শরীয়াতের পরিভাষায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) যে সকল কাজ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং সে সকল কাজের জন্য শাস্তির বিধান অথবা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা ঘোষণা রয়েছে, তাকে কবীরা গুনাহ বলা হয়।
গুনাহ দু’ভাগে বিভক্ত- প্রথমত কবীরা; দ্বিতীয়ত সাগীরা। কেউ কেউ বলেছেন, মূলত সব গুনাহই- গুনাহ, এর কোনো বিভাগ নেই। তবে ওলামায়ে কেরামের মতে, গুনাহ দু’প্রকারঃ সাগীরা গুনাহ ও কবীরা গুনাহ।
পবিত্র কোরআন ও হাদীসে কাবীরা গুনাহের পূর্ণ সংখ্যার বর্ণনা এক সঙ্গে উল্লেখ নেই। তবে কোরআন ও হাদীসে যে সকল গুনাহকে কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, উলামায়ি কিরাম এর সংখ্যা ৭০টি বলে বর্ণনা করেছেন। আবার তাদের কেউ কেউ তার সংখ্যা এর চেয়ে অধিক বলেও উল্লেখ করেছেন। নিচে কবীরা গুনাহসমূহ উল্লেখ করা হলো-
(১)আল্লাহ্র সঙ্গে কাউকে শরীক করা।
(২)মানুষ হত্যা করা।
(৩) জাদু করা।
(৪) সালাত ত্যাগ করা।
(৫) জাকাত আদায় না করা।
(৬) সংগত কারণ ছাড়া রমজানের সওম ভঙ্গ করা বা না রাখা।
(৭) সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা।
(৮) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।
(৯) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং নিকট আত্মীয়দের পরিত্যাগ করা।
(১০) ব্যভিচার করা।
(১১) পুং মৈথুন এবং স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করা।
(১২) সুদ খাওয়া।
(১৩) এতিমের সম্পদ ভক্ষন করা।
(১৪) আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যা আরোপ করা।
(১৫) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা।
(১৬) শাসক ব্যক্তি কর্তৃক প্রজাদের ধোঁকা দেয়া এবং তাদের ওপর অত্যাচার করা।
(১৭) গর্ব, অহংকার, আত্মম্ভরিতা, হট- ধর্মিতা।
(১৮) মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
(১৯) মাদকদ্রব্য সেবন।
(২০) জুয়া খেলা।
(২১) সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।
(২২) গনিমতের মালে খেয়ানত করা।
(২৩) চুরি করা।
(২৪) ডাকাতি করা।
(২৫) মিথ্যা শপথ করা।
(২৬) জুলুম-অত্যাচার করা।
(২৭) চাঁদাবাজি ও অন্যায়ভাবে টোল আদায় করা।
(২৮) হারাম খাওয়া, তা যেকোনো উপায়ে হোক না কেন।
(২৯) আত্মহত্যা করা।
(৩০) অধিকাংশ সময় মিথ্যা বলা।
(৩১) মানব রচিত বিধানে দেশ পরিচালনা ও বিচার ফয়সালা করা।
(৩২) মহিলা পুরুষের বেশ ধারণ করা এবং পুরুষ মহিলার বেশ ধারণ করা।
(৩৩) আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারে সুযোগ দেয়া এবং দুই ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি করতে প্রচেষ্টা চালানো।
(৩৪) বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে ঘুস গ্রহণ করা।
(৩৫) হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ে গুনাগার।
(৩৬) পেসাব থেকে বেঁচে না থাকা।
(৩৭) চতুষ্পদ জন্তুর চেহারা বিকৃতি করা।
(৩৮) দুনিয়াবি স্বার্থ অর্জনের লক্ষ্যে দ্বীন শিক্ষা করা এবং সত্যকে গোপন করা।
(৩৯) খিয়ানত করা।
(৪০) খোঁটা দেয়া।
(৪১) তাকদিরকে অস্বীকার করা।
(৪২) মানুষের নিকট অন্যের গোপন তথ্য ফাঁস করা।
(৪৩) পরনিন্দা করা।
(৪৪) অভিশাপ করা।
(৪৫) গাদ্দারি করা, ওয়াদা পালন না করা।
(৪৬) গণক ও জ্যোতির্বিদদের বিশ্বাস করা।
(৪৭) স্বামীর অবাধ্য হওয়া।
(৪৮) কাপড়, দেয়াল ও পাথর ইত্যাদিতে প্রাণীর ছবি আঁকা।
(৪৯) শোক প্রকাশার্থে চেহারার ওপর আঘাত করা, মাতম করা, কাপড় ছেঁড়া, মাথা মুণ্ডানো বা চুল উঠানো, বিপদের সময় ধবংসের জন্য দু’আ করা।
(৫০) অন্যায় ভাবে বিদ্রোহ করা।
(৫১) দুর্বল, চাকর- চাকরানী, স্ত্রী ও চতুস্পদ জন্তুর ওপর অত্যাচার করা।
(৫২) প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়া।
(৫৩) মুসলমানদের কষ্ট দেয়া ও গালি দেয়া।
(৫৪) অহংকার করে লুঙ্গি কাপড় ইত্যাদি ঝুলিয়ে পরিধান করা।
(৫৫) স্বর্ণ রোপ্যের পাত্রে পানাহার করা।
(৫৬) গোলামের পলায়ন করা।
(৫৭) পুরুষের স্বর্ণ ও রেশমি কাপড় পরিধান করা।
(৫৮) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা।
(৫৯) জেনেশুনে অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেয়া।
(৬০) অহেতুক তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া এবং শত্রুতা পোষণ করা।
(৬১) প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি দান করতে অস্বীকার করা।
(৬২) ওজনে ও মাপে কম দেয়া।
(৬৩) আল্লাহর পাকড়াও হতে নিশ্চিন্ত হওয়া।
(৬৪) মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোশত খাওয়া।
(৬৫) জুমার সালাত ও জামাত ছেড়ে দিয়ে বিনা কারণে একা একা সালাত আদায় করা।
(৬৬) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া।
(৬৭) মুসলমানকে কাফের বলে আখ্যায়িত করা।
(৬৮) ষড়যন্ত্র করা এবং ধোঁকা দেয়া।
(৬৯) সাহাবীকে গালি দেয়া।
(৭০) অন্যায় বিচার।
(৭১) ঝগড়া করার সময় অতিরিক্ত গালি দেয়া।
(৭২) মুসলমানদের ত্রুটি বিচ্যুতি তালাশ করা এবং তাদের গোপন তথ্য প্রকাশ করা।
(৭৩) কোনো বংশ বা তার লোকদের খারাপ গুনে অভিহিত করা।
(৭৪) মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক ও উচ্চ শব্দে কান্নাকাটি করা।
(৭৫) জমিনের সীমানা উঠিয়ে ফেলা বা পরিবর্তন করা।
(৭৬) অপসংস্কৃতি ও কু-প্রথার প্রচলন করা অথবা ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করা।
(৭৭) নারী বা অন্যের চুল ব্যবহার করা, শরীরে উল্কি আঁকা, ভ্রু উপড়ানো, দাঁত ফাঁক করা।
(৭৮) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা।
(৭৯) হারাম শরীফে ধর্মদ্রোহী কাজ করা।
কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদাঃ
(১) মহান আল্লাহ বলেন,
إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًا كَرِيمًا
‘যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের (ছাট) গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।’ (সূরা নিসা: ৩১)
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
الصلوات الخمس . والجمعة إلى الجمعة . ورمضان إلى رمضان . مكفرات ما بينهن إذا اجتنب الكبائر
‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান এতদ্বয়ের মাঝে সংঘটিত সমস্ত পাপরাশির জন্য কাফফারা স্বরূপ হয়ে যায়, যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।” (মুসলিম)
তওবা করার গুরুত্ব ও কবুল হওয়ার শর্তাবলীঃ
পূর্বের করনীয় কাজের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। এমন কাজ দ্বিতীয়বার না করার ওপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন করা।
কবীরা গুনাহের কারণে আপনার ওপর যে কর্তব্য বা ঋণের দায়িত্ত বর্তায় তা পরিশোধ করা, যেমন আপনি কাউকে গালি দিয়েছেন অথবা কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন তাহলে আপনার কর্তব্য হলো, অধিকার সেই পাওনাদারকে ফেরত দেয়া এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যদি এমন কোন অন্যায় করেন যার মধ্যে অন্যের অধিকারের সম্পর্ক নেই তাহলে পূর্বের তিনটি পূর্ণ হলেই তাওবা হয়ে যাবে।
Reviews
There are no reviews yet.