আর রাহীকুল মাখতূম
লেখক: শাইখুল হাদীস আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহিমাহুল্লাহু সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা)
অনুবাদক: আব্দুল খালেক রহমানী, মুয়ীনু্দ্দীন আহমাদ
ভাষা সম্পাদনা: সাইফুদ্দীন আহমাদ, অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, কেরামত আলী
মূল প্রকাশক: ফাইজুর রহমান (লেখকের বড় ছেলে)
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: আব্দুল্লাহ বিন ইসমাঈল সালাফী, ড. আবদুল্লাহ ফারুক সালাফী, আবদুর রব আফ্ফান
সংশোধিত ও পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ (বাংলাদেশ): জুমাদাল উলা ১৪৩২, এপ্রিল ২০১১
চতুর্থ প্রকাশ: জুমাদিউস সানি ১৪৩৪ হিজরী, এপ্রিল ২০১৩
সংশোধিত ও পরিমার্জিত চতুর্থ সংস্করণের প্রথম মুদ্রণ (বাংলাদেশ): রামাদান ১৪৪৬ হিজরী, মার্চ ২০২৫
প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয়: সীরাত বা জীবনী -গ্রন্থ
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬১৬
কভার: হার্ড কভার
তাহকীককৃত সংস্করণ
আর্ রাহীকুল মাখতূম
নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী জানার জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ
✨ আর্-রাহীকুল মাখতূম – তাওহীদ পাবলিকেশন্সে তাহকীককৃত সংস্করণে প্রকাশিত ✨
নতুন সংস্করণের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- নতুন! আরবি শব্দগুলোর উচ্চারণ পদ্ধতি সংযোজন
- দুর্বল হাদিসগুলো বক্সের মাধ্যমে চিহ্নিত
- নতুন আপডেটকৃত মানচিত্র সংযোজন
- ভাষার মান আরও সুন্দর ও প্রাঞ্জল
- তাহকীক সংযোজনের কারণে নতুনভাবে ৫৬ পৃষ্ঠা বৃদ্ধি
- সুসজ্জিত ও মানসম্মত ছাপা
নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী জানার জন্য অন্যতম সেরা গ্রন্থ
✅ ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পেতে, আজই সংগ্রহ করুন!
আর রাহীকুল মাখতূম
- তৎকালীন আরবের ভৌগোলিক, সামাজিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা
- রবের ধর্ম-কর্ম ও ধর্মীয় মতবাদ
- জাহিলিয়াতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
- রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বংশ পরিচয়, বিবাহ, দাম্পত্য, সন্তান-সন্ততি, তাঁর আবির্ভাব এবং এর পর ঘটনা বহুল পবিত্র জীবনের চল্লিশটি বছর
- নুবুওয়াত লাভের পূর্বকালীন সংক্ষিপ্ত চিত্র
- নবুওয়তী জীবন এবং তার দাওয়াত
- প্রথম পর্যায়ের মুসলিমগণের ধৈর্য ও দৃঢ়তার অন্তর্নিহিত কারণসমূহ
- মক্কা ভূমির বাইরে ইসলামের দাওয়াত প্রদান
- ইসরা ও মিরাজ
- হিজরত
- মাদানি জীবন
- যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ধি-চুক্তি
- রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
আর–রাহীকুল মাখতূম
(মোহরাঙ্কিত জান্নাতী সুধা)
[বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশ্বখ্যাত জীবনী গ্রন্থ]
১৯৮৭ সালে রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী আয়োজিত নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনীর উপর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ১১৮২টি গ্রন্থের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারী স্মারক গ্রন্থ [লেখক কর্তৃক সম্পাদিত ১৯৯৪ সালের বর্ধিত ও সংশোধিত সংস্করণের আলোকে মুদ্রিত]
মূল :
শাইখুল হাদীস আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী(রহিমাহুল্লাহু সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা)
সাবেক অধ্যাপক, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
অনুবাদ:
আব্দুল খালেক রহমানী
সাবেক উপাধ্যক্ষ, কামারখন্দ সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসা, সিরাজগঞ্জ
মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ
প্রভাষক, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি কলেজ, রাজশাহী
ভাষা সম্পাদনা:
সাইফুদ্দীন আহমাদ
অধ্যাপক মোজাম্মেল হক
কেরামত আলী
প্রকাশনায়:
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ঢাকা,বাংলাদেশ
আর রাহীকুল মাখতূম গ্রন্থ
আল্লাহ তা’আলার (হাম্দ) প্রশংসা, নাবী (রঃ) ও তাঁর আত্মীয়, সহচর ও আনুসারীদের প্রতি সলাত ও সালাম (শান্তি) কামনার পর রবিউল আওয়াল ১৩৯৬ হিজরী মুতাবেক মার্চ ১৯৭৬ ইং সনের কথা। বিশ্ব ইসলামী সংস্থার প্রথম সিরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় করাচীতে। এ সম্মেলনে বিশ্ব ইসলামী সংস্থা, মক্কা মুকাররমার ভূমিকা ছিল বেশ অগ্রণী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাপনী লগ্নে এ সম্মেলন বিশ্বের সকল গ্রন্থ রচিয়তাগণকে এ বলে আহ্বান জানান যে, কোন গ্রন্থ রচয়িতা বিশ্বনাবী (স)’র জীবন চরিত বিষয়ে যে কোন ভাষায় গ্রন্থ রচনা করে ‘প্রথম’ ‘দ্বিতীয়’ ‘তৃতীয়’ ‘চতুর্থ’ কিংবা পঞ্চম স্থান অধিকার করলে তাঁকে উল্লেখিত ক্রমানুসারে পঞ্চাশ, চল্লিশ, ত্রিশ, বিশ ও দশহাজার সউদী রিয়াল দ্বারা পুরস্কৃত করা হবে।
রাবেতার নিজস্ব মুখপত্র ‘আখবার আল আলমে ইসলামীর”কয়েক সংখ্যায় এ বিজ্ঞপ্তি একাধারে প্রচারিত হয়, কিন্তু পরিতাপের ব্যাপার হচ্ছে, এ বিজ্ঞপ্তির বক্তব্য বা বিষয়বস্তু সময়মতো অবহিত হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি।
কিছুদিন পর যখন আমি আমার কর্মস্থল থেকে বাড়ি মুবারকপুরে যাই, তখন আমার ফুপাতো ভাই এবং শ্রদ্ধেয় মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী সাহেব (শাইখুল হাদীস মাওলানা উবায়দুল্লাহ রহমানীর পুত্র) বিষয়টির প্রতি আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেন। শুধু তাই নয়, আমি যাতে এ প্রতিযোগিতায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি সে ব্যাপারেও উৎসাহ-অনুপ্রেরণা এবং খুব দ্রুত আমাকে তাগিদ দিতে থাকেন তিনি। কিন্তু যেহেতু আমার বিদ্যাবুদ্ধির স্বল্পতা সম্পর্কে আমি সদাসতর্ক তাই সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও মহানাবী মুহাম্মদ (ক)-এর মহাজীবন চরিত রচনার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দিতে প্রথমে আমি সাহসই করি নি। প্রকৃতপক্ষে আমার জ্ঞানের স্বল্পতা ও অনভিজ্ঞতার কারণেই এ ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলাম। কিন্তু শ্রদ্ধেয় মাওলানা সাহেব তাঁর প্রস্তাবে অটল, অনড় রইলেন। বারবার আপত্তি সত্ত্বেও তিনি এ বলে আমাকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে চললেন যে, ‘আমার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তুমি এ গ্রন্থটি রচনা করে মোটা অংকের পুরস্কার লাভ করবে। বরং আমি এটাই চাচ্ছি যে, এ সুযোগে বিশ্ব মু’মিনের একান্ত আকাঙ্ক্ষিত একটি অত্যন্ত মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে যাবে।’ তাঁর এ উপর্যুপরি তাগাদা উপেক্ষা করা আমার পক্ষে একদিকে যেমন ছিল অত্যন্ত মুশকিল ব্যাপার, তেমনি অন্যদিকে তার চেয়েও দুরূহ ব্যাপার ছিল মহানাবীর (স) মহাজীবন চরিত রচনার মতো এক মহামহিম কাজ হাতে নেয়া। কাজেই সবকিছু ভেবেচিন্তে এ ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করাই শ্রেয় বলে মনে করলাম । কিন্তু প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তেই স্থির রইলাম। এমতাবস্থায় বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর ‘জমঈয়তে আহলে হাদীস হিন্দ-এর মুখপাত্র ‘পাক্ষিক তারজুমানে’ রাবেতার এ বিজ্ঞাপনটি উর্দুতে প্রচারিত হয়। উর্দু ভাষায় এ বিজ্ঞপ্তির বিষয়বস্তু অবগত হয়ে, আমার মনে এক ভাবানুভূতির সৃষ্টি হয় এবং এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের এক দুর্বার বাসনা যেন ধীরে ধীরে মনের কোণে দানা বেঁধে উঠতে থাকে। ‘জামি’আহ সালাফিয়্যাহ’র শিক্ষার্থীগণের নিরন্তর পরামর্শ এবং প্রেরণাও এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। পথে, প্রান্তরে, প্রতিষ্ঠানে যখনই যেখানে তাদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে তখনই তারা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমাকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আমার মনে এমন এক ধারণার সৃষ্টি হয়ে যায় যে, বন্ধু-বান্ধব, ভক্ত-অনুরক্ত এবং সদিচ্ছাপরায়ণ ব্যক্তিগণের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত উপর্যুপরি পরামর্শ এবং প্রেরণাই যেন মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বিজয় সংকেত। সুতরাং সকলের দু’আ এবং আল্লাহ তা’আলার ইপ্সিত অনুগ্রহের প্রতি অবিচল আস্থা নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে কাজ আরম্ভ করে দিলাম। কিন্তু কাজের গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর এবং প্রকৃতি ছিল সময় ও সুযোগের প্রেক্ষাপটে মাঝে-মধ্যে এবং কখনো-কখনো । তখনো ছিলাম এন্থ এারনের প্রাথমিক পর্যায়ে এমতাবস্থায় রামাযানের দীর্ঘ অবকাশ যাপনের সময় এসে গেল প্রায় দোর গোড়ায়। এদিকে রাবেতা আবার ঘোষণা দিল যে, সীরাত প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণেচ্ছু ব্যক্তিদের নিজ নিজ পাণ্ডুলিপি দেয়ার সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত তারিখ হল মুহাররামের প্রথম দিন। সুতরাং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমার নির্ধারিত সময়ের মধ্য থেকে সাড়ে পাঁচ মাস এভাবেই অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। হাতে ছিল তখন মাত্র সাড়ে তিন মাস সময়। এ স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রয়োজন পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন কাজ সম্পন্ন করে ডাকযোগে তা প্রেরণ করা। এদিকে সমস্ত কাজ কর্মই ছিল অসমাপ্ত, অসম্পূর্ণ। সত্যি কথা বলতে কি, আমি তখন ভেবেই পাচ্ছিলাম না যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন কাজ সম্পন্ন করে দ্বিতীয়বার পঠন-পাঠন এবং সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ কিভাবে সম্পন্ন করা যায়। এ রকম এক অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে আমি যখন সংশয় দোলায় দোল খাচ্ছিলাম তখন ছাত্র, সহকর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিগণের পক্ষ থেকে এমন প্রচণ্ড এক চাপ সৃষ্টি হতে থাকল যে, এ ব্যাপারে সংশয় কিংবা আলস্যের কোন অবকাশই রইল না । উঠতে- বসতে, চলতে-ফিরতে সর্বক্ষণ ও সর্বাবস্থায়ই তাঁরা আমাকে উৎসাহিত এবং উদ্বুদ্ধ করতে থাকলেন এ উদ্দেশ্যে যে, বিমূঢ়তা কিংবা বিহ্বলতার কোন লেশ যেন আমার মনের মধ্যে ঠাঁই না পায় দেখতে দেখতেই মাহে রামাযানুল মুবারক এসে উপস্থিত হল দ্বারপ্রান্তে। সদ্য সমাপিত এ রমাযানুল মুবারাককে আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে আগত খাস রহমত ও নি’আমত মনে করে অথৈ সাগরে ঝাঁপ দেয়ার মতোই কাগজ-কলম হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম আমি মহানন্দিত, বিশ্ববরেণ্য মহামানবের মহা জীবন চরিত রচনারূপী মহাসাগরে। সুখ-স্বপ্নের আবেশ মধুর মুহূর্তগুলোর মতোই রমাযানুল মুবারকের দীর্ঘ ছুটি কখন যে কিভাবে শেষ হয়ে এল তা যেন আমি ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারলাম না । ছুটি শেষে যখন কর্মস্থলে প্রত্যাবর্তন করলাম তখন পাণ্ডুলিপি সংকলনের মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সময়ের স্বল্পতার কারণে সংকলিত বিষয়াদির পুনঃপঠন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি দেয়া আমার পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না। কাজেই উপায়ান্তর না দেখে প্রতিযোগিতার উপযোগী সুদর্শন, পরিপাটি ও পরিচ্ছন্নভাবে তাঁরা যাতে পাণ্ডুলিপিটি তৈরি করে দেন সে ব্যাপারে আমার সহকর্মী ও ছাত্রদের নিকটে অনুরোধ পেশ করলাম। বলাই বাহুল্য যে, এ ব্যাপারে সাগ্রহ ও সানন্দে তাঁরা আমাকে সর্বপ্রকার সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদান করেন।
অবশিষ্টাংশ প্রস্তুতির ব্যাপারেও অনুরূপভাবে তাঁদের সাহায্য-সহযোগিতা আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছিল। বিশেষ করে রমাযানুল মুবারাকের ছুটির পর প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম পুরোপুরি শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে হাতে ততটা সময় ছিল না যতটা প্রয়োজন ছিল। সময়ের অপ্রতুলতার কারণেই শেষের দিকে রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে আমাকে একটানা কঠোর পরিশ্রমের শিকার হতে হয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে আমার গভীর পরিতৃপ্তি ও আনন্দের ব্যাপার হল, আল্লাহ তা’আলার অপরিসীম অনুগ্রহ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উৎসাহ অনুপ্রেরণা এবং সাহায্য-সহযোগিতার ফলে মুহাররম মাস আরম্ভ হওয়ার বার-তের দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি ডাকযোগে প্রেরণ করতে আমি সক্ষম হলাম। এ প্রাথমিক সাফল্য আমার সংশয়গ্রস্ত ও চিন্তাযুক্ত প্রাণে এনে দিল অব্যক্ত এক আনন্দের দোলা। মাস কয়েক পর রাবেতার পক্ষ থেকে দু’টি রেজিষ্ট্রী চিঠি আমার নামে আসে। চিঠির মূল বক্তব্য ছিল রাবেতা নির্দেশিত শর্তাবলীর আলোকে আমার গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি প্রণীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য আমার নামটি প্রতিযোগীদের তালিকাভুক্ত হয়েছে। বহু প্রতীক্ষিত এ সংবাদটি আমার মনে এক অকৃত্রিম আনন্দানুভূতির সৃষ্টি করে। আমার জীবনে এটা নিশ্চিতরূপে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা হিসেবে প্রতিভাত হয়ে থাকবে। কালচক্রের আবর্তনে অব্যাহত থাকে সময়ের অগ্রযাত্রা এবং এভাবে অতিবাহিত হয়ে যায় প্রায় দেড়টি বছর। রাবেতা ছিল সম্পূর্ণ নিশ্চুপ, নীরব। চিঠিপত্রের মাধ্যমে এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেও তেমন কিছুই অবহিত হওয়া সম্ভব হয় নি আমার পক্ষে। তারপর ঘটনা পরম্পরায় বিভিন্নমুখী তৎপরতা ও কাজকর্মের মধ্যে এমনভাবে জড়িয়ে পড়তে হল যে, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের কথাটি আমি সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম ।
১৯৭৮ সালের ৬-৮ই জুলাই করাচীতে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম এশীয় ইসলামী সম্মেলন সম্পর্কিত সংবাদ অবগত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই আমার মনে অদম্য আগ্রহ ও কৌতুহলের উদ্রেক হতে থাকে। তাই এ সম্মেলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি অবগত হওয়ার উদ্দেশ্যে আমি গভীর মনোনিবেশ সহকারে পত্র-পত্রিকার পৃষ্ঠায় দৃষ্টি রেখে যেতে থাকি। এমন এক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ট্রেনের বিলম্বের কারণে এক দিন আমি ‘ভাদুমি’ রেলওয়ে ষ্টেশনে অপেক্ষমান ছিলাম অস্থিরচিত্তে। কিছুতেই যেন সময় কাটছিল না। তাই একটু সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে একটি পত্রিকার পাতায় দৃষ্টি বুলিয়ে যাচ্ছিলাম অতি সন্তর্পণে অথচ কিছুটা সতর্কতার সঙ্গে। হঠাৎ ছোট্ট একটি খবরের প্রতি আকৃষ্ট হল আমার দৃষ্টি। খবরটি ছিল করাচীতে অনুষ্ঠিত এশীয় ইসলামী সম্মেলনের কোন এক বৈঠকের একটি বিশেষ ঘোষণা সংক্রান্ত। এ বৈঠকে রাবেতা আলমে ইসলামী রাসূলুল্লাহ (স)-এর জীবন চরিত রচনা বিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী পাঁচজন পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন। ঐ পাঁচজনের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিকও নাকি রয়েছেন। খবরটি পাঠ করার সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেল আমার চিত্তচাঞ্চল্য, পড়ে গেল খোঁজাখুঁজির এক অন্তহীন হিড়িক, সৃষ্টি হয়ে গেল কোলাহলময় এক অস্থিরতার। বানারাসে প্রত্যাবর্তনের পর প্রয়োজনীয় তথ্যাদি অবগত হবার জন্য বহু চেষ্টা করেও ফললাভ সম্ভব হল না ।
তারিখটা ছিল ১৯৭৮ সালের ১০ই জুলাইয়ের সকাল বেলা। সারা রাত্রি বজরডিহা (বানারস শহরের একটি মহল্লা) মুনাযারার (বিতর্ক সভার) শর্তাবলী স্থির করার পর নিশ্চিন্তে শুয়েছিলাম। হঠাৎ আমার ঘর সংলগ্ন সিঁড়ির ওপর ছাত্রদের কণ্ঠ নিঃসৃত শোরগোল কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হতেই জেগে উঠলাম। ইতোমধ্যেই আমার ঘরে ছাত্রদের রীতিমত ভিড় জমে উঠেছে। তাদের মুখমণ্ডলীতে আনন্দ ও উল্লাসের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে ও উষ্ণ কণ্ঠে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ উচ্চারিত হচ্ছে। তাদের এ আকস্মিক আগমনে ও অভিনন্দন জ্ঞাপনে কিছুটা বিস্ময় বিমূঢ় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম। “কি হয়েছে বল তো তোমাদের? মুনাযারার (বিতর্কসভার) প্রতিদ্বন্দীগণ মুনাযারা করতে অস্বীকার করেছে কি?” আমি শায়িত অবস্থাতেই জিজ্ঞাসা করলাম। আনন্দ আবেগে উচ্ছসিত কণ্ঠে তারা বলল, ‘জী না! তা নয়, বরং এটা হচ্ছে সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ (স)-এর জীবন চরিত রচনা প্রতিযোগিতায় আপনি প্রথম স্থান অধিকার করেছেন, এ প্রেক্ষিতেই আমাদের এ আনন্দ উল্লাস এবং শোরগোল। এ আনন্দ সংবাদটি জানানোর উদ্দেশ্যেই আমরা ছুটে এলাম আপনার নিকট।’ এ শুভ সংবাদ শোনা মাত্রই আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্দেশ্যে বললাম, ‘আলহামদুল্লিাহ’। তারপর তাদের জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোথা থেকে কিভাবে তোমরা এ সংবাদ অবগত হলে?”
তারা বলল, ‘মাওলানা ওযায়ের শামস এ খোশ খবর এনেছেন।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘মওলানা ওযায়ের শামস কি এখানে এসেছেন?’
তারা উত্তরে বলল, ‘জী হ্যাঁ’।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখমণ্ডলে হাসি-খুশির সুস্পষ্ট অভিব্যক্তিসহ কক্ষে প্রবেশ করলেন মাওলানা সাহেব। বিষয়টি বিস্তারিত অবগত হলাম তাঁর মুখ থেকে ।
২২শে শাবান, ১৩৯৮ হিজরী সন মোতাবেক ১৯৭৮ ইং সনের ২৯ জুলাই তারিখে রাবেতার পক্ষ থেকে রেজিষ্ট্রীকৃত একট পত্রও পেলাম আমি। প্রতিযোগিতায় সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে প্রথম স্থান অধিকার করায় এ পত্র মারফত আমাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। একই সাথে এ আনন্দ সংবাদও দেয়া হয়েছে যে, ১৩৯৯ হিজরী সনের মুহাররম মাসে পুরস্কার বিতরণের জন্যে মক্কা মুকাররমার রাবেতা কার্যালয়ে এক জাঁকালো অনুষ্ঠানের এ শুভ সংবাদ শোনা মাত্রই আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্দেশ্যে বললাম, ‘আলহামদুল্লিাহ’। তারপর তাদের জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোথা থেকে কিভাবে তোমরা এ সংবাদ অবগত হলে?”
তারা বলল, ‘মাওলানা ওযায়ের শামস এ খোশ খবর এনেছেন।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘মওলানা ওযায়ের শামস কি এখানে এসেছেন?’
তারা উত্তরে বলল, ‘জী হ্যাঁ’।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখমণ্ডলে হাসি-খুশির সুস্পষ্ট অভিব্যক্তিসহ কক্ষে প্রবেশ করলেন মাওলানা সাহেব। বিষয়টি বিস্তারিত অবগত হলাম তাঁর মুখ থেকে ।
২২শে শাবান, ১৩৯৮ হিজরী সন মোতাবেক ১৯৭৮ ইং সনের ২৯ জুলাই তারিখে রাবেতার পক্ষ থেকে রেজিষ্ট্রীকৃত একট পত্রও পেলাম আমি। প্রতিযোগিতায় সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে প্রথম স্থান অধিকার করায় এ পত্র মারফত আমাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। একই সাথে এ আনন্দ সংবাদও দেয়া হয়েছে যে, ১৩৯৯ হিজরী সনের মুহাররম মাসে পুরস্কার বিতরণের জন্যে মক্কা মুকাররমার রাবেতা কার্যালয়ে এক জাঁকালো অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরস্কার গ্রহণের জন্য এ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অবশ্য, এ অনুষ্ঠানটি মুহাররম মাসের পরিবর্তে ১২ই রবিউল আখের, ১৩৯৯ হিজরীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে যোগদান উপলক্ষে হারামাইন শারীফাইনে ‘উমরাহ এবং যিয়ারাতের সৌভাগ্যও আমার হয়ে গেল । ১০ই রবিউল আখের বৃহস্পতিবার মক্কা মুকাররামার সেই নয়নাভিরাম রাবেতা কার্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম । এখানে প্রাথমিক প্রয়োজনীয় কাজকর্ম শেষে আনুমানিক ১০ ঘটিকায় কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি আরম্ভ হল। সভাপতির আসন অলংকৃত করেন সৌদী বিচার বিভাগের প্রধান শাইখ আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদ। পুরস্কার প্রদানের জন্য উপস্থিত ছিলেন মক্কার গভর্নরের প্রতিনিধি আমীর সাউদ বিন আব্দুল মুহসিন। তিনি হচ্ছেন মালিক আব্দুল আযীযের পুত্র। কুরআন তিলাওয়াতের পর মক্কার গভর্নর সংক্ষিপ্ত ভাষণ প্রদান করেন। তারপর রাবেতার যুগ্ম সম্পাদক শাইখ ‘আলী আল-মুখতার অত্যন্ত মনোজ্ঞ এবং মর্মস্পর্শী এক ভাষণ দিলেন। তিনি কিছুটা বিস্তারিত আকারে অত্র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও পটভূমি সম্পর্কে মূল্যবান বক্তব্য ও পূর্বাভাস পেশ করেন। অধিকন্তু, অত্যন্ত সূক্ষ্ণ মান-নিরূপণী কলা-নির্বাচনের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল সে সব বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন।
প্রসঙ্গত তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, ‘রাবেতা কর্তৃক প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গ ঘোষিত হওয়ার পর প্রতিযোগীগণের নিকট থেকে রাবেতা মোট ১১৮২ টি পাণ্ডুলিপি প্রাপ্ত হন। এ সব পাণ্ডুলিপির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সমীক্ষকগণ প্রাথমিক বিচারে ১৮৩টি পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত করেন। তারপর চূড়ান্ত পরীক্ষা, নির্বাচন ও ফলাফলের জন্য সৌদী শিক্ষামন্ত্রী শাইখ হাসান বিন আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে আট সদস্যবিশিষ্ট এক লক্ষ সমীক্ষাদল গঠিত হয়। এ আটজন সদস্যই ছিলেন মক্কা মুকাররমা মালিক আবদুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ের শরী’আ অনুষদের (বর্তমানে জামেয়া উম্মুল কুরা) অধ্যাপক। তাঁরা সকলেই মহানাবীর (স) সীরাত শাস্ত্র ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। যথাক্রমে তাঁদের নাম হল :
১. ড. ইবরাহিম আলী-শউত
২. ড. মুহাম্মদ সাঈদ সিদ্দিকী
- ৩. ড. রহমান ফাহমী মুহাম্মদ
- ৪. ড. ফকরী আহমদ উকায়
- ৫. ড. আহমাদ সাইয়েদ দারাজ
- ৬. ড. ফায়েক বাক্ সওয়াফ
- ৭. ড. শাকের মাহমুদ আব্দুল মুনায়িম
- ৮. ড. আবুল ফাত্তাহ মানসুর
এ পরীক্ষক দলের সদস্যগণ নির্বাচিত পাণ্ডলিপিসমূহের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ণ বিচার বিশ্লেষণের পর যে পাঁচজন প্রতিযোগীর জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন তাঁরা হলেন :
প্রথম: ‘আর রাহীকুল মাখতূম (আরবী), রচনায় সফিউর রহমান মোবারকপুরী, শিক্ষক, জামেয়া সালাফিয়া, বেনারস, হিন্দ।
দ্বিতীয়: খাতিমুন নাবিয়্যীন ( ) (ইংরেজী), রচনায় ড. মাজেদ ‘আলী খান ।
তৃতীয়: ‘পয়গাম্বরে আযম ওয়া আখের’ (উর্দু), রচনায় ড. নাসীর আহমাদ নাসের, ভাইস চ্যান্সেলর, জামেয়া ইসলামিয়া ভাওয়াল পুর, পাকিস্তান।
চতুর্থ: ‘মুনতাকান নকুল ফী সীরাতে আ’যামীর রাসূল (স) (আরবী), রচনায় শাইখ হামেদ মাহমুদ বিন মুহাম্মাদ মানসুর লিমূদ- জিজাহ, মিশর।
পঞ্চম: ‘সীরাতে নাবিয়্যীল হুদা ওয়ার রাহমাহ’ (আরবী), রচনায় অধ্যাপক আব্দুস সালাম হাফেজ, মদীনা মুনাওয়ারা, মামলাকাতে সউদিয়া আরাবিয়া ।

আর রাহীকুল মাখতূম
Md Mahbubur Rahman –
আর-রাহীকুল মাখতূম বা মোহরাঙ্কিত জান্নাতী সুধা”
ফিরোজ আহমেদ –
আমার ১ টা বই প্রয়োজন
তাবিবুর রহমান –
আজ “আর-রাহীকুল মাখতূম বা মোহরাঙ্কিত জান্নাতী সুধা” বইটি আমার কাছে পৌছেছে । ধন্যবাদ
s80alam –
চমৎকার এই বইটিকে কেন ১-২ স্টার রিভিউ দিল জানিনা। আল্লাহ ক্ষমা করুন।