প্রগতির স্রোতে ভাসমান নারী
বই: প্রগতির স্রোতে ভাসমান নারী
লেখক: অধ্যাপক মোজাম্মেল হক
প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয়: মহিলা
কভার: পেপার ব্যাক
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: প্রগতির স্রোতে ভাসমান নারী
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলকিশেন্স
প্রগতির স্রোতে ভাসমান নারী
লেখক: অধ্যাপক মোজাম্মেল হক
প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
স্নেহময়ী বোন আমার!
পৃথিবীতে পুরুষের জন্য আল্লাহর দেয়া তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত । তোমার সৃষ্টির ভিতর সৃষ্টিকর্তা তাঁর অসীম ক্ষমতার এক পরশ এঁকে দিয়েছেন। সৃষ্টির আদি থেকে এ পর্যন্ত মানুষ বিচিত্র ভঙ্গিতে তোমার সৌন্দর্য বর্ণনায় কাব্য ও উপন্যাসের পাহাড় রচনা করেছে। কিন্তু স্রষ্টার আসল শিল্পের গভীর সমুদ্রে কাগজী শিল্পের পর্বতমালা অতলতলে তলিয়ে গেছে। কর্মক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, দুঃখ-দারিদ্র জর্জরিত মানুষ তোমার মায়াময় চাহনি, মমতা বিজড়িত তোমার কণ্ঠস্বর আর সুকোমল তোমার করস্পর্শে সমস্ত দুঃখবেদনা স্বপ্নের মত বিস্মৃত হয়েছে। বিশ্ব ভূবণের তুলিকারের তুমি এক অসামান্য সৃষ্টি।
সেদিন তোমার মা তোমার সম্পর্কে বড় চমৎকার খবর শুনালেন। তুমি যখন ছ’মাসের শিশু, বসতে হাঁটতে পারতেনা, কথা বলতে পারতেনা, তখন নাকি মলমূত্র ত্যাগ করে তারই উপর গড়াগড়ি দিতে, হাত-পা নেড়ে সর্বাঙ্গে ময়লা মাখিয়ে নিতে, মল ভর্তি দুই হস্ত মুষ্টিবদ্ধ করে মুখের মধ্যে পুরে দিতে! তিনি বললেন, তোমার মুখে যে কত মলমূত্র গেছে তার হিসাব নেই। আর জন্মের আগে কলুষ কালিমার মধ্যেই নাকি ছিল তোমার আবাস। তোমার অবস্থার এইযে পরিবর্তন এর পেছনে কার হস্ত কার্যকরী রয়েছে? জানি, তুমি বলবে ঐ অসহায় অবস্থায় অমার মা, আমার বাবা আমাকে লালন পলন করেছেন, বড় করেছেন। আচ্ছা বেশ। আমার একটা ছোট্ট প্রশ্নের জবাব দাও। যখন তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দুগ্ধই ছিল তোমার একমাত্র খাদ্য তখন ওটা তোমার মা কোত্থেকে পেলেন? আল্লাহ যদি মায়ের বুকে, গাভীর পেটে বা অন্য কোন জায়গায় দুগ্ধের ব্যবস্থা না করতেন, দুনিয়ার কোন মানুষের পক্ষে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব ছিল কি? আর তুমি যে তোমার মা বাবার স্নেহ ভালবাসার কথা বললে ওটাই বা তাদের মধ্যে কে সৃষ্টি করলেন? তারা কিসের প্রলোভনে তোমাকে এত ভালবাসলেন? শুধু কষ্ট আর কষ্ট ছাড়া বিনিময়ে দেবার মত কিছুই তো তোমার ছিল না। আচ্ছা, যৌবনে উপনীত হওয়ার পূর্বে এত লাবণ্য তো তোমার দেখিনি। এত সৌন্দর্য কোত্থেকে আমদানী করলে? সর্বাঙ্গে কে ঢেলে দিল কমনীয়তা? একটু খানি লাবণ্য তোমার দাদীর গায়ে ঢেলে দাও দেখি, তার চোখ দু’টো একটু ঠাণ্ডা হোক । এত সুন্দর তুমি কী করে হলে? নিজের চেষ্টায়? বাবা মায়ের চেষ্টায়? স্বামীর চেষ্টায়? সবটাতেই ‘না’ করছ? এরা যদি তোমাকে সুন্দর না করে থাকেন বা করতে না পেরে থাকেন, তবে করল কে? এরাই তো তোমার সবচেয়ে আপনজন। তোমার মা বাবা তোমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসেছেন। দুনিয়াতে তোমাকে বেশী তাঁরাই ভালবাসেন। কাজেই এ সৌন্দর্য তারাই তোমাকে এনে দিয়েছে। ‘না’ করছ? তাহলে নিশ্চয় তোমার স্বামী? সেই বিয়ের দিন থেকে শুরু করে শয়নে, স্বপনে ভ্রমণে ছায়ার মত যিনি তোমার সঙ্গী হয়ে রয়েছেন, সেই স্বামী ছাড়া অপর কেই বা তোমাকে এ সৌন্দর্য এনে দেবে? কতদিন তোমার স্বামীকে তোমার কাছে বলতে দেখেছি, “প্রিয়! আমি তোমাকে আমার প্রাণের চেয়েও ভালবাসি” তাই বুঝি তিনি নিজের জন্য বঞ্চনার ইতিহাস সৃষ্টি করে জ্বলন্ত প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ তোমাকে এত সুন্দর করেছেন। এবারও ‘না’ করছ? মানে তারও সে সাধ্য নেই? তাহলে খুঁজে বের কর তোমার সেই সবচেয়ে আপনজনকে যিনি তোমাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন। যিনি কমনীয় দেহ আর হৃদয় জুড়ানো চেহারা সৃষ্টি করতে পারেন এবং তোমাকে তোমার মনের মত করে সৃষ্টি করেছেন ! তাহলে শেষ পর্যন্ত স্বীকার করছ যে, এই অপরূপ রূপলাবণ্য সৃষ্টির মূলে রয়েছেন রহমানুর রহীম আল্লাহ ।
আমার কথা যদি না বুঝে থাক তবে আরো পরিষ্কার করে বলছি তোমার মেঝ বোনটার গায়ের রং অনেকখানি ময়লা। তুমি টের পাওনা কিন্তু ময়লা রং-এর জন্য ওর হা-হুতাশ বড় কম নয়। আচ্ছা বোন, ওর মত ময়লা না করে তোমার গায়ে এত সোনা ঢেলে দিল কে এটা কি কোনদিন ভেবে দেখেছ? এর পেছনে কি তোমার কোন বাহাদুরী আছে? আচ্ছা, ঐ ফার্স্ট ক্লাশ কন্ট্রাক্টারের মেয়ে সালেহাকে তুমি কোনদিন দেখেছ কি? আত্মীয়-স্বজন, অর্থ-সম্পদ, পোশাক-পরিচ্ছদ কোনদিক দিয়ে তিল পরিমাণ ত্রুটি নেই। সেদিন ওর বাবা ওকে একটি শাড়ী এনে দিলেন ছ’হাজার টাকা দিয়ে। শাড়ী পরে সে দু’হাত দিয়ে নেড়ে নেড়ে দেখতে লাগলো। আর কিভাবেই বা দেখবে, ও তো জন্মান্ধ । দেখেনি পৃথিবীর চেহারা, দেখেনি মা বাবা ভাই বোন আত্মীয়-স্বজন কারো চেহারা এমনকি পরীদের হার মানিয়ে-দেয়া নিজের চেহারাটা পর্যন্ত সে দেখেনি। কাপড়-চোপড় আনলে হাত দিয়ে নেড়ে দেখে আর জিজ্ঞেস করে, এটা কী রংয়ের বাবা, লাল? কী রকম লাল? মিশানো না এক রং? ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্তরে বিবাহের আকাঙ্ক্ষা কিন্তু মুখ ফুটে কোনদিন কাউকে কিছু বলেনি, কী জানি হয়ত মা-বাবার কানে যাবে। অন্ধত্বের কারণে কোন বর এগিয়ে আসছেনা, মাঝে থেকে মা-বাবা অশ্রু নির্গত করবেন। আচ্ছা বোন, বলতে পার কি তোমার কোন পুণ্য কর্মে খুশী হয়ে আল্লাহ তোমার চোখ দুটো এত সুন্দর করলেন। কোনদিন তোমার মুখ দিয়ে কি বের হয়েছে, আল্লাহ! তুমি তো অনেককে চোখ দাওনি, অন্ধ করেছ, আমাকে অন্ধ করনি—এর জন্য তোমার অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। মনে হয় তোমার মধ্যে কোনদিন এ চিন্তার উদয়ই হয়নি। শুধু তাই নয়। এ অমূল্য চোখের কিভাবে অপব্যবহার করছ তার ফিরিস্তি শুনবে? যা কিছু করছ তার ভিডিও আল্লাহর কাছে তো রয়েছেই । আমি কেবল সামান্য কিছু তোমাকে শুনাতে পারি । মনে কর, তোমার বিয়ের আগের দিনগুলোর কথা। তোমার সর্বাঙ্গে লাবণ্য উঁকি দিতে শুরু করেছে। মন তোমার খেলনার কথা ভুলে, ছোট্ট ভাই- বোনদের কথা ভুলে, মা বাবার পরম স্নেহকে অন্তরাল করে অন্য দিকে আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। ক্রমশঃ তোমার দেহ-মন একটা যুবকের দেহ- মন আকর্ষণ করতে চাইছে। হ্যাঁ বোন, এ আকর্ষণ স্বাভাবিক, আল্লাহর অপরিহার্য নিয়মে আবদ্ধ। একে বাধা দেয়ার কোন শক্তি আমার-তোমার নেই। কিন্তু এই স্বাভাবিক আকর্ষণের সাথে সাথে পুরুষ ও স্ত্রীর সম্পর্ক সৃষ্টির ব্যাপারে সৃষ্টিকর্তা বিধানও পাঠিয়েছেন। কিন্তু হায়! এমন পরিবেশে তুমি জন্মেছ, এমন পরিবেশে বড় হয়েছ যে, তোমার সবচেয়ে আপনজন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, তার পরিচয় জানা, তিনি আমাদেরকে এত সুন্দর করে পৃথিবীতে কেন পাঠালেন সে সম্পর্কে অবগত হওয়া, আর সেই সবচেয়ে আপনজনকে কিভাবে খুশী করা যায়, একেবারে আপন করে নেয়া যায়, কিভাবে তাঁর নির্দেশিত পথে চলে দুনিয়া ও দুনিয়ার পরের জিন্দেগিতে সাফল্যমণ্ডিত হওয়া যায় আর জাহান্নামের কঠিন আগুন থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সে কথা তো তোমার ঐ পরিবেশ তোমাকে কেনদিন ভাবতে দেয়নি। অপূর্ব চাহনি আর অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে যুবকটাকে যে-ভাবে হাত করে ফেললে, তার সাথে যে-ভাবে চলাফেরা আরম্ভ করে দিলে তখন কি একবার ভেবেছিলে—এ চোখ দুটো আল্লাহ এরকম জঘন্য কাজে ব্যবহারের অনুমতি আমাকে দেননি? বোধ হয় চোখ দুটোর মালিক হয়ে তুমি মনে করেছ আমায় পায় কে? যাদের চোখ নেই তারাই সাত-পাঁচ ভাবুক গে। আমার চোখ আমি যে-ভাবে ইচ্ছে কাজে লাগাবো। তোমার চোখ? তুমি এর মালিক? এ দুটো কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা কারো নেই, তাই না? এ প্রশ্নের জবাব আমি দিব না। এর জবাব টিএ্যান্ডটি কলোনীর গোলাপীকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। হ্যাঁ, গোলাপী! মা-বাবা আসল নাম রেখেছিলেন সাবেরা খাতুন। কিন্তু তার ঐ গোলাপের মত রং শেষ পর্যন্ত তার আসল নামটাই খেয়ে বসল। বয়স যখন ওর ষোল কি সতেরো তখন বসন্ত রোগে আক্রান্ত হল। সর্বাঙ্গ গুটিতে ভর্তি হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত চোখ দুটো অন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী গোলাপীর বাবা তার হাতের সমস্ত প্রভাব খাটিয়ে, টাকা ঢেলে শহরের সেরা ডাক্তারদের আনিয়ে চিকিৎসা শুরু করলেন। পাশ্চাত্য আর প্রাচ্য দেশীয় সব কৌশল খাটিয়ে অবশেষে ডাক্তারদের একজন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “মেয়ে হয়ত আপনার বাঁচবে করিম সাহেব, কিন্তু চোখ দুটো বেচারা আর পাচ্ছে না।” করিম সাহেব ডুকরে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করতে লাগলেন, “হে সারা জাহানের মালিক! তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান, তুমি আমার নয়নমণির চোখ দুটো কেড়ে
হে আল্লাহ! আমি এই
নিওনা। তোমার পক্ষে সবকিছু করাই সম্ভব। হে আল্লাহ!
ডাক্তারদের সাক্ষী করে বলছি—আমার গোলাপীকে তোমার কালাম পাক শেখানোর ব্যবস্থা করব। তোমার অবাধ্য হয়ে তাকে যেখানে সেখানে ঘুরতে দেব না। তুমি দয়া কর। চোখ দুটো আমার গোলাপীকে ভিক্ষা দাও। এই ভিক্ষুকের হাত দুটোকে খালি ফিরিয়ে দিওনা।” আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপর খুব মেহেরবান। তিনি গোলাপীর বাপ-মার কথা শুনলেন। গোলাপী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলো । তার চোখ দুটোও আল্লাহ ফিরিয়ে দিলেন। গোলাপী সেই অবধি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে। বেপর্দা হয়ে আর এখানে সেখানে যায় না। কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করে, এই চোখ দুটো আমার বাবা আল্লাহর কাছ থেকে ভিক্ষে চেয়ে নিয়েছিলেন। সেই অবধি গোলাপী সমস্ত ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে চলে এবং তাঁর শুকরিয়া প্রকাশ করে। গোলাপীর কাছে গেলে সে তোমাকে আল্লাহর সমস্ত নেয়ামতের কথা আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথাই বলবে ।
তুমি দিন আর রাত রেডিও আর টেলিভিশনের অশ্লীল সঙ্গীতে কান লাগিয়ে রেখেছ। কোনদিন কি এ কথাটা ভাববার অবকাশ হয়েছে, আল্লাহর দেয়া কান দুটোকে কতইনা জঘন্য কাজে লাগিয়ে রেখেছ। বেতারে ভেসে আসা তেলাওয়াতে কালামে পাক, শিক্ষণীয় কথা, ধর্মীয় আলোচনা তোমার কিছুই ভাল লাগেনা। এভাবেই কি তুমি তোমার কান দুটোর শুকরিয়া আদায় করছ? তুমি প্রসাধনীতে যত পয়সা ব্যয় করছ তার কিয়দংশ পেলেই আমাদের আরেক বোন উম্মে সালেমাকে ভিক্ষে করতে হত না । বোন, একটা পরামর্শ তোমাকে দেই । দেখ, এই যে তোমার চক্ষু, হস্ত,চর্ম এদের থেকে কিন্তু সাবধান! তুমি মোটেই টের পাচ্ছ না, কিন্তু এরা তোমাকে উপেক্ষা করে আল্লাহর আদেশ মত কাজ করে যাচ্ছে। তুমি এদেরকে পৃথিবীতে আকণ্ঠ ভোগের পেয়ালায় ডুবিয়ে রেখেছ। কিন্তু এরা তোমার ব্যবহারে অসন্তুষ্ট। সর্বক্ষণ ডুকরে ডুকরে কাঁদছে আর চেঁচিয়ে বলছে, ওগো! আমাদেরকে এভাবে ব্যবহার করে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনোনা। তোমরা করছ কী! আল্লাহ যখন আমাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন তখন তোমাদের কার্যকলাপের এতটুকু আমরা লুকাতে পারব না। হায়! হায়! ভুল করে হাত, পা, চোখের মালিক সেজে নিজের সর্বনাশ করে ফেললে । তাই বলছি, আজ থেকে যা কিছু অন্যায় কাজ করবে,কর । কোন বাধা নেই। পরামর্শ শুধু এতটুকু, তোমার ঐ কাজ তোমার চোখ, কান, হাত, পা ও চর্ম—এরা কেউ একটুও যেন টের না পায়। যা করবে ওদের অগোচরে কর, তাহলে কোন অসুবিধা হবে না। আর ওরা যদি টের পায় তবে আল্লাহর কসম করে বলছি, রক্ষে নেই! রক্ষে নেই!
বোন! তোমাকে আমি আজগুবি ভুতের বা পরীর গল্প শোনাতে বসিনি। তুমি নিশ্চয়ই মুসলমান। তাহলে তুমি নিশ্চিত বিশ্বাস কর যে, কুরআন সত্য, এতে তিলার্ধ্ব পরিমাণও মিথ্যে নেই। আল্লাহ কী বলছেন শুন ‘আল্লাহর শত্রুদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে একত্রিত করা হবে। তাদেরকে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে। এমনটি যখন তারা জাহান্নামের নিকটে আসবে, তখন তারা যা করেছিল সে ব্যাপারে তাদের কান, চোখ ও চর্ম সাক্ষ্য প্রদান করবে। তারা তাদের চর্মকে বলবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছ কেন? তখন চর্ম বলবে, যে আল্লাহ সব বস্তুকে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন তিনিই আমাদেরও মুখে ভাষা দিয়েছেন। তোমরা চাইবে যে তোমাদের চোখ, কান, চর্ম তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দিক। কিন্তু নিজেদের এতটুকুও ঢেকে রাখতে পারবে না। তোমরা ধারণা করতে তোমরা যা করছ তার অধিকাংশই আল্লাহ খবর রাখেন না। আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের এই ধারণা! এই ধারণাই তোমাদের ধ্বংস করেছে, তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পড়ে গেছ। তারপর যদি সবুর কর তাহলেও জাহান্নামেই থাকতে হবে, আর যদি ক্ষমা চাও তাহলেও ক্ষমাপ্রাপ্ত হবেনা।” (সূরা হামীম সিজদা ১১-২৪ আয়াতের ভাবার্থ)
তুমি যখন ছোট থেকে বড় হলে, ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য করতে শিখলে, আমাদের মহান আল্লাহ আমাদের কোন কাজ করতে বলেছেন, কোনটা করতে নিষেধ করেছেন, কোটা দেখতে নিষেধ করেছেন, এসব বুঝে নেওয়ার মত যখন তোমার জ্ঞান হল, তখন হয়ত এ সম্পর্কে তোমাকে কেউ কোনদিন বুঝায়নি। সে সময় তোমার অভিভাবক ছিলেন তোমার বাপ-মা; তারা তোমাকে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হয়ে চলার জন্য কোনদিন কিছু বলেননি। তাঁরা ঠিকমত পড়াশুনা করার জন্য, পোষাকের ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার জন্য, ঠিকভাবে গান শিখে নেয়ার জন্য তাগিদ করেছেন। তুমি যখন কোন যুবকের সাথে চলাফেরা শুরু করে দিলে তখন তার মনে মনে হয়ত খুশীই হয়েছিলেন! তারা তো এই পর্যন্তই তোমার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তে করেন যে, একটা প্রতিষ্ঠিত পাত্রের হাতে সঁপে দিতে পারলেই খালাস। তুমি সৃষ্টিকর্তাকে চিনবে, তাঁর কথামত চলে তাঁর প্রিয় পাত্রী হবে, মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে নিরাপদে হাজির হবে, তুমি চিরস্থায়ী জান্নাতের সুখ ভোগ করবে, এসব কিছুই তোমার মা-বাবা তোমার জন্য চাননি। তুমি এই অস্থায়ী জীবনে বেশ সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পার এটাই ছিল তাদের একমাত্র কাম্য। তারপর খুঁজে খুঁজে তোমার মা-বাবা এমন এক লোকের হাতে তোমার জীবন প্রাণকে সঁপে দিয়েছেন যার কাজ হলো মানুষের জ্বালানি দিয়ে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করা। আচ্ছা বোন, তোমার বাবা মায়ের বাড়ি গিয়ে তাদের একবার জিজ্ঞেস করতো তাঁরা তোমাকে কতখানি ভালবাসেন? তাঁদের জিজ্ঞেস কর, সত্যই কি কিয়ামত হবে? আল্লাহর কাছে আমাদের সমস্ত কাজের জন্য সত্যই কি জবাবদিহি করতে হবে? জিজ্ঞেস কর, সেদিন তোমাকে তারা শহরের নামকরা মহিলা কলেজে ভর্তি করে দিয়ে চলে এলেন, তারপর তুমি যেভাবে চলতে শুরু…
প্রগতির স্রোতে ভাসমান নারী

প্রগতির স্রোতে ভাসমান নারী
Reviews
There are no reviews yet.