মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
লেখক: শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয়: ঈমান ও আকীদা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৭২
কভার: হার্ড কভার
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
আল্লাহর ৯৯টি নাম (আরবি: أسماء الله الحسنى) হলো ইসলাম ধর্ম মতে কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত আল্লাহ্র গুণবাচক নামের একটি তালিকা বা সংকলন।[১]
ইসলাম ধর্ম মতে বুনিয়াদি নাম বা ভিত্তি নাম একটিই। আর তা হলো আল্লাহ্, কিন্তু তার গুণবাচক নাম অনেকগুলো। বিভিন্ন হাদীস অনুসারে আল্লাহ’র ৯৯টি নামের একটি তালিকা আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিক ক্রম নেই। তাই সম্মিলিত মতৈক্যের ভিত্তিতে কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকাও নেই। তাছাড়া কুরআন এবং হাদিসের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ্’র সর্বমোট নামের সংখ্যা ৯৯-এর অধিক, প্রায় ৪,০০০। অধিকন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক বর্ণিত একটা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ্ তার কিছু নাম মানবজাতির অজ্ঞাত রেখেছেন।
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
প্রণয়নে
আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ইসলামী গবেষক, লেখক, মুহাক্কিক আলিম ও দাঈ
প্রকাশনায়
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ঢাকা-বাংলাদেশ
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
সূচীপত্র
- ভূমিকা
- মহান আল্লাহর নামাবলী সম্বন্ধে মৌলিক নীতিমালা
- আল্লাহর নামে মানুষের নাম
- মহান আল্লাহর গুণাবলী সম্বন্ধে মৌলিক নীতিমালা
- মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর দলীল বিষয়ক নীতিমালা
- মহান আল্লাহর কর্ম ও গুণাবলীর উপমা
- মহান আল্লাহর ‘ইস্মে আ’যম’
- মহান আল্লাহর নামাবলীর মাহাত¥্য
- মহান আল্লাহর সুন্দর নামাবলী (অর্থ ও ব্যাখ্যা সহ)
- অপ্রমাণিত নামাবলী
- আল্লাহর নামের তা’যীম
- মহান আল্লাহর সুউচ্চ গুণাবলী
- আল্লাহ সাকার না নিরাকার
- ভ্রান্তি অপনোদন
- পার্থিব জীবনে আল্লাহর দর্শন
- মহান আল্লাহকে কি ¯্বপ্নে দেখা যাবে?
- মহানবী স. কি তাঁকে মি’রাজের রাতে দেখেছিলেন?
- পরকালে মহান আল্লাহর দর্শন
- মহান আল্লাহর মন
- মহান আল্লাহর মুখমণ্ডল
- মহান আল্লাহর হাত
- মহান আল্লাহর পা
- মহান আল্লাহর চক্ষু
- মহান আল্লাহর শ্রবণশক্তি
- মহান আল্লাহ কোথায় আছেন?
- মহান আল্লাহর আরশ-কুরসী
- আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন
- মহান আল্লাহ আমাদের নিকটে
- মহান আল্লাহ নামাযীর সামনে
- মহান আল্লাহর জ্ঞান
- মহান আল্লাহর ক্ষমতা
- মহান আল্লাহর শক্তি
- মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা
- মহান আল্লাহর রুযীদান
- মহান আল্লাহর চাওয়া
- মহান আল্লাহর ইচ্ছা
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
- মহান আল্লাহর রহমত (দয়াশীলতা)
- মহান আল্লাহর ক্ষমাশীলতা
- মহান আল্লাহর ভালবাসা
- মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি
- মহান আল্লাহর রাগ ও ক্রোধ
- মহান আল্লাহর কষ্ট পাওয়া
- মহান আল্লাহর অপছন্দনীয়তা
- মহান আল্লাহর খুশী
- মহান আল্লাহর হাসি
- মহান আল্লাহর আশ্চর্যবোধ
- মহান আল্লাহর শোনা
- মহান আল্লাহর দেখা
- মহান আল্লাহর আসা
- মহান আল্লাহর দৌড়ে আসা
- মহান আল্লাহর অবতরণ
- মহান আল্লাহর কথা
- মহান আল্লাহর কৌশল, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র
- মহান আল্লাহর লজ্জাশীলতা
- মহান আল্লাহর ঈর্ষা বা আত¥মর্যাদা
- মহান আল্লাহর ধারণ করা
- মহান আল্লাহর ঘর
- মহান আল্লাহর লুঙ্গী ও চাদর
- মহান আল্লাহর নেতিবাচক গুণাবলী
- মহান আল্লাহ মানুষের অঙ্গ হন?
- আল্লাহর চাওয়া
- সিফাতে বিরোধীদের পদ্ধতি
- হে আল্লাহ!
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على أشرف المرسلين، نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. وبعد:
সাবালক মানুষের উপর সর্বপ্রথম যে জিনিস ফরয হয়, তা হল ইল্ম, অতঃপর আমল, অতঃপর প্রচার এবং এই তিনে সবর।
ইল্ম অনুসন্ধান করার ব্যাপারে কুরআন আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। মহান আল্লাহ বলেন,
{فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ}
অর্থাৎ, জানো, শেখো ও শিক্ষা কর যে, আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই।(সূরাহ মুহাম্মাদ ১৯ আয়াত)
কুরআন কারীমের প্রথম আদেশ ছিল ‘পড়’। কিন্তু কোন্ বিষয় দিয়ে পড়া শুরু করবেন? সর্বপ্রথম কোন্ বিষয় আপনার জানা ও পড়ার জন্য প্রাধান্য পাবে?
নিশ্চয় যে জিনিস আপনার কাছে সবচেয়ে বড়, তা-ই আপনার কাছে সর্বপ্রথম শিক্ষণীয় হওয়া দরকার। আপনি বিশ্বাস করেন, ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ সবার চেয়ে
বড়), অতএব আল্লাহ সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ আপনার কাছে সবার চেয়ে বেশী এবং সবার আগে প্রাধান্য পাওয়া প্রয়োজন।
‘আল্লাহ’ সম্বন্ধে জ্ঞান ঈমানের প্রথম রুক্ন। তাঁর নাম ও গুণাবলী সম্বন্ধে সঠিক ধারণা না হলে ঈমান সঠিক হয় না। আর ঈমান সঠিক না হলে হৃদয়ের জঞ্জাল দূর হয়
না। আর তা না হলে তো বিপদ বটেই। মহান আল্লাহ বলেন,
{يَوْمَ لا يَنْفَعُ مَالٌ وَلا بَنُونَ – إِلاَّ مَنْ أَتَى اللهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ}
অর্থাৎ, যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না; সেদিন উপকৃত হবে কেবল সেই; যে আল্লাহর নিকট সুস্থ অন্তঃকরণ নিয়ে উপস্থিত হবে।(সূরাহ
আশ্-শুআরা ৮৮-৮৯ আয়াত)
মহান আল্লাহ ঈমানদারগণকে ঈমান আনার আদেশ দিয়ে বলেন,
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ آمِنُواْ بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيَ أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا}
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা আল্লাহতে, তাঁর রসূলে, তিনি যে কিতাব তাঁর রসূলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তাতে এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন তাতে বিশ্বাস কর; আর যে কেউ আল্লাহ, তাঁর ফিরিশ্তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রসূলগণ এবং পরকালকে অবিশ্বাস করে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে সুদূরে চলে যায়।(সূরাহ আন্-নিসা ১৩৬ আয়াত)
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
আর তাঁর প্রতি ঈমান আনার মৌলিক বিষয় হল তাঁর সত্তা, নামাবলী, গুণাবলী ও কর্মাবলী সম্বন্ধে সঠিক বিশ্বাস রাখা।
এ পুস্তিকার অবতারণা এই গুরুত্বের কথা খেয়াল করেই। তাছাড়া যে জিনিসের মর্যাদা ও মাহাত¥্য যত বেশী জানা যাবে, তত তার কদর বৃদ্ধি পাবে, তার প্রতি ভক্তি ও আগ্রহ বর্ধিত হবে।
মহান আল্লাহর গুণাবলী সম্বন্ধে মুসলিম ওয়াকিফ-হাল হলে অবশ্যই তার ঈমান বৃদ্ধি পাবে, তাঁর প্রতি তার ভক্তি ও আগ্রহ, আশা ও ভরসা, ভয় ও মান্যতা বর্ধিত হবে। যে আল্লাহর আমরা ইবাদত করি, যাঁকে আমরা আপদে-বিপদে আহবান করি, সেই আল্লাহর মা’রিফাত বড় মধুর জিনিস। মালেক বিন দীনার বলেন, ‘দুনিয়াবাসীরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিল, অথচ তার মধ্যে সবচেয়ে ভাল জিনিসের ¯্বাদ ভক্ষণ করল না।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আবূ ইয়াহয়্যা! তা কি?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ আয্যা অজাল্লার মা’রিফাত।’ মহান আল্লাহ তাঁর সুন্দর নামাবলী ধরে ডেকে দুআ ও প্রার্থনা করতে আদেশ করেছেন এবং মহানবী (স) সুসংবাদ দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি তাঁর ৯৯টি নাম মুখস্থ রাখবে, সে বেহেশ্তে যাবে। মহান আল্লাহর নামাবলী অর্থসহ জানা থাকলে তার ফল ও পরিণাম বড় সুন্দর হয়। যেমন, ঈমানের মিষ্টতা পাওয়া যায়। আল্লাহর ইবাদতে বেশী মনোযোগ সৃষ্টি হয়।পদে পদে তাঁর জ্ঞান, দৃষ্টি ও আধিপত্যের কথা ¯মরণ হলে তাঁর প্রতি ভয়, ভক্তি, তা’যীম ও ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। পাপকাজে পা বাড়াতে লজ্জাবোধ হয়।
মহান আল্লাহর প্রতি সাক্ষাৎ-কামনা বাড়ে। তাঁর করুণা হতে নিরাশা দূর হয়। তাঁর প্রতি সুধারণা, ভরসা ও নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। মনের অহংকার ও ঔদ্ধত্য দূর হয়।
এ বই লেখার অন্য এক কারণ হল, এ বিষয়ে বই-পুস্তক কম, মুসলিমের চর্চাও কম। আর তফসীর ইত্যাদির নামে যা আছে, তার অধিকাংশ এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ অল-জামাআহর পরিপন্থী আকীদায় পরিপূর্ণ। উদাহরণ ¯্বরূপ :-
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
“আল্লাহ আরশে আরূঢ় আছেন” অর্থাৎ, কুদরতের সিংহাসনে আরূঢ় হইয়া আছেন।‘আরশ’ শব্দের শাব্দিক অর্থ ছাদবিশিষ্ট কিছু। সৃষ্টির ব্যাপার-বিষয়াদির পরিচালন-কেন্দ্রকে আল্লাহর ‘আরশ’ বলা হয়। (আরশ মানে) সিংহাসন—আকাশ ও পৃথিবী জুড়ে অবস্থিত, যা বিশ্বাসীদের অন্তরে অবস্থিত—।
বুখারী শরীফের হাদীসকে অগ্রাহ্য ক’রে মহান আল্লাহর পদনালী সম্পর্কে মওলানা আকরাম খাঁ সাহেব লিখেছেন, ‘এই পদের ব্যবহারিক তাৎপর্যের প্রতি লক্ষ্য না করিয়া এবং আরবী সাহিত্যের সর্ব্ববাদীসম্মত বাক্ধারাকে অগ্রাহ্য করিয়া, একদল লেখক উহার অর্থ করিয়াছেন :- “যেদিন আল্লাহর পায়ের পিণ্ডলিকাকে উ›মুক্ত করা হইবে।” কিন্তু ইয়া আরবী ভাষার একটা ইডিয়ম। কোনও গুরুতর পরিস্থিতি উপস্থিত হইলে আরবরা ঐ ইডিয়মটা ব্যবহার করিয়া থাকে।’ বলা বাহুল্য, সহীহ হাদীস অগ্রাহ্য ক’রে আক্কেল-ছুটানো বহু তফসীর তাঁর গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। অবশ্য তিনি তা আকলানী মযহাবধারী মু’তাযেলী, আশআরী ও জাহমী বিভিন্ন তফসীরকারদের নিকট থেকে নকল করেছেন।
উক্ত পদনালীর অর্থে ‘কঠিন সঙ্কট’-এর কথা শুধু তাঁর তফসীরেই নয়, বরং মওলানা মওদূদী, মুবারক করীম জওহর, ডঃ ওসমান গনী, আব্দুল মাতীন সালাফী প্রমুখ কর্তৃক অনূদিত ও সম্পাদিত কুরআন মাজীদেও ঐ একই কথা লিখা হয়েছে। আমাদের দেশের মাদ্রাসা কোর্সে যে ‘তফসীরে জালালাইন’ পড়ানো হয়, তাতেই মহান আল্লাহর গুণাবলীর অপব্যাখ্যা করার রোগ ঢুকে আছে।উদাহরণ ¯্বরূপ দেখুন :- মহান আল্লাহ বলেছেন, “তারা কি এরই প্রতীক্ষা করে যে, তাদের নিকট ফিরিশ্তা আসবে কিংবা তোমার প্রতিপালক আসবেন কিংবা তোমার প্রতিপালকের কিছু নিদর্শন আসবে?” (সূরাহ আল-আনআম ১৫৮ আয়াত)
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
তফসীরে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক আসবেন ঃ অর্থাৎ, তাঁর সেই নিদর্শন আসবে, যার দ্বারা কিয়ামত জানা যাবে।’ মহান আল্লাহ বলেছেন, “যখন তোমার প্রতিপালক আগমন করবেন আর সারিবদ্ধভাবে ফিরিশ্তাগণও (সমুপস্থিত হবে)।” (সূরাহ আল-ফাজ্র ২২ আয়াত)
তফসীরে বলা হয়েছে, ‘যখন তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ আগমন করবে আর সারিবদ্ধভাবে ফিরিশ্তাগণও (সমুপস্থিত হবে)।’ (উক্ত দুই জায়গায় মহান আল্লাহর ‘আগমন’কে অ¯্বীকার করা হয়েছে।) মহান আল্লাহ বলেছেন, “বল, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন।” (সূরাহ আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
তফসীরে বলা হয়েছে, ‘ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে সওয়াব দান করবেন।’ (এখানে মহান আল্লাহর ‘ভালবাসা’কে অ¯্বীকার করা হয়েছে।) মহান আল্লাহ বলেছেন, “তবে জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে ভালবাসেন না।” (ঐ ৩২)
তফসীরে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে শাস্তি দেবেন।’ (এখানে মহান আল্লাহর ‘ভাল না বাসা’ বা ‘গযব’কে অ¯্বীকার করা হয়েছে।) মহান আল্লাহ বলেছেন, “সৎবাক্য তাঁর দিকে আরোহণ করে।” (সূরাহ ফাত্বির ১০)
তফসীরে বলা হয়েছে, ‘সৎবাক্য তিনি জানেন।’মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা কি নিশ্চিত আছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন, তিনি তোমাদেরকে সহ ভূমিকে ধসিয়ে দেবেন না?” (ঐ ১৬ আয়াত)
তফসীরে বলা হয়েছে, ‘তোমরা কি নিশ্চিত আছ যে, আকাশে যাঁর আধিপত্য ও ক্ষমতা রয়েছে, তিনি তোমাদেরকে সহ ভূমিকে ধসিয়ে দেবেন না?’ (উক্ত দুই আয়াতে মহান আল্লাহর ‘ঊধের্ক্ষ আকাশে থাকা’কে অ¯্বীকার করা হয়েছে।)
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমার প্রতিপালক বললেন, ‘হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ দুই হাত দিয়ে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে তোমাকে কে বাধা দিল?” (সূরাহ স্ব-দ ৭৫ আয়াত)
তফসীরে বলা হয়েছে, ‘হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ তত্তক্ষাবধানে সৃষ্টি করেছি তাকে সিজদা করতে তোমাকে কে বাধা দিল?’ মহান আল্লাহ বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আকাশমণ্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে গুটানো।” (সূরাহ আয্-যুমার ৬৭ আয়াত)
তফসীরে বলা হয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাঁর কবজায় (মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে) থাকবে এবং আকাশমণ্ডলী থাকবে তাঁর কুদরতে একত্রিত।’মহান আল্লাহ বলেছেন, “মহা মহিমা›িবত তিনি সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর হাতে।” (সূরাহ আল-মুলক ১ আয়াত)
তফসীরে বলা হয়েছে, ‘মহা মহিমা›িবত তিনি সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর নিয়ন্ত্রণে।’ (এ সকল আয়াতে মহান আল্লাহর ‘হাত’কে অ¯্বীকার করা হয়েছে।) এ ছাড়া আরো বহু সিফাতের ‘তা’বীল’ বা অপব্যাখ্যা করা হয়েছে উক্ত তফসীর-গ্রন্থে এবং বাইযক্ষাবী ও কাশ্শাফ তফসীরেও, যা আমাদের দেশের আলেমগণ ছাত্র জীবন থেকেই রপ্ত ক’রে নেন। আর সেখান থেকে সমাজে সেই ‘আক্বীদা’ রাজ্য চালায়, যা আহলুস সুন্নাহ অল-জামাআতের নয়।
বড় দুঃখের বিষয় যে, বিভিন্ন তফসীর গ্রন্থ ছাড়াও হাদীসের ব্যাখ্যা-গ্রন্থও এই সিফাতের অপব্যাখ্যার কাজে কম অংশ নেয়নি। ইবনে হাজার, নওবী প্রমুখ ইমামগণও মহান আল্লাহকে পবিত্র ঘোষণা করতে গিয়ে সেই অপব্যাখ্যায় শামিল হয়ে গেছেন। আল্লাহ তাঁদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন।
তারই ফলশ্রুতি ¯্বরূপ মহান আল্লাহর হাত-পা-চোখ ইত্যাদি শুনে অনেকে বলেন, “আল্লাহ কি মানুষের মতো নাকি? আল্লাহ আল্লাহর মতো। কোন মাখলূকের সঙ্গে তিনি তুলিত নন। চোখ ছাড়াই তিনি দেখেন, কান ছাড়াই তিনি শোনেন।
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
আল্লাহর হাত আছে, আল্লাহর পা আছে, আল্লাহ জাহান্নামে পা রেখে জাহান্নামের পেট ভরাবেন, আল্লাহ আরশে সমাসীন হন, কুরসীতে পা রাখেন — এ সব মানবীয় গুণাবলীর কথা শুধু মানুষকে বুঝানোর জন্য। ছো’ শিশুকে কি এম এ ক্লাশের অঙ্ক বুঝানো যায়? তাকে অঙ্ক বুঝাতে হলে নেমে আসতে হবে তার বৌদ্ধিক ধারণ ক্ষমতার স্তরে। বলতে হবে, ‘একটা চকোলেটের সঙ্গে আর একটা চকোলেট দিলে দুটো চকোলেট হয়।’
আল্লাহর অসীম জ্ঞানের তুলনায় মানুষের জ্ঞান তো ‘ইল্লা ক্বালীল’, শিশুর মতোও নয়। তাই মানুষের বৌদ্ধিক সীমানার স্তরে নেমে এসে, — মানুষের অতি পরিচিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা উল্লেখপূর্বক — আল্লাহর হাত-পা- বসা-শোনা-দেখা ইত্যাদির কথা বলা!”
সুবহানাহ! মহান আল্লাহর গুণাবলী সম্বন্ধে এমন দুর্বল ঈমানের অবস্থা দর্শন ক’রে এই পুস্তিকা লিখিত হল। আশা করি এর দ্বারা তাঁর সম্পর্কে আকীদার অনেক ভুল দূরীভূত হবে। অনেকের ঈমান নবায়ন হবে। আর তা হলেই আমার শ্রম সার্থক হবে।
আল্লাহর কাছে দুআ, তিনি যেন আমাদের ঈমান নবায়ন করেন এবং তাঁর প্রতি সঠিক ঈমান রাখার তওফীক দান করেন। আমীন।
ইতি —
আব্দুল হামীদ মাদানী
আল-মাজমাআহ
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
মৌলিক নীতিমালা
এ কথা বিদিত যে, মহান আল্লাহ যে সকল গুণে নিজেকে গুণান্বিত করেছেন এবং তাঁর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে যে সকল বিশেষণে বিশেষিত করেছেন, আমরা প্রকৃতার্থেই সেই সকল গুণ ও বিশেষণ তাঁর আছে বলে বিশ্বাস করব; তাতে কোন প্রকার হেরফের ঘটাব না, নিষ্ক্রিয় গুণ ধারণা করব না, তার কোন অপব্যাখ্যা করব না, তার কোন বাস্তবিক অথবা কাল্পনিক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করব না। যেহেতু তিনি তাঁর গুণাবলীতে ঠিক সেই রূপ, যে রূপ তিনি তাঁর সত্তায়। অর্থাৎ, সত্তায় যেমন তাঁর কোন নযীর নেই, তেমনি তাঁর গুণাবলীতেও তাঁর কোন নযীর নেই। তাঁর সত্তা ও গুণাবলীর কোন দৃষ্টান্ত, সমকক্ষ, সমতুল্য, শরীক ও সদৃশ নেই।
{لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ}
অর্থাৎ, কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরাহ আশ্-শূরা ১১ আয়াত)
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ব্যাপারে কিছু নিয়ম-নীতি আছে, ঈমান ঠিক রাখার জন্য সেগুলি মনে রাখা মু’মিনের খুবই প্রয়োজন। নচেৎ তাতে পদ¯খলন ঘটতে পারে; যেমন অনেকের ঘটেছে। সেই নীতিমালা নিম্নরূপ :-
১। মহান আল্লাহর সকল নামই সুন্দর; বরং সুন্দরতম। অর্থাৎ শেষ পর্যায়ের সুন্দর। যেহেতু তাতে আছে পূর্ণাঙ্গ গুণাবলী। তাতে কোন প্রকার কমি ও ত্রুটি নেই। মহান আল্লাহ কুরআন কারীমে সে কথা চার জায়গায় ঘোষণা করেছেন,
{وَلِلهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَآئِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ}
অর্থাৎ, উত্তম নামসমূহ আল্লাহরই। সুতরাং তোমরা সে সব নামেই তাকে ডাকো। আর যারা তাঁর নাম সম্বন্ধে বক্রপথ অবলম্বন করে, তাদেরকে বর্জন কর, তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দেওয়া হবে। (সূরাহ আল-আ’রাফ ১৮০ আয়াত)
{قُلِ ادْعُواْ اللهَ أَوِ ادْعُواْ الرَّحْمَنَ أَيًّا مَّا تَدْعُواْ فَلَهُ الأَسْمَاء الْحُسْنَى}
অর্থাৎ, বল, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর, তাঁর রয়েছে সুন্দর নামাবলী। (সূরাহ বানী ইসরাঈল ১১০ আয়াত)
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
{اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى}
অর্থাৎ, আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই। (সূরাহ ত্ব-হা ৮ আয়াত)
{هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى}
অর্থাৎ, তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা। সকল উত্তম নাম তাঁরই। (সূরাহ আল-হাশ্র ২৪ আয়াত)
২। মহান আল্লাহর নামসমূহ নামও এবং গুণও।
পক্ষান্তরে মানুষের নাম কেবল তার নামই, গুণ নয়। যেমন যার নাম আলীম, সে জাহেল হতে পারে। হুদা নামের লোক বেহুদা, আমীন নামের লোক খিয়ানতকারী, জামীল নামের লোক কুৎসিত হতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে তা নয়। তাঁর ক্ষেত্রে নামের যে অর্থ পাওয়া যায়, তিনি তাই। তাঁর প্রত্যেক নাম সার্থক।
৩। মহান আল্লাহর নাম যদি সকর্মক গুণাবলী নির্দেশ করে, তাহলে তাতে তিনটি বিষয় সাব্যস্ত হবে :-
(ক) সে নাম আল্লাহর, তা বিশ্বাস করতে হবে।
(খ) সে গুণ তাঁর আছে, তাও মানতে হবে।
(গ) সে অর্থের নির্দেশ ও দাবী বিশ্বাস করতে হবে।
যেমন, ‘আস-সামী’ মহান আল্লাহর একটি নাম। ‘শোনা’ তাঁর কর্মগত একটি গুণ। আর তার দাবী হল, প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার কথা তিনি শোনেন।
৪। আল্লাহর নাম তাঁর গুণ বুঝাবে সামগ্রিক অর্থে, আংশিক অর্থে অথবা অনিবার্য অর্থে।
যেমন, ‘আল-খালিক্ব’ তাঁর নাম। সামগ্রিক অর্থে আল্লাহকেই সৃষ্টিকর্তা বুঝায়। তিনি যে সৃষ্টি করেন, সামগ্রিক অর্থে সে গুণের কথাও বুঝায়। কেবল সত্তা অথবা গুণ বুঝায় আংশিক অর্থে এবং তাঁর জ্ঞান ও মহাশক্তির কথা বুঝায় অনিবার্য অর্থে।
৫। মহান আল্লাহর নাম (সহীহ) দলীল-সাপেক্ষ। জ্ঞান বা অনুমিতি দ্বারা কোন নাম নির্ধারণ করা যাবে না।
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
যেহেতু মহান আল্লাহ কোন্ নামের উপযুক্ত, তা কারো জ্ঞান নির্ধারণ করতে পারে না। আর মহান আল্লাহ বলেন,
وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً}
অর্থাৎ, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরাহ বানী ইস্রাঈল ৩৬ আয়াত)
{قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُواْ بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى اللهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ}
অর্থাৎ, বল, ‘আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে, পাপাচারকে ও অসংগত বিদ্রোহকে এবং কোন কিছুকে আল্লাহর অংশী করাকে, যার কোন দলীল তিনি প্রেরণ করেননি এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলাকে (নিষিদ্ধ করেছেন), যে সম্পর্কে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই।’ (সূরাহ আল-আ’রাফ ৩৩ আয়াত)
অনুরূপ তাঁর কোন গুণ বা কর্ম থেকে তাঁর নাম নির্ধারণ করা যাবে না। যেমন কোন যয়ীফ বা জাল হাদীস দ্বারাও কোন নাম প্রমাণিত হবে না। (‘মহান আল্লাহর অপ্রমাণিত নাম’ শিরনামা দ্রঃ)
৬। মহান আল্লাহর নাম কোন নির্দিষ্ট সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়।
যেহেতু মহানবী (স) তাঁর দুআয় বলতেন,
اَللّهُمَّ إِنِّيْ عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِيْ بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاءُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِيْ كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَداً مِّنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِيْ عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ
تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيْعَ قَلْبِيْ، وَنُوْرَ صَدْرِيْ وَجَلاَءَ حُزْنِيْ وَذَهَابَ هَمِّيْ.
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিঃসন্দেহে আমি তোমার দাস, তোমার দাসের পুত্র ও তোমার দাসীর পুত্র, আমার ললাটের কেশগুচ্ছ তোমার হাতে। তোমার বিচার আমার জীবনে বহাল। তোমার মীমাংসা আমার ভাগ্যলিপিতে ন্যায়সঙ্গত। আমি তোমার নিকট তোমার প্রত্যেক সেই নামের অসীলায় প্রার্থনা করছি—যে নাম তুমি নিজে নিয়েছ। অথবা তুমি তোমার গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছ, অথবা তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাউকে তা শিখিয়েছ, অথবা তুমি তোমার গায়বী ইল্মে নিজের নিকট গোপন রেখেছ, তুমি কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত কর, আমার বক্ষের জ্যোতি কর, আমার দুশ্চিন্তা দূর করার এবং আমার উদ্বেগ চলে যাওয়ার কারণ বানিয়ে দাও।
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
তিনি আরো বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহর এমন ৯৯টি নাম রয়েছে, যে কেউ তা (দুআতে) গণনা করবে (বা মুখস্ত ক’রে তার অর্থ ও দাবী অনুযায়ী আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
এ হাদীস এ কথা বুঝায় না যে, তাঁর ৯৯টিই নাম আছে। বরং বুঝায় যে, তাঁর অনেক নাম আছে। কিন্তু তার মধ্যে ৯৯টি নাম এমন আছে, যে কেউ…..। তা না হলে বাক্যটি এরূপ হত, “নিশ্চয় আল্লাহর নাম ৯৯টি।” বুঝা গেল যে, তাঁর নামাবলী নির্দিষ্ট সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়।
৭। মহান আল্লাহর নামে বক্রপথ অবলম্বন করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
{وَلِلهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَآئِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ}
অর্থাৎ, উত্তম নামসমূহ আল্লাহরই। সুতরাং তোমরা সে সব নামেই তাকে ডাকো। আর যারা তাঁর নাম সম্বন্ধে বক্রপথ অবলম্বন করে, তাদেরকে বর্জন কর, তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দেওয়া হবে। (সূরাহ আল-আ’রাফ ১৮০ আয়াত)
তাঁর নামে বক্রপথ অবলম্বন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে :-
(ক) আল্লাহর কোন নামকে অস্বীকার করা। অথবা সেই নামের অর্থ যে গুণ বুঝায় তা অস্বীকার করা। অথবা তার নির্দেশ ও দাবী অস্বীকার করা। যেমন হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তি লেখার সময় কাফেররা ‘আর-রাহমান’ ও ‘আর-রাহীম’ নামকে অস্বীকার করেছিল। মু’তাযিলা প্রভৃতি ফির্কার লোকেরা বলে থাকে, আল্লাহ বিনা ইল্মে ‘আলীম’।
(খ) মহান আল্লাহর নামে যে গুণ পাওয়া যায়, তা কোন সৃষ্টির গুণের মত মনে করা। অথচ তিনি বলেন,
{لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ}
অর্থাৎ, কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরাহ আশ্-শূরা ১১ আয়াত)
মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
(গ) যে নাম আল্লাহ নেননি, মনগড়াভাবে তাঁর সেই নাম উদ্ভাবন করা। খুদা, জগৎ-পিতা, বিধাতা-পুরুষ ইত্যাদি।
(ঘ) তাঁর নাম থেকে বাতিল মা’বূদের নাম উদ্ভাবন করা। যেমন ‘ইলাহ’ থেকে ‘লাত’, ‘আযীয’ থেকে ‘উয্যা’ ইত্যাদি। (বিরোধীদের পদ্ধতি দ্রঃ)
৮। শব্দের একই ধাতু থেকে উৎপত্তি একাধিক নামকে একই নাম মনে করা যাবে না। কারণ প্রত্যেক শব্দের পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য আছে এবং সেই হিসাবে প্রত্যেক নামের কিছু না কিছু পৃথক অর্থও আছে। যেমন, ‘আল-ক্বা-দির, আল-ক্বাদীর, আল-মুক্বতাদির এবং ‘আল-আলী, আল-আ’লা, আল-মুতাআল’ ইত্যাদি।
৯। বিপরীতার্থবোধক যুগ¹ নাম পৃথক পৃথক নাম গণ্য করা হবে। কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে একটি নামের মত ধরা হবে। যেমন ‘আল-ক্বা-বিয—আল-বা-সিত্ব, আল-মুক্বাদ্দিম—আল-মুআখ্খির ইত্যাদি। এই শ্রেণীর নাম দ্বারা দুআ-যিকর করলে একটি ছেড়ে অন্যটি দ্বারা করা যাবে না। যেহেতু তাতে সে নামের মাহাত্ম্য ও মহান আল্লাহর পূর্ণ প্রশংসা ফুটে উঠবে না।
১০। যে শব্দে মহান আল্লাহর গুণে কোন ত্রুটি প্রকাশ হয় না এমন শব্দ দিয়ে তাঁর গুণাবলী প্রকাশ করা দূষণীয় নয়। যেমন, ‘আল-ক্বাদীম, ওয়াজিবুল অজূদ, ওয়াজিবুয যাত’ ইত্যাদি। কিন্তু তা নাম গণ্য করা যাবে না।
১১। আল্লাহর সমস্ত নামাবলী আল্লাহর কালাম ও গুণ। তা সৃষ্ট নয়। সুতরাং তাঁর সকল নামের কসম খাওয়া যাবে।

মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলী
Reviews
There are no reviews yet.