কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা
বই: কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা
মূল: মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন সুলাইমান আত্-তামীমী (রহিমাহুল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা)
ব্যাখ্যাকার: শায়েখ সালেহ্ বিন আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম আলে শায়েখ
ভাষাস্তর: শাইখ আব্দুর রব্ব আফফান
প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয়: ঈমান আক্বিদা-মানহাজ
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩০৪
কভার: পেপার ব্যাক
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
আপনি কি জান্নাত পেতে চান? জাহান্নাম থাকে নিজেকে রক্ষা করতে চান? আমরা সবাই তা চাই। কিন্তু আমরা কি জানি কিভাবে চির সুখের স্থান জান্নাত পেতে হবে এবং কিভাবে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে?
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন:
الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ أُولَٰئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ
“যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।” [ সুরা আন’আম- ৮২]
এবং মহানবী মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেন:
فإن الله حرم على النار من قال لا إله إلاالله يبتغى بذلك وجه الله
“আল্লাহ তা’আলা এমন ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।” [সহিহ বুখারি-৬৪২৩, সহিহ মুসলিম– ৩৩,২৬৩]
তাওহীদ হল ইসলামের মূল ভিত্তি। জান্নাত লাভের চাবিকাঠি এবং তাওহীদের বিপরীত হল শিরক। শিরক যাবতীয় আমল বরবাদকারি জাহান্নামে যাবার কারণ।মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল।” [সুরা নিসা- ৪৮]
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার জন্য জাহান্নামকে অবধারিত করে দেন।” [সুরা মায়েদা- ৭২]
আর তাই আল্লাহর বিশুদ্ধ তাওহীদের দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ‘কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা’ গ্রন্থে তাওহীদের অর্থ ও ফাযিলত, তাওহীদের বিপরীত শিরক এর প্রকারভেদে এর ভয়াবহতা সহ আরো অনেক বিষয়ে আলোচিত হয়েছে।
কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা
[তাহকীক ও তাখরীজসহ]
মূল:
মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাব বিন সুলাইমান আত্-তামীমী (রহিমাহুল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা)
ব্যাখ্যাকার:
শায়েখ সালেহ্ বিন আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম আলে শায়েখ
ভাষান্তর:
মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফফান লিসান্স, মাদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সুউদী আরব
অনুবাদ সম্পাদনা: ইঞ্জি. মুহাম্মাদ হাসান
প্রকাশনায়ঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
প্রকাশকের কথা
তাওহীদ ইসলামের মূল ভিত্তি। আর এ ভিত্তি যদি স্বীয় হৃদয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তবে আকীদাহ্ ও ইবাদতসহ ব্যক্তিগত ও সামাজিক সার্বিক জীবনব্যবস্থা বিশুদ্ধ ও ত্রুটিমুক্ত হবে। চৌদ্দশত বছর পূর্বে এ তাওহীদের সূর্য উদয় হয় আরব মরুভূমিতে লাত, মানাত ও হুবলসহ সমস্ত পৌত্তলিকতার অন্তিম সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথে। যার ফলে শিরক, কুফর, গোমরাহী, বিদআত, কুসংস্কার ও যাবতীয় পাপাচারের ক্ষেত্রসমূহ বিরানে পরিণত হয়। এ সবের স্থান দখল করে ঈমান-ইয়াকীন ও তাওহীদ। যার ফলে ইসলাম স্বীয় শক্তি বিস্তার করে বিশ্বে জনপ্রিয়তা ও সার্বজনীনতা লাভ করে। তাওহীদ হল বিশ্বজগতের প্রতি সমস্ত নবী ও রাসূলের ছেড়ে যাওয়া অমূল্য আমানত। যা খতমে নবুওয়্যাতের বরকতে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে স্থান দখল করার ফলে উম্মাত ইল্ম, আমল, ইখলাস ও তাকওয়ার পোশাকে সুশোভিত হয়। পুনরায় যখন ইউনানী-গ্রীক বাতিল চিন্তা ধারার সাইক্লোন প্রবাহিত হয় এবং উম্মত ধাবিত হয় জাহান্নামের দিকে। আরব জাহানে আরব জাতীয়তাবাদ মাথা জাগালে আল্লাহ তাআলা চেঙ্গিসের আকৃতিতে আযাব পাঠিয়ে দেন। এমতাবস্থায় সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীতে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ -এর তাওহীদী কলম গর্জে ওঠে, তাওহীদের নিশান বুলন্দ হয় ও বিলুপ্তি থেকে রক্ষা পায়। পুনরায় আরব ও অনারবে শিরক ও বিদআতের সাইক্লোন শুরু হলে ১২শ’ হিজরীতে আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ বিন ইসলামিক লাইব্রেরীর সেলিম ভাই মুদ্রণ করেছিলেন। বর্তমানে এটিকে আরও সংস্কার করে তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশ করা হলো। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশের ইসলামী সাহিত্য জগতের সমৃদ্ধিতে এ কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা বইটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে এমন প্রচুর নামকরা ইসলামী বই প্রকাশনী রয়েছে, যাদের প্রকাশিত অসংখ্য বই মার্কেটে ভরপুর কিন্তু তাওহীদ ও শিরক-এর মতো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর বই প্রকাশে তাদের মধ্যে অবহেলা, অজ্ঞতা, কাপুরুষতা এবং দীনতা উল্লেখ করার মতো৷ ফলে, এ কাজের মাধ্যমে তারা পাঠকদেরকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত করছেন সঠিক ঈমানী জ্ঞানের গ্রন্থসমূহ থেকে৷ তা ছাড়া, যেসব বই তারা তাদের তথাকথিত প্রকাশনী থেকে একাধারে প্রকাশ করে চলেছেন, সেসব বইগুলোতে কুরআন-হাদীস্ত্র থেকে সঠিক উদ্বৃত্তি, দলীল বা তথ্যসমূহের বিশুদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন বোধটুকু করেন না। তবে আশার কথা হচ্ছে, হাতেগোনা কয়েকটি প্রকাশনা আছে যারা কুরআন ও সাহীহ হাদীস্নের আলোকে তাওহীদ ও শিরক বিষয়ক গ্রন্থসমূকে সত্যানুসন্ধানী পাঠকদের খুব কাছাকাছি আনার জন্য প্রচেষ্টায় রত রয়েছে। তাওহীদ শিরক বিষয়ে বিস্তৃত জ্ঞান অর্জন করতে পাঠকপাঠিকাদেরকে তথ্য প্রদানের জন্য, ইসলামী গ্রন্থ প্রকাশনীগুলো যেন একে অপরের বিশুদ্ধ ও ভালো বইসমূহকে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে এবং তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে যেন নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করা সম্ভব হয়, সে উদ্দেশ্যে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত তাওহীদ ও শিরক বিষয়ক বইগুলোকে বই পরিচিতি অংশে সংযোজন করেছি। এর ফলে ইনশাআল্লাহ, পাঠক হবেন বিশেষভাবে উপকৃত আর আমাদের সকলের উদ্দেশ্য থাকবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি।
মূল লেখক, ব্যাখ্যাকার, অনুবাদক ও সম্পাদক সহ এ প্রকাশনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সহযোগী সকলের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকলের সৎশ্রমের বিনিময়ে দুনিয়াতে ও আখিরাতে জাযায়ে খাইর দান করুন এবং এটিকে নাযাতের উসীলা হিসেবে গ্রহণ করুন। আমীন!
বিনীত
প্রকাশক
অনুবাদকের কথা
সকল প্রশংসা সমস্ত জগতের অধিপতি একক-অদ্বিতীয় আল্লাহ তাআলার। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সকল নবী ও রাসূলের ইমাম, আমাদের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (স)-এর প্রতি, যিনি এ তাওহীদের প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন এবং তার বংশধর ও সাহাবাদের প্রতি, যারা এ তাওহীদকে বাস্তবায়ন ও এর উপর অটল থাকার ক্ষেত্রে কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করেছেন। শায়খ সুলাইমান আত-তামীমী [র]-এর বহুল প্রসিদ্ধ তাওহীদের উপর লিখিত সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত ‘কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা’ নামক গ্রন্থটির এ পর্যন্ত অর্ধ ডজনের অধিক শরাহ বা ব্যাখ্যা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ যে ব্যাখ্যা গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে তা হল, বর্তমান সৌদি সরকারের মাননীয় ধর্মমন্ত্রী আল্লামা শায়েখ সালেহ বিন আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে-শায়েখ
সুবহানাহু তাআলা।
কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা
প্রদত্ত ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘গায়াতুল মুরীদ ফি শারহে কিতাবিত তাওহীদ’। যার বাংলায় নামকরণ করা হয়েছে ‘জ্ঞান পিয়াসুর আকাঙ্ক্ষা কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা, যদিও ইতিপূর্বে এ ব্যাখ্যা গ্রন্থটির অন্যান্য জীবন্ত ভাষায় অনুবাদ হয়েছে; কিন্তু বাংলা ভাষায় কিছু বিলম্বে হলেও আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে নানা প্রতিকুলতার বাঁধ ভেঙ্গে আলোর পরশ পেল, আলহামদুলিল্লাহ। প্ৰিয় পাঠক! তাওহীদ বা আল্লাহকে একক স্বীকৃতি ও যাবতীয় শিরক থেকে মুক্ত হওয়াই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অথচ বর্তমান সমাজ এ বিষয়টি সম্পর্কে সর্বাধিক উদাসীন। তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন, যুগে যুগে নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁদের প্রতি অবর্তীর্ণ করেছেন মহাগ্রন্থাদী আর তাওহীদপন্থী-একত্ববাদীদের জন্যই তৈরী করেন জান্নাত ও এর পরিপন্থীদের জন্য তৈরি করেন জাহান্নাম। তাই তো প্রত্যেক নবীরাসূলের জীবন চরিতের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তারা অন্য যে কোন ইবাদত, আমল ও কর্মসূচীর পূর্বে তাওহীদকে অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য জীবন দিয়েছেন ও বিপর্যস্ত হয়েছেন কিন্তু তাওহীদের পরীপন্থী শিরকের সাথে কখনোই আপোস করেননি। তাই আজও প্রত্যেক অরাসাতুল আম্বিয়া’-নবীদের উত্তরসূরী আলেম-ইমাম, খতীব, বক্তা, সংস্থা, সংগঠন, জামাআত ও দলের অপরিহার্য দায়িত্ব হল প্রচার ও দাওয়াতী ক্ষেত্রে তাওহীদকে অগ্রাধিকার ও সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। শায়খ সুলাইমান আত- তামীমী (রাহি.) এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিছক কুরআন, হাদীস ও সালাফে সালেহীনের আকীদার আলোকে সংক্ষিপ্তভাবে তাঁর ‘কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা’ এ আলোকপাত করেছেন। আর উক্ত কিতাবের অন্যান্য বহু মনীষীর ন্যায় শায়েখ সালেহ বিন আব্দুল আযীয আলে শায়েখ (হাফিযাহুল্লাহ) অতিপ্রাঞ্জল, বোধগম্য ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হৃদয়গ্রাহী ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এ সাধারণ কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় প্রকাশ লাভ করায় আমি আল্লাহর নিকট জানাই অসংখ্য সিজদায়ে শুকুর। যারা এর পেছনে শ্রম দিয়েছেন, আল্লাহ যেন সবার শ্রমকে ককূল করেন ও এটাকে আমাদের নাজাতের উসীলা হিসেবে গ্রহণ করেন।
বিনীত
মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফফান
সম্পাদকের কথা
ইসলামী ঈমান বা বিশ্বাসকে অনেক সময় তাওহীদ’ বলে আখ্যায়িত করা হয় এ জ্ঞানকে ‘ইলমুত তাওহীদ’ বা ‘তাওহীদের জ্ঞান বলা হয়। ইমাম আবু হানীফা (রাহি.) আল-ফিকহুল আকবার’ গ্রন্থে ‘ইলমুল আকীদা’-কে “ইলমুল তাওহীদ’ নামে অভিহিত করেছেন মূলত, তাওহীদ বা আল্লাহর একতই ইসলামী ঈমান বা আকীদার মূল ভিত্তি। ঈমানের অন্য সকল বিষয় তাওহীদের সাথে জড়িত তাওহীদের অংশ। এ জন্যই ইমাম আবু হানীফা (রাহি.) ইলমুল আকীদাহ্ বুঝাতে “ইলমুত তাওহীদ’ পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। এ পরিভাষাটি হিজরি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শতকে বিশেষ পরিচিতি লাভ করে। এ নামে আকীদাহ্ বিষয়ক কিছু গ্রন্থ রচনা করা এগুলোর মধ্যে রয়েছে চতুর্থ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আবু বাকর মুহাম্মাদ ইবনু খুযাইমা (৩১১ হি.) রচিত ‘কিতাবুত তাওহীদ’ এবং অষ্টম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ আলিম আব্দুর রহমান ইবনু আহমাদ ইবনু রাজাব হাম্বালী (৭৯৫ হি.) রচিত ‘কিতাবুত তাওহীদ। এ ধারাবাহিকতারই এক বলিষ্ঠ সংযোজন হচ্ছে হিজরী ১২শ শতাব্দিতে শায়খ সুলায়মান আল তামীমী কর্তৃক রচিত ‘কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা’ নামক এ বইটি। ঈমান ও আকীদাহ্ একজন মুমিন বান্দার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঈমান ও আকীদার দ্বারাই একজন মু’মিনের আচার-আচরণ, আমাল ও আখলাক নিয়ন্ত্রিত হয়। শিরক মিশ্রিত যে-কোন আমাল ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যহীন এবং আল্লাহর নিকটে প্রত্যাখ্যাত। তাই বান্দার ওপর সর্বপ্রথম অপরিহার্য বিষয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করা এবং নিজের ঈমান, আকীদা ও যাবতীয় ‘আমালকে শিরকমুক্ত রাখা, যাতে তার কোন আমল বরবাদ না হয়। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে নাবী!) আপনি জেনে রাখুন যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই।’ [সূরা মুহাম্মাদ (৪৭): ১৯], এবং আর আমি তাদের আমলের দিকে অগ্রসর হব, অতঃপর তা (তাওহীদ শূন্য হওয়ার কারণে) বিক্ষিপ্ত ধুলিকণার ন্যায় উড়িয়ে দিব।’ [সূরা ফুরকান (২৫): ২৩] তাই পৃথিবীতে আগমনকারী প্রতিটি নাবী বা রাসূল সর্বপ্রথম এ তাওহীদের দিকেই আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ। হওয়া সত্ত্বেও এ সম্পর্কে খুব কমই গুরুত্বারোপ করা হয়। এমনকি ইসলামের অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় এ বিষয়ে তেমন লেখালেখিও হয় না। ফলে, তাওহীদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে তাওহীদ পরিপন্থী বিষয় তথা শিরক আমাদের মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। আর শিরক এমনই ভয়াবহ ও জঘন্যতম পাপ যা থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষের
আবশ্যিক কর্তব্য। শিরকের ব্যাপারে মুহাম্মাদ আলায়ার)-কে আল্লাহ তাআলা বলেন, “(হে নাবী!) আপনি যদি শিরক করেন, তবে আপনার আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।’ [সূরা যুমার (৩৯): ৬৫] ও [সূরা আনআম (৬): ৮৮] আর শিরক থেকে নিজেকে ও অন্যান্য বাঙালি মুসলিম ভাইকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই এ কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা বইটি প্রকাশের উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা গ্রন্থটি বিশুদ্ধভাবে প্রকাশের উদ্দেশ্যে যথেষ্ট সম্পাদনা, তাহকীক ও পরিমার্জন করার চেষ্টা করেছি এবং বিশিষ্ট হাদীস্ত্র বিশারদ মুহাদ্দিসগণের গবেষণাকত পুস্তকের সহায়তায় দুর্বল [দাঈফ] হাদীস্বগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কারণ এ কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা গ্রন্থটি ইতোপূর্বে তাহকীক করা ছিল না। তদুপরি, সচেতন পাঠক-পাঠিকাগণের নিকটে কোনপ্রকার ভুল পরিলক্ষিত হলে এবং সে সম্পর্কে আমাদেরকে জানালে আমরা পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধনের আশারাখি।
বিনীত ইঞ্জি. মুহাম্মাদ হাছান

কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা
Reviews
There are no reviews yet.