Uncategorized

ইসলামের আজানের গুরুত্ব

159316827 1175602232859320 5951940811311744700 n

প্রশ্ন: ইসলামের আজানের গুরুত্ব কতটুকু? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো আজান দিয়েছিলেন কি? এ বিষয়ে প্রমাণ সহকারে জানতে চাই।
উত্তর:
নি:সন্দেহে আজান ইসলামের এক বিরাট নিদর্শন। কোনও এলাকা থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে এলে প্রমাণিত হয়, সেখানে মুমিন-মুসলিমদের বসবাস রয়েছে। সেখানে ঈমানের চাষাবাদ এবং দীনের পরিচর্যা হয়। পক্ষান্তরে কোথাও আজানের ধ্বনি শোনা না গেলে প্রমাণিত হয়, তা হল ঈমান হীন, নির্জীব পরিত্যক্ত বিরানভূমি। আর যেখানে দীন ও ঈমানের চর্চা নেই তা হল শয়তানের রাজ্য।
প্রকৃতপক্ষে আজানের আওয়াজের সাথে মিশে আছে মুক্তি ও সাফল্যের জয়গান। আছে কল্যাণের হাতছানি। এই ধ্বনি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ থেকে ধ্বনিত হলেও তা মূলত: আসমান থেকে ভেসে আসা মুক্তির অবিনাশী পয়গাম এবং জান্নাতের পথে উন্মুক্ত আহ্বান।
তাই তো ইসলামে তাওহিদ তথা একত্ববাদের ঘোষণার পরে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাতের জন্য আজান দেয়াকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ আমল হিসেবে বিবেচিত। এ ব্যাপারে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
◈ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّاأَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا
“মানুষ যদি জানত আযান দেয়া ও সালাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সাওয়াব রয়েছে এবং লটারি করা ছাড়া এ সুযোগ না পেত, তাহলে লটারি করতো।” [সহিহ বুখারি ৬১৫, মুসলিম ৪৩৭-আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত]
◈ তিনি আরও বলেছেন,
مَنْ أَذَّنَ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِينِهِ فِي كُلِّ يَوْمٍ سِتُّونَ حَسَنَةً وَلِكُلِّ إِقَامَةٍ ثَلاَثُونَ حَسَنَةً ‏
“যে ব্যক্তি বারো বছর আজান দেয় তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর প্রতি দিনের আযানের বিনিময়ে তার জন্য ষাট নেকী এবং প্রতি ইকামতের জন্য তিরিশ নেকি লেখা হয়।” [সুনানে ইবনে মাজাহ ৩/ আযান ও তার সুন্নত, পরিচ্ছেদ: ৩/৫. আযানের ফযিলত ও মুয়াজ্জিনদের সাওয়াব। সহিহ-সমীহ তারগীব ২৪২-শাইখ আলবানি-ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত]
◈ তিনি আরও বলেন,
الْمُؤَذِّنُونَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনদের গর্দান সবচেয়ে বেশি উঁচু হবে।” [সহিহ মুসলিম, আযানের ফযিলত এবং আযান শুনে শয়তানের পলায়ন-মুয়াবিয়া রা. হতে বর্ণিত]
◉◉ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খলিফাগণ কি কখনো আজান দিয়েছিলেন?
আজান এত মর্যাদাপূর্ণ আমল হওয়ার পরও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তারপরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদিন কখনও আজান দেন নি। ইমাম শাওকানি বলেন,
الإمامة أفضل: إن النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ والخلفاء الراشدين بعده أَمُّوا ولم يُؤذنوا، كذا كبار العلماء بعدهم
“(আজান এবং ইমামতির মধ্যে) ইমামতি অধিক উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এবং তাঁর পরবর্তী খলিফাগণ ইমামতি করেছেন; আজান দেন নি। অনুরূপভাবে তাদের পরবর্তী বড় আলেমগণও।” [নাইলুল আওতার, ২/৩৬]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ কোনও কারণে আজান দেন নি। আলেমগণ এর নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তন্মধ্যে একটি ব্যাখ্যা হল, শাইখুল ইসলাম ইয ইবনে আব্দুস সালাম রহ. [জন্ম: ১১৮১, মৃত্যু: ১২৬২ খৃষ্টাব্দ] বলেন,
إنما لم يُؤَذِّنْ لأنه كان إذا عمل عملاً أثبته، أي جعله دائمًا، وكان لا يَتَفَرَّغُ لذلك، لاشتغاله بتبليغ الرسالة، وهذا كما قال عمر: لولا الخلافةُ َلأذَّنْتُ.
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আজান দেন নি। এর কারণ হল, তিনি যখন কোন আমল করতেন তখন তা অব্যাহত রাখতেন অর্থাৎ সর্বদাই পালন করতেন। অথচ তিনি রিসালাতের দায়িত্ব পালনের কারণে আজান দেওয়ার জন্য অবসর পেতেন না। বিষয়টি ঠিক উমর রা. এর এই কথাটার মত: তিনি বলছেন, “খেলাফতের দায়িত্ব না থাকলে আজান দিতাম।”
মোটকথা, আজান দেয়া অনেক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত হলেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার পরবর্তী খলিফাগণ আজান দেন নি বা আজান দেয়ার জন্য অবসর পান নি। কারণ তাঁদেরকে এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Leave a Reply