শিশু প্রতিপালন
শিশু পিতা মাতার নিকট কি অধিকার রাখে, তাদের নিকট তার প্রাপ্য হক কি, কি কি যত্ন পাওয়ার সে যোগ্য, সন্তান প্রতিপালন করার মূল লক্ষ্য কি হওয়া উচিত, এবং তার বুনিয়াদই বা কি হওয়া উচিত, সে সব কথাই সংক্ষিপ্ত আকারে কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচিত হয়েছে এই বইটিতে। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।
শিশু প্রতিপালন
শিশু প্রতিপালন
ও
শিশু-সম্বন্ধীয় সংক্ষিপ্ত মাসায়েল
أحكام الطفل
عبد الحميد المدني
প্রণয়নে
আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ইসলামী গবেষক, লেখক, মুহাক্কিক আলিম ও দাঈ
প্রকাশনায়
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ঢাকা বাংলাদেশ
শিশু প্রতিপালন
সূচীপত্র
- ভূমিকা
- সন্তানের প্রয়োজনীয়তা
- সন্তানের জন্ম
- সন্তানের বংশ
- দুগ্ধপান
- নামকরণ
- আকীকাহ
- খতনা
- শিশু-প্রতিপালন
- কুড়ানো ছেলের প্রতিপালন
- এতীম-প্রতিপালন
- শিশুর ভরণ-পোষণ
- সন্তানদের মাঝে ন্যায়পরায়ণতা
- শিশুর তরবিয়ত
- সন্তানকে আদর-যত্ন
- নাবালক শিশু ও পর্দা
- শিশু ও নামায-সংক্রান্ত কিছু মাসায়েল
- শিশু ও রোযা-হজ্জ
- বাল্য-বিবাহ, তালাক ও ইদ্দত
- শিশু ও ক্রয়-বিক্রয়
- শিশু-কিশোর ও জিহাদ
- শিশু ও অপরাধ
- শিশুর ধর্ম ও পরকালের পরিণাম
- শিশু সাবালক কখন হয়?
- শিশুর জন্মদিন
- শিশুর শরয়ী চিকিৎসা
শিশু প্রতিপালন
ভূমিকা
بسم الله الرحمن الرحيم
সন্তান পিতা-মাতার নয়নমণি, কলিজার টুকরা, স্নেহপুত্তলি, বৃদ্ধকালের সম্বল, দেশের ভবিষ্যতের নাগরিক, আগামী প্রজন্মের পিতা-মাতা। কচি-কাঁচা শিশু সেই কাঁচা মাটি, যা দিয়ে তৈরী হবে ইঁট; যে ইঁটে নির্মাণ হবে সমাজের মহা অট্টালিকা। তাই তো এই শিশু হল চিন্তাবিদ্দের চিন্তার একটি বিষয়, সমাজ-বিজ্ঞানী ও গবেষকদের গবেষণা ও সমীক্ষার একটি বস্তু। আর দ্বীনী প্রশিক্ষকদেরও এক লক্ষ্যবস্তু এই শিশুই।
অবোলা শিশু পিতা-মাতার নিকট কি অধিকার রাখে, তাদের নিকট তার প্রাপ্য হক কি, কি কি যত্ন পাওয়ার সে যোগ্য, সন্তান প্রতিপালন করার মূল লক্ষ্য কি হওয়া উচিত এবং তার মূল বুনিয়াদই বা কি হওয়া উচিত, সে সব কথাই সংক্ষিপ্ত আকারে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আলোচিত হয়েছে ক্ষুদ্র এই পুস্তিকায়।
শিশু আমাদের মালিকানাধীন কোন ধন নয়। শিশু হল আমাদের নিকট মহান আল্লাহর দেওয়া এক আমানত। এই আমানত সঠিকভাবে গচ্ছিত রাখা আমাদের জরুরী কর্তব্য। আর সেই কর্তব্যে যাতে কোন প্রকার ত্রুটি ও অবহেলা প্রকাশ না পায়, সেই লক্ষ্যেই শিশুর বিভিন্ন ইলাহী আহকাম আমাদের জানা অবশ্যকর্তব্য। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে সে উদ্দেশ্য সফল হলে কেউ যদি লেখকের জন্য আন্তরিকভাবে দুআ করেন, তাহলে আমার এ শ্রম ও সময় ব্যয় সার্থক হবে।
মহান প্রতিপালকের নিকট আমার এই দুআ যে, আমরা যেন আমাদের শিশু-প্রতিপালনের দ্বায়িত্ব কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে পেরে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। আমীন।
আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
শিশু প্রতিপালন
সন্তানের প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহ তাআলার এক বড় নিদর্শন এই যে, তিনি পুরুষের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন; যাতে সে তার নিকট শান্তি পায় এবং তাদের আপোসে পারস্পরিক বন্ধুতক্ষ ও প্রেম সৃষ্টি করেছেন। আর এই প্রেম দিয়েই বিশক্ষজগৎ প্রতিষ্ঠিত। প্রেমের আকর্ষণে দুয়ের মিলনেই সৃষ্টি হয় পরবর্তী প্রজ›ম ও বংশধর। তা না হলে সংসার অচল হয়ে যায়, মানব-জ›ম বন্ধ হয়ে যায়। অতএব কামনার মাঝে সন্তান কামনা করা মুস্তাহাব।
জনাধিক্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা এক বল। তাই তো অধিক সন্তানদাত্রী নারীকে বিবাহ করতে মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। আর সন্তান ছেলেই হোক কিংবা মেয়ে উভয়ের প্রতি যত্নবান হতে, তাদের জীবনের মূল্যায়ন করে পৃথিবীতে তাদেরকে বাঁচার অধিকার দিতে আদেশ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
{وَلاَ تَقْتُلُوا أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئاً كَبِيراً}
“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্র-ভয়ে হত্যা করো না; ওদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই রুযী দিয়ে থাকি। নিশ্চয় ওদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।” (সূরা ইসরা ৩১ আয়াত)
জাহেলী যুগে কারো কন্যা সন্তান জ›ম হলে সে লজ্জায় ও অপমানে যেন মরে যেত। (বর্তমান আধুনিক জাহেলিয়াতেও কারো কারো নিকট তা বিদ্যমান।) কন্যা সন্তান জ›মানো তাদের নিকট অত্যন্ত লাঞ্ছনার বিষয় ছিল।
{وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدّاً وَهُوَ كَظِيمٌ – يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ …}
“তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হত, তখন তার মুখমণ্ডল কাল হয়ে যেত এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে কিজ্জষ্ট হত।
শিশু প্রতিপালন
তাকে যে সংবাদ দেওয়া হত তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত¥গোপন করত। (ভাবত,) হীনতা সত্তেক্ষও সে ওকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে দেবে—।” (সূরা ১৬/৫৮-৫৯)
বলা বাহুল্য তাদের সে সিদ্ধান্ত ও প্রথা ছিল বড় নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত। প্রকৃতপক্ষে বহু নিষ্ঠুর পিতা তার কন্যাকে জীবন্ত প্রোথিতও করত। ইসলাম এসে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ ও প্রতিবাদ ঘোষণা করল। কাল কিয়ামত কোর্টে ঐ জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তাকে কি অপরাধে হত্যা করা হয়েছিল? (সূরা ৮১/৮-৯)
ইসলাম কন্যা-সন্তান প্রতিপালন, তার ভরণ-পোষণ এবং তার প্রতি বিশেষ যত্নবান ও অনুগ্রহশীল হতে মুসলিমকে উৎসাহিত করে। যে কন্যা এক শ্রেণীর মানুষের কাছে ‘বালা ও দায়’ বলে পরিচিতা, সে কন্যার অধিকারের প্রতি সবিশেষ খেয়াল রাখলে দোযখ থেকে মুক্তি এবং বেহেশ্তের শান্তি লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যে ব্যক্তি তার কন্যা সন্তানকে ‘মায়ের মত মা’ করে গড়ে তুলবে এবং সুপাত্রের সাথে তার বিবাহ দিবে, সে ব্যক্তি ঐ প্রতিশ্রুতির ফল অবশ্যই লাভ করবে।
মানুষ পৃথিবীতে মুসাফিরের মত আসে এবং পৃথিবী ছেড়ে যায়ও মুসাফিরের মত খালি হাতে। সঙ্গে কিছু আনে না এবং নিয়েও যেতে পারে না কিছু সঙ্গে। মরণের পরে তার কেউ সঙ্গ দেয় না। সঙ্গী থাকে কেবল তার ঈমান ও নেক আমল। মরণের পর হতে সকল আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। অতিরিক্ত সওয়াব অর্জনের উপায় বলতে আর কিছু থাকে না। কিন্তু তিনটি আমল ও চেষ্টার ফল মরণের পরেও মৃতব্যক্তি ভোগ করতে পারে; সদকায়ে জারিয়া (ইষ্টাপূর্ত কর্ম), ফলপ্রসূ ইল্ম এবং নেক সন্তান, যে পিতার জন্য দুআ করতে থাকে। সন্তানের দুআর বর্কতে জান্নাতে পিতার দর্জা (মর্যাদা) বৃদ্ধি হতে থাকে।
সন্তান শিশু অবস্থায় মারা গেলে পিতামাতা যদি সে সময়ে ধৈর্য ধরে এবং এর বিনিময়ে সওয়াবের আশা রাখে, তাহলে কিয়ামতে ঐ সন্তান দোযখ থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। ভ্রূণ অবস্থায় শিশু গর্ভচ্যুত হলে এবং তাতেও সওয়াবের আশা রাখলে সেই শিশু তার নাভির নাড়ী ধরে নিজের মা-কে বেহেশ্তের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
শিশু প্রতিপালন
সন্তান পিতামাতার নয়নমণি হয়, কলিজার টুকরা হয়। স্নেহ-বাৎসল্যের দরুণ মানুষ অনেক সময় বিধেয় কাজে বাধা পায়। কল্যাণ ও মুক্তির কাজে পিছপা হয়ে পড়ে। তাই সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ এ বিষয়ে মুমিনদেরকে সতর্ক করে বলেন,
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلادِكُمْ عَدُوّاً لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ- إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلادُكُمْ فِتْنَةٌ وَاللهُ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ}
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, অতএব তাদের ব্যাপারে তোমরা সতর্ক থেকো। তোমরা যদি ওদেরকে মার্জনা কর, ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং ওদেরকে ক্ষমা কর, তবে জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষার বিষয়। আর তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে মহাপুরস্কার।” (সূরা ৬৪/১৪-১৫)
সত্যপক্ষে সম্পদ ও সন্তান মানুষের একান্ত আপন কেউ নয়। বরং আল্লাহর তরফ হতে এ এক আমানত। আজীবন যথাসম্ভব তদ্দক্ষারা উপকৃত হয়ে পুনরায় তাঁর আমানত তাঁকেই প্রত্যর্পণ করে যেতে হবে। তিনি বান্দাকে এই দুয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। লক্ষ্য করেন, বান্দা কার প্রতি অধিক মনোযোগী? সন্তান-সম্পদের প্রতি, না তাঁর ও তাঁর ইবাদতের প্রতি? সন্তানের কারণে মানুষ বহু কিছু করে। কৃপণতা, কাপুরুষতা ও ভীরুতার জ›ম হয় এই সন্তানের কারণেই। তার কারণেই বান্দা আল্লাহর স¹রণ-বিমুখ হয়ে পড়ে। যার জন্য আল্লাহ মু’মিনদেরকে সাবধান করে বলেছেন,
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلاَ أَوْلادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ}
“হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স¹রণে উদাসীন না করে রাখে। যারা উদাসীন হবে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” (সূরা মুনাফিকূন ৯ আয়াত)
সন্তানের জন্ম
স্বামী-স্ত্রীর বীর্য সম›বয়ে সন্তানের জ›ম হয়। মিলনে যার বীর্য¯খলন আগে বা অধিক হয়, সন্তান তার বা তার বংশের কারো মত হয়।
অতএব সন্তান যে পিতা বা মাতার মতই হবে, তা কোন জরুরী নয়। পিতামাতার রঙ গৌরবর্ণ হলে এবং সন্তানের রঙ শ্যাম বা কৃষ্ণবর্ণ অথবা তার বিপরীত হলে সন্দেহের কিছু নেই।
মানব সৃষ্টির সর্বপ্রথম উপাদান হল মাটি। অতঃপর শুক্র-বিন্দুরূপে মাতৃগর্ভের এক নিরাপদ আধারে স্থাপিত হয়। পরে ৪০ দিনে তা জমাট রক্তে পরিণত হয়। অতঃপর ৪০ দিন পর এক মাংস-পিণ্ডে পরিণত হয়। এর ৪০ দিন পর এক ফিরিশ্তা প্রেরিত হন। তিনি ভ্রূণের ভবিষ্যতের রুযী, জীবনকাল, সৌভাগ্য, দুর্ভাগ্য ইত্যাদির (নিয়তি) লিপিবদ্ধ করেন।(১) অতঃপর ভ্রূণে আত্মদান করা হয়। অতঃপর ঐ পিণ্ডকে অস্থি-পঞ্জরে পরিণত করা হয়। অতঃপর তা মাংস দ্বারা ঢেকে দেওয়া হয়। অবশেষে তাকে আরো এক রূপ দান করা হয়। সুনিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান!
{يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثاً وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ
শিশু প্রতিপালন
الذُّكُورَ- أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَاناً وَإِنَاثاً وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيماً إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ}
“তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন, অথবা দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।” (সূরা শূরা ৪৯-৫০ আয়াত) তাই পুত্র বা কন্যা জ›ম দেওয়ার ব্যাপারে ¯্বামী বা স্ত্রী কারো কোন হাত নেই। যেমন সন্তান দানে হাত নেই কোন দর্গা বা মাযারের। সুতরাং সন্তানহীনা সন্তানের আশায় ঔষধ ব্যবহার করবে। চাইবে আল্লাহরই নিকটে। কোন আস্তানা, দর্গা বা খানকায় চাওয়া বড় শির্ক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গর্ভ-সঞ্চারণ যদি ¯্বামীর বীর্য দ্বারাই হয়, তাহলে তা বৈধ। অন্যথা পরপুরুষের বীর্য গর্ভাশয়ে প্রক্ষেপ করে প্রজনন আদৌ বৈধ নয়।
ভ্রূণ যাতে মাতৃগর্ভে নিরাপদে অবস্থান করে এবং নির্বিঘ্নে মাতৃজঠর থেকে ভূমিষ্ঠ হতে পারে তার জন্য ইসলাম নিরাপত্তার ব্যবস্থা প্রদান করেছে। প্রথমতঃ ¯্বামী-স্ত্রীকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন মিলনের পূর্বে চিরশত্রু শয়তানের অনিষ্টকারিতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করে নেয়। নচেৎ শয়তান সুযোগ পেলে সন্তানের ক্ষতিসাধন করে তাকে নিজের দলভুক্ত করে নেয়।
এমন বস্তু যা গর্ভস্থ ভ্রূণের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করে, ইসলাম তা ধক্ষংস করতে উৎসাহিত করেছে। রমযানের রোযা ফরয হওয়া সত্তেক্ষও গর্ভিণী ও দুগ্ধদায়িনীকে কাযা করার অনুমতি দিয়েছে। গর্ভিণীর উপর শরয়ী হদ্দ্ (ধর্মীয় দণ্ডবিধি) থাকলে প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তা প্রয়োগ করা হয় না।
কোন প্রকারে যে ভ্রূণের উপর অত্যাচার করে বা তার অনিষ্ট সাধন করে, ইসলাম তার বিরুদ্ধে শাস্তি ও জরিমানা নির্ধারিত করেছে।
শিশু প্রতিপালন
মায়ের শারীরিক ক্ষতি, বাৎসরিক সন্তান দানের ফলে ¯্বাস্থ্যহানি ইত্যাদি বড় বড় ক্ষতির হাত হতে রক্ষার জন্য একান্ত প্রয়োজনে জ›ম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ঔষধাদি ব্যবহার করা যায়। চূড়ান্ত প্রয়োজনে গর্ভের একেবারে শুরুতে (১২০ দিন পূর্বে পূর্বে) গর্ভপাতও করা যায়। কিন্তু একমাত্র বৃহৎ ক্ষতি বা মৃত্যুর আশঙ্কা ব্যতীত জ›ম নির্মূল (অপারেশন) করা যায় না এবং ভ্রূণে আকৃতি বা রূহ এসে গেলে আর নষ্ট করা যায় না।
উল্লেখ্য যে, সন্তান কম হলে আল্লাহর ইবাদত বেশী করতে পারা যাবে -এই উদ্দেশ্যে সন্তান বন্ধ করাও বৈধ নয়। বরং সন্তান ধারণ ও পালন করাই নারীর এক প্রকার ইবাদত।
প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার (সীজার) করে সন্তান উদ্ধার করা জরুরী। যেমন মৃত গর্ভিণীর পেট হতে জীবিত সন্তান বের করাও ওয়াজেব।
মুসলিম স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী কোন কিতাবিয়া (ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান) মহিলা চার মাস গর্ভ নিয়ে মারা গেলে তাকে কিতাবী (ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান)দের কবরস্থানে দাফন করা হবে। চার মাস পরে সন্তানসহ মারা গেলে তাকে মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা হবে। অন্যথা মুসলিমদের কবরস্থানে কোন কাফের বা মুশরিককে সমাধিস্থ করা বৈধ নয়। যেমন বৈধ নয় এর বিপরীত।
সন্তান মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হলে সে কারো ওয়ারিস হবে না এবং তারও কেউ ওয়ারিস হবে না। জ›েমর পর চিৎকার বা কোন শব্দ করে মারা গেলে সে ওয়ারিস হবে ও করবে।
গর্ভের ঊর্ধক্ষপক্ষ কোন নির্দিষ্ট সময়কাল নেই। ৪ বছর বা তারও অধিক হতে পারে। তবে নূন্যপক্ষে এর সময়সীমা হল ৬ মাস। কারণ সন্তানের গর্ভধারণ ও দুগ্ধদানের মোট সময়কাল হল ৩০ মাস। (সূরা আহকক্ষাফ ১৫ আয়াত) আর মায়ের দুধ পান করাবার নির্দিষ্ট সময় হল দু’ বছর। (সূরা বাকক্ষারাহ ২৩৩, সূরা লুকমান ১৪ আয়াত) অতএব ৩০ মাস হতে দু’ বছর (২৪ মাস) বিয়োগ করলে ৬ মাস গর্ভের সর্বনিম্ন সময় অবশিষ্ট থাকে।
শিশু প্রতিপালন
সুতরাং যদি মিলনের ঠিক ৬ মাস পরে কারো সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে স্ত্রীর উপর সন্দেহ করা উচিত নয়। অবশ্য ৬ মাসের পূর্বে হলে সন্দেহের কথা বটে।
শিশু মায়ের পেটে ৪ মাস বা ততোধিক পরে ভ্রূণ অবস্থায় মরা ভূমিষ্ঠ হলেও তার গোসল দিয়ে কাফন পরিয়ে জানাযা পড়ে দাফন করা বিধেয়। তার পূর্বে নয়।
বৈজ্ঞানিক কারণ ছাড়া সঙ্গমের আসন ও সময়ের সাথে সন্তানের পূর্ণাঙ্গতা বা বিকলাঙ্গতার কোন সম্পর্ক নেই। অতএব অমাবশ্যা বা পূর্ণিমায় সঙ্গম করলে সেই সঙ্গমের জ›িমত শিশু এরূপ হয়, ভরা পেটে করলে ঐরূপ হয়, কথা বলতে বলতে করলে অমুক হয় -এসব ধারণা সঠিক নয়।
সন্তান ছেলেই হোক অথবা মেয়ে, উভয়ই চক্ষুশীতলকারী বস্তু। সন্তানের সংবাদ সুসংবাদ, তার আগমন শুভ ও খুশীর বিষয়। চিরশত্রু শয়তানের অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয় নবজাত শিশুর জন্য। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই শয়তান শিশুকে স্পর্শ করে। যার কারণে শিশু চিৎকার করে ওঠে।
নবজাত শিশুর জন্য বরকতের দুআ দেওয়া উচিত, যাতে সে বড় হয়ে সুপথে চলে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে ইহলোক ত্যাগ করে পরলোকে চিরসুখী হতে পারে।
(ছেলে হোক অথবা মেয়ে) শিশুর আগমনের অব্যবহিত পরে, (পরিক্ককার করার পর) তার কর্ণকুহরে সর্বপ্রথম মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর তকবীর-ধক্ষনি আযান পৌঁছে দিতে হয়. অবশ্য বাম কানে ইকামত দেওয়ার কথা সঠিক নয়.
আঁতুড় ঘরে লোহা, মুড়ো ঝাঁটা, মই, জালের কাঠি প্রভৃতি রেখে কোন মঙ্গল কামনা অথবা অমঙ্গল দূর করার আশা করা শির্ক।
যেমন বদনজর, দুধতোলা প্রভৃতি থেকে বাঁচাবার জন্য তাবীয ব্যবহার করা পাশ-কপালে ফোটা দেওয়া ইত্যাদি শির্ক।
শিশু প্রতিপালন
সন্তানের বংশ
বংশ-মর্যাদা ও কুলীনতা এক পার্থিব ইজ্জত। এই বংশীয় সম্পর্ক কেবলমাত্র পিতার প্রতি যুক্ত করা হবে। জেনে-শুনে অন্য পিতার প্রতি নিজেকে সম্পৃক্ত করা কুফরী। কেউ যদি নিজের বাপ ছেড়ে পরের বাপকে বাপ বলে, তাহলে তার উপর কিয়ামত পর্যন্ত অনন্তর অভিশাপ বর্ষণ হতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতও হারাম হয়ে যায়।
পালিত পুত্র (অনুরূপভাবে মুখে পাতানো ভাই-বোন ইত্যাদি)কে মুখে ছেলে (বা ভাই-বোন) বললে এবং অন্তরে ছেলে (বা ভাই-বোন) জানলেও সে আসলে ছেলে (বা ভাই-বোন) হয় না। পালিত পুত্র পালয়িত্রী মায়ের পক্ষে এগানা ( ) হয় না। যেমন পালিতা কন্যার পক্ষে পালয়িতা পিতা বেগানাই থাকে। অর্থাৎ তাদের আপোসে বিবাহ বৈধ এবং পর্দা ওয়াজেব। অবশ্য অন্য দিক থেকে এগানা হলে, সে কথা ভিন্ন।
মহান আল্লাহ বলেন,
{وَمَا جَعَلَ أَدْعِيَاءَكُمْ أَبْنَاءَكُمْ ذَلِكُمْ قَوْلُكُمْ بِأَفْوَاهِكُمْ وَاللهُ يَقُولُ الْحَقَّ وَهُوَ يَهْدِي السَّبِيلَ- ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِنْدَ اللهِ فَإِنْ لَمْ تَعْلَمُوا آبَاءَهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَمَوَالِيكُمْ}
“পোষ্যপুত্র যাদেরকে তোমরা পুত্র বল, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি; এগুলি তোমাদের মুখের কথামাত্র। সত্য কথা আল্লাহই বলেন এবং তিনিই সরল পথ নির্দেশ করেন। তোমরা ওদের পিতৃ-পরিচয় দিয়ে ওদেরকে ডাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে এটিই ন্যায়সঙ্গত; যদি তোমরা ওদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে ওদেরকে তোমরা ধর্মীয় ভ্রাতা এবং বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে।—” (সূরা আহযাব ৪-৫ আয়াত)
বংশ, স্তন-দুগ্ধ ও বিবাহ ছাড়া অন্য কোন সম্পর্কের আত্মীয়তায় পিতা-মাতা, ভ্রাতা-ভগিনী ও এগানা-বেগানা প্রমাণিত হয় না। যেমন পোষ্যপুত্র পালয়িতার ওয়ারেস হয় না।
শিশু প্রতিপালন
জ্ঞাতব্য যে, স্নেহাদরে অপরের ছেলেকে ‘বেটা’ বলে ডাকা দূষণীয় নয়।
কোন পত্নী যদি পতির সংসারে থেকে কোন উপপতির সাথে ব্যভিচার করে অবৈধ সন্তান জ›ম দেয়, তবুও তা তার আপন পতির বলেই গণ্য হবে। সন্তান জারজ হলেও সেই তার পিতা হবে এবং এক অপরের ওয়ারেস হবে। ব্যভিচারী উপপতি সন্তানের দাবী করলে এবং ব্যভিচার করার কথা ¯্বীকার করলে অথবা প্রমাণ হলে ইসলামী রাষ্টেগ্দ ঐ স্ত্রী সহ তাকেও (বিবাহিত হলে) পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হবে।
যদি কোন স্বামীর আয্ল (সঙ্গমে যোনীপথের বাইরে বীর্যপাত) করে অথবা স্ত্রী জ›ম-নিয়ন্ত্রক ঔষধ বা কণ্ডম ব্যবহার করে অথবা স্বামী-স্ত্রীর কেউ জন্মরোধক অস্ত্রোপচার করে থাকে, আর তা সত্তেক্ষও স্ত্রী গর্ভবতী হয়, তাহলে তাতে স্বামীর সন্দেহ হওয়া উচিত নয়। কারণ এসব সত্তেক্ষও কোন ত্রুটি হেতু গর্ভ-সঞ্চার হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া আল্লাহর তকদীর ও কুদরত এসব প্রতিরোধ অপেক্ষা বহুগুণ শক্তিশালী; যা কারো রোধ করার ক্ষমতা নেই। অতএব সেই সন্তানকে স্বামী নিজের ঔরসজাত বলেই গ্রহণ ও মান্য করতে বাধ্য হবে। অবশ্য ব্যভিচার ও স্বামীর জন্ম নিরোধ-প্রক্রিয়ায় ত্রুটিহীনতা প্রমাণিত হলে ভিন্ন কথা।
কিয়াফা অথবা রক্তপরীক্ষা দ্বারা বংশ-সূত্র প্রমাণ করা যায়।
জেনে রাখা ভালো যে, নিছক সন্দেহবশে স্ত্রীকে দ্বিচারিণী ভেবে দাম্পত্যে কলহ ও অশান্তি আনা উচিত নয়। বিনা সাক্ষি-সবুতে স্ত্রীর উপর অপবাদ দিলে ¯্বামী ৮০ চাবুক খাওয়ার শাস্তিযোগ্য অপরাধী হবে।
পক্ষান্তরে নিজের ঔরসজাত সন্তান অস্বীকার করা অথবা কোন ভিন্ন বংশের প্রতি নিজের সম্পর্ক দাবী করা কুফরী কাজ।
শিশু প্রতিপালন
যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান তার নয় বলে অ¯্বীকার করে এবং স্ত্রীও ব্যভিচারের কথা অ¯্বীকার করে, পরন্তু কোন সাক্ষি-সবুত না পাওয়া যায়, তাহলে এ পরিস্থিতিতে ‘লিআন’ করতে হবে।
প্রথমে স্বামী আল্লাহর নামে কসম করে ৪ বার বলবে যে, ‘(আমার স্ত্রী ব্যভিচারিণী, আর এ কথায়) আমি অবশ্যই সত্যবাদী।’ অতঃপর পঞ্চমবারে বলবে যে, ‘আমি মিথ্যাবাদী হলে আমার উপর আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসবে।’
অনুরূপভাবে স্ত্রীও ৪ বার আল্লাহর নামে কসম করে সাক্ষ্য দেবে যে, তার ¯্বামীই মিথ্যাবাদী এবং সে তার উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করছে। অতঃপর পঞ্চমবারে বলবে যে, ‘আমার ¯্বামী সত্যবাদী হলে (এবং আমি ব্যভিচারিণী হলে) আমার উপর আল্লাহর গযব নেমে আসবে।’ (সূরা নূর ৬-৯ )
পক্ষান্তরে স্ত্রী তার অপরাধ ¯্বীকার করে নিলে তার উপর ব্যভিচারের দণ্ডবিধি কার্যকর করা হবে। নচেৎ এই কসম ও লিআনের পর ¯্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। সন্তান হবে মায়ের। মায়ের বংশই হবে সন্তানের বংশ।
দুগ্ধপান
{وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ لا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا لا تُضَارَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلا مَوْلُودٌ لَهُ بِوَلَدِهِ وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذَلِكَ فَإِنْ أَرَادَا فِصَالاً عَنْ تَرَاضٍ مِنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا وَإِنْ أَرَدْتُمْ أَنْ تَسْتَرْضِعُوا أَوْلادَكُمْ فَلا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُمْ مَا آتَيْتُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ}
“জননীগণ সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে -যদি কেউ দুধ পান করার সময় পূর্ণ করতে চায়। জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা। কাউকে তার সাধ্যাতীত কার্যভার দেওয়া হয় না। কোন জননীকে তার সন্তানের জন্য এবং কোন পিতাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না। অনুরূপ বিধান উত্তরাধিকারিগণেরও। আর যদি পিতামাতা পরস্পর সম্মতি ও পরামর্শক্রমে দু’বছরের মধ্যেই (শিশুর) দুধ পান ছাড়াতে চায়, তবে তাদের কোন দোষ হবে না।
শিশু প্রতিপালন
আর যদি তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে (জননী ছাড়া) কোন ধাত্রীর দুধ পান করাতে চাও, তাতেও তোমাদের কোন দোষ হবে না; যদি তোমরা তাদেরকে নির্ধারিত প্রদেয় বিধিমত অর্পণ কর। আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, তোমরা যা কর আল্লাহ তার দ্রষ্টা।” (সূরা বাকক্ষারাহ ২৩৩)
মায়ের স্তনে দুধ থাকা সত্তেক্ষও কোন ধাত্রীর দুধ অথবা কোন বেবী-মিল্ক্ খাওয়ানো দূষণীয় নয়। তবে মায়ের দুধই শিশুর ¯্বাস্থের জন্য বড় উপকারী; যার কোন বিক্লপ নেই।
দুগ্ধদায়িনী স্ত্রীর সাথে সহবাসে কোন প্রকার ক্ষতি নেই।
বংশীয়ভাবে যেমন পুরুষের সাথে তার নিজের মা, বোন, খালা, ফুফু প্রভৃতির বিবাহ এবং মহিলার সাথে তার বাপ, ভাই, চাচা, মামা প্রভৃতির বিবাহ হারাম, ঠিক তেমনিই দুগ্ধ-সম্পর্কে দুধ ছেলের সাথে তার দুধ-মা, দুধ-বোন, দুধ-খালা, দুধ-ফুফু প্রভৃতির বিবাহ এবং দুধ-মেয়ের সাথে তার দুধ-বাপ, দুধ-ভাই, দুধ-চাচা, দুধ-মামা প্রভৃতির বিবাহ হারাম।
জ্ঞাতব্য যে, দুধ-মায়ের জন্য দুধ-ছেলের সামনে পর্দা নেই। কিন্তু ঐ দুধ-ছেলের সহোদর ভাই, যে ঐ মায়ের দুধ পান করেনি, তার সামনে পর্দা ওয়াজেব। দুধ-ভায়ের জন্য তার দুধ-বোন চিরতরে অবৈধ; আপোসের বিবাহ বৈধ নয়। কিন্তু ঐ দুধ-ভায়ের অন্য সহোদর ভায়ের পক্ষে ঐ বোন হারাম নয়। তাদের আপোসে বিবাহ বৈধ এবং পর্দা ওয়াজেব।
এক মায়ের ছেলে এবং অপর এক মায়ের মেয়ে যদি একই দাই-মায়ের দুধ পান করে থাকে, তাহলে তারা উভয়ে ভাই-বোন। তাদের আপোসে বিবাহ অবৈধ এবং পর্দা নেই। পক্ষান্তরে ওদের অন্যান্য ভাই-বোনদের ক্ষেত্রে সে সম্পর্ক কার্যকর হবে না।
কিন্তু কখন কি পরিমাণে দুধ পান করলে ‘মা’ প্রতিপন্ন হবে? দুধ পান করার নির্ধারিত সময় দু’বছরের ভিতরে (দুধ মুখে নিয়ে চুষে ছাড়া পর্যন্ত একবার এবং এইভাবে) ৫ বার পান করলে ‘মা-বেটা’ সম্পর্ক কায়েম হয়ে যাবে। শিশুর দুই বছর বয়স হওয়ার পর দুধ পান করলে অথবা ৫ বারের কম দুধ পান করলে সে সম্পর্ক কায়েম হয় না এবং তাতে বিবাহও অবৈধ হয় না।
শিশু প্রতিপালন
অনেকের মতে, কোন মহিলার পক্ষে যদি কোন যুবক ছেলে থেকে পর্দা করা একান্তই দুক্ককর হয়ে পড়ে (যেমন, কোন এতীম ছেলে প্রতিপালন করার ক্ষেত্রে তাকে পৃথক করা সম্ভব না হয়) তাহলে এমন পরিস্থিতিতে তাকে ঐ মহিলা বাটিতে নিয়ে ৫ বার দুধ পান করালে তার ‘মা’ সাব্যস্ত হয়ে যাবে এবং পর্দা জরুরী হবে না। আর এ ব্যাপারটি হল ব্যতিক্রম।
নামকরণ
পরিচিতির জন্য প্রত্যেক বস্তুরই কোন না কোন নাম থাকে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার পরিচিতির জন্যও নাম রাখা বিধেয়। জ›মদিনে বা আকীকার (সপ্তম) দিনেও নাম রাখা যায়। নাম রাখার জন্য অনুষ্ঠান আকীকা নয়। যেমন কেবল নামকরণের জন্য কোন অনুষ্ঠান ইসলামে নেই।
শিশুর (ছেলের) জন্য সবচেয়ে উত্তম ও প্রিয় নাম আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান এবং সেই নাম, যে নাম আল্লাহর নামের পূর্বে আব্দ, উবাইদ বা গোলাম (সল্ডন্ধ) জুড়ে অথবা শেষে বখ্শ জুড়ে রাখা হয়। যেমন, আব্দুর রহীম, উবাইদুল হক, গোলাম কাদের, করীম বখ্শ ইত্যাদি। অতঃপর আল্ডিয়াগণের নাম, সাহাবাবর্গের নাম বেছে নাম রাখা উত্তম। শিশু কন্যার ক্ষেত্রে সাহাবী মহিলাদের নাম বেছে নিয়ে রাখা উত্তম। অতঃপর সেই নাম রাখা উত্তম, যে নামের অর্থ সুন্দর ও শুভ।
নামের সাথে ধর্মের পরিচিতির জন্য নাম রাখাতে বিধর্মীদের অনুকরণ বৈধ নয়। যেহেতু ইসলাম ধর্মের মূল ভাষা আরবী। তাই ঐ ভাষাতেই অধিক নাম রাখা হয়। অতঃপর ফারসী ভাষাতেও নাম রাখা হয়। অন্যান্য ভাষাতেও রাখা যায়। তবে অন্যান্য ধর্মের অনুকরণ করে বিজাতির সাথে একাকার হওয়ার আশঙ্কায় তা উচিত নয়।

শিশু প্রতিপালন
Reviews
There are no reviews yet.