন এমন প্রত্যেকের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করছি আল্লাহ তাঁদেরকে উভয় জগতে উত্তম প্রতিদান দান করুন। এ বিশাল মুদ্রণের কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে ভুলভ্রান্তি হওয়া স্বাভাবিক। পাঠকবৃন্দের চোখে সে ভুলগুলো ধরা পড়লে আমাদের জানিয়ে বাধিত করবেন, পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের ব্যবস্থা নিব ইনশাআল্লাহ । আশা করি মুদ্রণ প্রমাদগুলোকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।
হে আল্লাহ! এটির ওয়াসিলায় তোমার নিকট এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য মাগফিরাত ও দয়া কামনা করছি। আল্লাহ তুমি আমাদের ক্ষমা কর এবং প্রচেষ্টাকে কবুল কর । আমীন।
বিনীত
মুহাম্মাদ ওয়ালীউল্লাহ
পরিচালক, তাওহীদ পাবলিকেশন্স
সহীহুল বুখারী ৪র্থ খণ্ড
Reviews (0)
Reviews
There are no reviews yet.
Be the first to review “সহীহুল বুখারী ৪র্থ খণ্ড” Cancel reply
Reviews
There are no reviews yet.