যে দোয়া কবুল হবেই
মূল : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল মুহসিন আল-বাদ্র অনুবাদ : মুহাম্মাদ ইমরান বিন ইদরীস সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী প্রথম প্রকাশ : আগস্ট ২০২২, মুহাররম ১৪৪৪ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৯৬ পরিবেশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স প্রকাশনায় : দারুল কারার পাবলিকেশন্স

যে দুআ কবুল হবেই
ভূমিকা
যে দোয়া কবুল হবেই
সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। শ্রেষ্ঠ নবী ও সর্বশেষ রাসুল আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উপর, তার পরিবারবর্গের উপর এবং তার সকল সাহাবীদের উপর দরুদ ও শান্তির অজস্র ধারা বর্ষিত হোক।
আল্লাহ তায়ালা তার কিতাবের অনেক আয়াতে তাঁর বান্দাদেরকে দোয়া করতে বলেছেন এবং তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেবেন বলে ওয়াদাও করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ে যারা অহংকারবশে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সূরা মু‘মিন ৬০)
আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ নিশ্চয়ে আমার রব দোয়া শ্রবণকারী। (সুরা ইব্রাহিম ১৪ : ৩৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয়ে আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে। (সুরা বাকারাহ 2 : ১৮৬)
যে দোয়া কবুল হবেই
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা বিনিতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক। নিশ্চয়ে তিনি সীমালংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আর যমীনে শান্তি স্থাপনের পর তোমরা সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। আর আল্লাহ্কে ভয় ও আশার সাথে ডাক। নিশ্চয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ মুহসিনদের খুব নিকটে। (সুরা আ‘রাফ 5 : ৫৫, ৫৬) যে দোয়া কবুল হবেই
এরকম অর্থে আল-কুরআনুল কারিমে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। যে দোয়া কবুল হবেই
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে দোয়া করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন এবং আগ্রহী করে তুলেছেন যদিও তিনি তাদের ও তাদের দোয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে অমুখাপেক্ষী। যেমনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হাদীসে কুদসীতে বলেছেন, আবু যার্র (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সা.) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ওহে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার উপর অত্যাচারকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর অত্যাচার করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে দিশেহারা, তবে আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। যে দোয়া কবুল হবেই
তোমরা আমার কাছে হিদায়াত প্রার্থনা করো আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত, তবে আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে আহার্য চাও, আমি তোমাদের আহার করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন, কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই সে ব্যতীত। অতএব তোমরা আমার কাছে পরিধেয় চাও, আমি তোমাদের পরিধান করাব। যে দোয়া কবুল হবেই
হে আমার বান্দারা! তোমরা রাতদিন অপরাধ করে থাকো। আর আমিই সব অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে মাগফিরাত প্রার্থনা করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব। যে দোয়া কবুল হবেই
হে আমার বান্দারা! তোমরা কখনো আমার অনিষ্ট করতে পারবে না, যাতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হই এবং তোমরা কখনো আমার উপকার করতে পারবে না, যাতে আমি উপকৃত হই। যে দোয়া কবুল হবেই
হে আমার বান্দারা! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের মানুষ ও জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচাইতে বেশি ভয় পায়ে, তোমরা সবাই যদি তার মতো হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব একটুও বৃদ্ধি পাবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের সকল মানুষ ও সকল জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর সবচাইতে পাপিষ্ঠ তোমরা সবাই যদি তার মতো হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে না। যে দোয়া কবুল হবেই
হে আমার বান্দা! তোমাদের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন যদি কোন বিশাল মাঠে দাঁড়িয়ে সবাই আমার কাছে আবদার করে আর আমি প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করি তাহলে আমার কাছে যা আছে তাতে এর চাইতে বেশি হ্রাস পাবে না, যেমন কেউ সমুদ্রে একটি সূঁচ ডুবিয়ে দিলে যতটুকু তা থেকে হ্রাস পায়ে। হে আমার বান্দারা। আমি তোমাদের ‘আমলই তোমাদের জন্য সংরক্ষিত রাখি। এরপর পুরোপুরিভাবে তার বিনিময়ে প্রদান করে থাকি। যে দোয়া কবুল হবেই
সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কল্যাণ অর্জন করে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে তা ব্যতীত অন্য কিছু পায়, সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে। (সহীহ মুসলিম-২৫৭৭) যে দোয়া কবুল হবেই
এতো কিছু সত্বেও বান্দারা যেন তার নিকটে চায় এটা তিনি পছন্দ করেন। দোয়া করার প্রতি একজন বান্দা যত বেশি গুরুত্ব দেবে, সে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসাও তত বেশি পাবে। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ تَعَالَى مِنَ الدُّعَاءِ“.
আল্লাহর নিকট দোয়ার চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ কোন কিছু নেই। (তিরমিজি-৩৩৭০, আলবানী তার সহীহুল জামে (5392) গ্রন্থে একে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন।) যে দোয়া কবুল হবেই
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, “ إِنَّهُ مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ ”যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট চায় না, আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত হন। (তিরমিজি-৩৩৭৩, আলবানী তার সহীহুল জামে (2418) গ্রন্থে একে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন।) যে দোয়া কবুল হবেই
اَللهُ يَغْضَبُ إِنْ تَرَكْتَ سُؤَالَهُ… وَبُنَيَّ أَدَمُ حِيْنَ يُسْأَلُ يَغْضَبُ…
আল্লাহর নিকট না চাইলে তিনি রাগ করেন আর বনী আদম তথা মানুষের নিকট যখন কোন কিছু চাওয়া হলে সে রাগ করে। (শুআবুল ঈমান 1100) যে দোয়া কবুল হবেই
সুতরাং বিশ্বজগতের প্রতিপালক তাঁর নিকট প্রার্থনা কারীদেরকে কতই না ভালোবাসেন এবং তিনি তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদের ডাকে সাড়া দেবেন, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বস্তু প্রদান করবেন। যখন তাদের দোয়ার মাঝে শরয়ী শর্তসমূহ পাওয়া যাবে এবং দোয়া কবুলের বাধা ও প্রতিবন্ধক গুলি দুরীভূত হবে।
আল্লাহর কিতাব কুরআনে ও এবং সুন্নাতে রাসূল হাদীসে অসংখ্য দলীল রয়েছে যেগুলো প্রমাণ করে যে, মুস্তাজাব দোয়া অর্থাৎ যে দোয়া অবশ্যই কবুল হবে-এর জন্য বেশ কিছু মুলনীতি রয়েছে। দোয়া করার সময়ে এ সমস্ত মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রাখা দোয়াকারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। আর কিছু আছে প্রতিবন্ধক যেগুলো থেকে সতর্ক থাকাও জরুরী, যাতে তার দোয়াকে ফিরিয়ে দেয়া না হয় এবং প্রত্যাখ্যান না করা হয়।
আল্লাহকে ডাকার ক্ষেত্রে আহ্বানকারীর পক্ষে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি সেসব বিষয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ে ইবনুল কাইয়ূম (রহ.) একটি চমৎকার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছেন যা খুবই কল্যাণকর ও উপকারী। অতঃপর তিনি দোয়ার ক্ষেত্রে এই মূলনীতি বর্ণনা করে যে কথার দ্বারা তার আলোচনা শেষ করেছেন, তা হচ্ছে :
فَإِنَّ هٰذَا الدُّعُاءَ لَا يَكَادُ يُرَدُّ أَبَدًا
এই (মূলনীতিসমূহ মেনে) প্রার্থনাকৃত দোয়া কখনোই ফিরে দেওয়া হয়ে না। (আল-জাওয়াবুল কাফী ১৭)
তার আলোচনা ছিল নসীহত ও কল্যাণে ভরপুর। তার কথাগুলোর তালীক ও ব্যাখ্যাসহ প্রচার-প্রসার করা প্রয়োজন যেন সেসবের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং তার ব্যাপক উপকারীতা আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে যায়। তাই শুরু থেকেই তাঁর কথাগুলিকে পূর্ণাঙ্গভাবে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
ইমাম ইবনুল কাইয়ূম (রহ.) বলেন, যখন দোয়া করার সাথে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ একত্রিত হবে∑
১. যা চাওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে মন স্থির রাখা এবং যাবতীয় মনোযোগ তাতেই নিবদ্ধ করা।
২. দোয়া কবুলের ছয়টি সময়ের কোন একটি সময়ের সঙ্গে মিল রেখে দোয়া করা।
সেগুলো হলো যে দোয়া কবুল হবেই
(ক) রাতের শেষ তৃতীয়াংশ,
(খ) আযানের সময়,
(গ) আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়,
(ঘ) ফরজ সালাতের শেষ অংশ,
(ঙ) জুমু‘আর দিন ইমাম মিম্বারে ওঠা সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত,
(চ) আসরের সর্বশেষ সময়।
৩. অন্তরে একাগ্রতা নিয়ে আসা, প্রভুর সামনে নিজেকে পূর্ণরূপে সঁপে দেয়া, তার প্রতি নত হওয়া, তার অনুগত হওয়া, বিনয়ী ও নম্র হওয়া।
৪. দোয়াকারী কেবলামুখী হবে।
৫. দোয়া করার সময় পবিত্র অবস্থায় থাকবে।
৬. আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে দোয়া করবে।
৭. দোয়া করার পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করবে অতঃপর তার নাবী মুহাম্মাদ (সা.) এর উপর দরূপ পড়ে দোয়া করা শুরু করবে।
৮. দোয়া করার পূর্বে তাওবা এবং ইস্তেগফার করবে।
৯. মনে-প্রাণে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া, দোয়া করার সময় তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং কাকুতি-মিনতি ও তোষামোদ করা।
১১. আল্লাহকে ভয় করবে এবং মনে আশা নিয়ে ডাকবে।
১২. আল্লাহর তা‘আলার নাম, গুণাবলী ও তার তাওহীদের ওসীলা করবে।
১৩. দোয়া করার পূর্বেই কিছু দান-সাদাকা করবে।
এই ১৩টি বিষয় যদি দোয়ার মাঝে থাকে তাহলে এই দোয়া কখনোই ফিরিয়ে দেয়া হবে না, বিশেষ করে যে দোয়াগুলো কবুল হওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) সংবাদ দিয়েছেন এবং যে দোয়াগুলোর শব্দে ইসমে আযম থাকে। (আল-জাওয়াবুল কাফী ১৬-১৭ পৃষ্ঠা)
দোয়া কবুলের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ
[১]
যা চাওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে মন স্থির রাখা এবং যাবতীয় মনোযোগ তাতেই নিবদ্ধ করা
প্রথম বিষয়ে হলো মুসলিম ব্যক্তি উপস্থিত ও জাগ্রত অন্তর নিয়ে দোয়া করবে। জাগ্রত অন্তর বলতে অন্তরকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করা। অন্তরকে উদাসীন, অমনোযোগী রেখে শুধুমাত্র জিহ্বা নাড়াচাড়া করার মাধ্যমে দোয়া হয় না। বরং দোয়া করার সময়ে অন্তরকে জাগ্রত রেখে পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বা নাড়াতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন.
“ادْعُوا اللهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالْإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ لاَ يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لاَهٍ”
আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দুআ করো। তোমরা জেনে রাখো যে, আল্লাহ তা‘আলা নিশ্চয় অমনোযোগী ও অসাড়-নিস্তেজ মনের দুআ কবুল করেন না। (তিরমিজি-৩৪৭৯, আলবানী তার সিলসিলা সহীহায় (৫৬৪) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।)
দোয়াতে অন্তরের উপস্থিতি না থাকার নিদর্শন হলো, দোয়ার সময়ে বেশি বেশি নড়াচড়া করা এবং অন্য বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া। তুমি দেখবে, দোয়া করার সময়ে তোমার জিহ্বা নাড়াচাড়া করছে, কিন্তু তোমার হাত মাটি, কাপড় অথবা অন্য কিছু নিয়ে খেলা করছে অথবা দোয়ার সময়ে তোমার দৃষ্টি ডানে-বামে ঘোরাফেরা করছে। আল্লাহকে আহ্বান করার সময়ে অন্তর দাবিকৃত বিষয়ের সঙ্গে মনোযোগী হয় না।
এই কারণেই ওমর বিন আব্দুল আজিজ যখন একজন ব্যক্তিকে আল্লাহকে ডাকা সময় হাতে পাথর নিয়ে খেলতে দেখলেন, তখন তিনি তাকে বললেন,
أَلَا أَلْقَيْتَ الْحَصَاةَ وَأَخْلَصْتَ إِلَى اللهِ الدُّعَاءَ؟!…
তুমি পাথর ফেলে দিয়ে আল্লাহর নিকটে কি একনিষ্ঠভাবে দোয়া করবে না?!… (আবূ নুআঈম তাঁর হিলইয়াতুল আউলিয়ায় (৫/২৮৭) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সে সময়ের পাথরের পরিবর্তে নতুন আঙ্গিকের পাথর (মোবাইল ফোন) সর্বদাই মানুষের হাতে দেখা যায়, যা খেল-তামাশার চেয়েও তার অন্তরকে অধিক মাত্রায় ব্যতিব্যস্ত রাখছে। এ কারণে তারা কোনোভাবেই সুন্দরভাবে দোয়া করতে, তাতে বিনয়াবনত হতে এবং প্রার্থনা করতে পারে না। এসব লোকের ক্ষেত্রে এ কথার চেয়ে অধিক উপযুক্ত কথা আর কী হতে পারে যে,
أَلَا أَغْلَقْتَ الجَوَّالَ وَأَخْلَصْتَ لِلّٰهِ السُّؤَالَ؟!
তুমি কি মোবাইল ফোন বন্ধ করে আল্লাহর নিকটে একনিষ্ঠভাবে দোয়া করবে না?! যে দোয়া কবুল হবেই
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ডেকে তার সাড়া পেতে চায়ে তার জন্য সর্বপ্রথম করণীয় হলো, দোয়া করার সময়ে সে তার অন্তরকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করবে। প্রয়োজনীয় ও উদ্দিষ্ট বিষয় চাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাণপনে সমস্ত ধ্যান-ধারণা ও তার চিন্তা-ভাবনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে চেষ্টা করবে। যে আকাঙ্ক্ষা ও যে বিষয়কে উদ্দেশ্য করে সে তার রবের নিকট দোয়া করছে সেটা ছাড়া অন্যকিছুই যেন তাকে ব্যস্ত না রাখে। কেননা সে যখন অমনোযোগী হয় তখন তার অন্তরও এদিক-সেদিক ছুটে বেড়ায়। সুতরাং দোয়ার সময়ে অন্তরকে একনিষ্ঠ রাখা এবং দোয়ার মধ্যেই উপস্থিত রাখা একান্তই জরুরী। যে দোয়া কবুল হবেই
[২]
দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময় অনুসন্ধান করা
ইবনুল কাইয়ূম (রহ.) ছয়টি সময়কে দোয়া কবুলের সময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
(ক). রাতের শেষ তৃতীয়াংশ :
এই সময়কে দু্‘আ কবুল হওয়ার এবং বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া দেওয়ার সময়সমূহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। যে দোয়া কবুল হবেই
কেননা নবী কারীম (সা.) বলেন :
“يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ ”.
মহামহিম আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন : কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (সহীহ বুখারী ১১৪৫, সহীহ মুসলিম ৭৫৮)
এই হাদীস প্রমাণ করে যে, দোয়া কবুল হওয়ার সময়ের মধ্যে সবচেয়ে অধিক উপযুক্ত সময় হলো এই মহা বরকতময় সময়। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের জন্য উচিত হবে, সে এ কল্যাণকর সুযোগকে গণিমত মনে করবে এবং সমস্ত আগ্রহ দিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে যেন এই বরকতময় সময়ে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া একটি রাতও অতিবাহিত না হয়। যে দোয়া কবুল হবেই
(খ). আযানের সময় :
অর্থাৎ আযানের পরপরই। কেননা এটি দোয়া কবুল হওয়ার একটি মোক্ষম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। আগত তৃতীয়ে প্রকার অর্থাৎ আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দোয়া হওয়ার জন্য পৃথক একটি সময়। কেননা অসংখ্য দলীল প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি আযান শুনবে এবং মুয়াজ্জিনের প্রতিউত্তর দেবে, তারপরে সরাসরি আল্লাহর নিকটে কোন কিছু চাইবে তখন তার এই চাওয়াকে পূরণ করা হয়। যে দোয়া কবুল হবেই
কেননা হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رضي الله عنه، أَنَّ رَجُلاً، قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ الْمُؤَذِّنِينَ يَفْضُلُونَنَا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ g ”قُلْ كَمَا يَقُولُونَ فَإِذَا انْتَهَيْتَ فَسَلْ تُعْطَهْ”.
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! মুয়াজ্জিনরা তো আমাদের চেয়ে অধিক মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : মুয়াজ্জিনরা যেরূপ বলে থাকে তোমরাও সেরূপ বলবে। অতঃপর আযান শেষ হলে (আল্লাহর নিকট) দোয়া করবে। তখন তোমাকে তা-ই দেয়া হবে (তোমার দোয়া কবুল হবে)। (আবু দাউদ-৫২৪, সহীহ আবু দাউদ (538) এ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।)
হাদীস প্রমাণ করে যে, আযান শোনা এবং মুয়াজ্জিনের উত্তর দেওয়ার সাথে এই দোয়ার ফযীলতের সম্পর্ক রয়েছে। যে দোয়া কবুল হবেই
সুতরাং মুসলিমের জন্য উচিত হবে যে, যখনই সে আযান শুনবে, সাথে সাথে আযানের উত্তর দিবে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করবে, আল্লাহর কাছে নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর জন্য ওসীলা ও মর্যাদা চাইবে তখন সে যেন চুপ করে থাকে এবং থেমে না যায়, বরং এগুলোর পাশাপাশি তার যা ভালো লাগে এবং মনে চায় আল্লাহর নিকট দোয়া করে। কেননা এ সময়টা দোয়া কবুলের জন্য অধিক উপযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়।
(গ). আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় :
কোনো রকম শর্ত ছাড়াই আযান ও ইকামতের মাঝে দোয়া করার ফযীলত সম্পর্কে অনেকগুলি দলীল বর্ণিত হয়েছে। যেমন যে দোয়া কবুল হবেই
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ g : “اَلدُّعَاءُ لَا يُرَدُّ بَيْنَ الْأَذَانِ وَالْإِقَامَةِ”.
আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয়ে না। (আবূ দাঊদ ৫২১, তিরমিজি-২১২, আলবানী তার ইরওয়াউল গালীলে হাদীসটি সহীহ বলেছেন, নং 224) যে দোয়া কবুল হবেই
عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه ، أَنَّ النَّبِيَّ g قَالَ : إِذَا نُوْدِي بِالصَّلَاةِ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَاسْتُجِيْبَ الدُّعَاءُ”.
নবী (সা.) বলেন যখন সালাতের আযান দেওয়া হয়ে তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলে যায়ে। এবং দোয়া কবুল করা হয়ে। (মুসনাদ তয়ালিসি-৫২৪, সিলসিলাহ সহীহায় (1413) আলবানী একে সহীহ বলেছেন।)
সুতরাং অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে, সে এই সময়ে নিজের জন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দোয়া করবে এবং তার নিকট থেকে বেশি বেশি ভাল ও কল্যাণ কামনা করবে। যে দোয়া কবুল হবেই
(ঘ). ফরজ সালাতের শেষ অংশ :
অর্থাৎ সালাম ফিরার পূর্বে : কেননা এই সময়টা দোয়া কবুলের অধিক উপযুক্ত, তাৎপর্যপূণ ও গুরুত্ববহ একটি সময়। কেননা এই সময়ে দোয়া কবুলের অনেকগুলি কউপকরণ একত্রিত হয়েছে। একজন মুসলিম তখন পবিত্র অবস্থায় থাকে, কেবলামুখী থাকে, আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব প্রকাশ করে, তার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে, আল্লাহর কালাম কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করে; অতঃপর ভয়, বিনয় ও নতস্বীকার করে সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর শানে রুকূ‘-সিজদা করে। যে দোয়া কবুল হবেই
অতঃপর এসব ফযীলতময় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করার পর যখন মুসল্লী তাশাহুদের জন্য বসে তখন সে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং আল্লাহর সম্মান ও মহত্ব প্রকাশ করে। এরপর সে তাওহীদ বাণী তথা একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয়; অতঃপর নাবী (সা.) উপর সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ দরূদ দরূদে ইব্রাহিম পাঠ করে।
এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলো যখন একত্রিত হয়েছে তখন তা ফরজ সালাতের শেষাংশটা দোয়াকারী মুসল্লীদের জন্য দোয়া কবুল হওয়ার সর্বাধিক এক মোক্ষম ও উপযুক্ত সময়ের রূপ দিয়েছে। এ কারণে হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ”ثُمَّ يَتَخَيَّرُ مِنْ الدُّعَاءِ أَعْجَبَهُ إِلَيْهِ فَيَدْعُو”.
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অতঃপর যে দোয়া তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং সেই দোয়া করবে। (সহীহ বুখারী-৮৩৫, মুসলিম ৪০২, হাদীসের শব্দ বুখারীর)

যে দুআ কবুল হবেই
Reviews
There are no reviews yet.